ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় জরুরি অবস্থা অথবা মার্শাল ল জারির গুঞ্জন অস্বীকার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের দ্বিতীয় সপ্তাহে শনিবার তিনি বলেছেন, দেশে মার্শাল ল জারির কোনো ইচ্ছা তার নেই।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর নারী সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে পুতিন বলেন, বহিশত্রুর আক্রমণ ঘটছে কেবলমাত্র এমন ক্ষেত্রেই দেশে মার্শাল ল জারি করা হয়। এ ধরনের কোনো ঘটনা আমাদের দেশে ঘটেনি। এই মুহূর্তে আমি আশা করছি, আমরা মার্শাল ল ঘোষণা করবো না।
তিনি বলেন, রাশিয়ার আইনে গুরুতর অভ্যন্তরীণ হুমকি অথবা বিপর্যয়ের কারণে দেশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ পরিস্থিতি অথবা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার অনুমতি রয়েছে। সেই পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। পুতিন বলেন, ‘আমরা রুশ ফেডারেশনের ভূখণ্ডে কোনো বিশেষ পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি না। আজ পর্যন্ত এটির কোনো প্রয়োজন নেই।’
প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসাবে প্রেসিডেন্ট পুতিন শুক্রবার রাশিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন বলে গত সপ্তাহে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের বরাত দিয়ে দাবি করেন ইউক্রেনের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা। এর আগে, রাশিয়া সব ধরনের প্রতিবাদ নিষিদ্ধ, অন্যদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং অন্যান্য কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে বলে দাবি করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শীর্ষ সহযোগী মিখাইল পোডোলিয়াক।
প্রেসিডেন্ট পুতিন এসব দাবির ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ না করে বলেছেন, রাশিয়ার যুদ্ধের পথে যাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী ছিল এর বিরুদ্ধে চালানো প্রচারণার অংশ।
তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানে ‘কেবলমাত্র পেশাদার সামরিক কর্মীরা অংশগ্রহণ করছেন। সেখানে একজন সৈন্যকেও জোরপ্রয়োগ করে পাঠানো হয়নি। আর আমরা সেটা পরিবর্তনের পরিকল্পনাও করছি না। ইউক্রেনে প্রত্যেক সৈন্য এবং কর্মকর্তা তাদের পছন্দে গেছেন। তারা সেখানে সম্মানের সাথে নিজ দায়িত্ব পালন করছেন।’
বিদেশি সামরিক হুমকির ব্যাপারে পুতিন বলেন, বিদেশি শক্তিদের ইউক্রেনে নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠা এবং কার্যকরের যেকোনো প্রচেষ্টাকে রাশিয়ার সাথে সামরিক সংঘাতে যোগদান হিসাবে বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, কোন দেশ কোন সংস্থার সদস্য আমরা সেটির কোনো পরোয়া করবো না। তবে এ ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়া হবে না বলে প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
পশ্চিমারা ডাকাতি করছে: মস্কো
এদিকে, ইউক্রেন সংঘাতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার মাধ্যমে পশ্চিমারা দস্যুদের মতো আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ। তবে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের চেয়েও বিশ্ব অনেক বড় এবং রাশিয়া এত বড় দেশ যে তাকে কখনই বিচ্ছিন্ন করে রাখা যাবে না। শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ক্রেমলিনের মুখপাত্র এসব মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক দস্যুতায়’ লিপ্ত হয়েছে এবং মস্কো এর জবাব দেবে। তবে কী ধরনের জবাব দেওয়া হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। তবে রাশিয়ার স্বার্থ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পেশকভ বলেছেন, এর মানে এই নয় যে রাশিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশ্ব অনেক বড়, একটি দেশকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইউরোপ এবং আমেরিকার চেয়েও বড়। এমনকি রাশিয়াও একটি বড় দেশ। বিশ্বে আরো অনেক দেশ আছে।
প্রতিবেশী ইউক্রেনকে অসামরিকায়ন ও নাৎসিমুক্ত করার লক্ষ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ সৈন্যরা। এই অভিযানের জেরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঢেউ শুরু হয়। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতোমধ্যে বিশ্বের বড় বড় বিভিন্ন কোম্পানি রাশিয়ার বাজার ছাড়তে শুরু করেছে।
সূত্র: আরটি, রয়টার্স।

