ডায়ালসিলেট ডেস্ক::অনেক বাবা-মা এখন হয়তো ভাবছেন শিশুদের জন্য কোভিড ভ্যাকসিন কি আদৌ নিরাপদ? যদি এরকম কোনো প্রশ্ন মাথায় এসে থাকে তাহলে আজই সাবধান হয়ে যান। নিচের প্রতিবেদনটি পড়লে জানতে পারবেন শিশুদের জন্য ভ্যাকসিন কেন এতটা প্রয়োজনীয়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার পর অ্যাঞ্জেল বেকারের বছর ১৪’র মেয়ে ম্যারিওনাকে টানা ৫ দিন বেঁচে থাকতে হয়েছে অক্সিজেনের সহায়তা নিয়ে। বেকার সিএনএন-কে সাক্ষাৎকার দেবার সময়ে বলেন ম্যারিওনার দেহে কোভিড-১৯ এর লক্ষণগুলি ২৬ জুলাই থেকে সামনে আসতে শুরু করে। তার মাথাব্যথার সঙ্গে শরীরও বেশ ক্লান্ত ছিল। হঠাৎ করে ২ অগাস্ট ম্যারিওনা জানায় তার শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। জরুরি পরিচর্যা এবং নির্ধারিত ওষুধ দেবার পরও সমস্যার সমাধান হয়নি। তার মেয়ে ২ অগাস্ট-এর পর দিন থেকে একদমই শ্বাস নিতে পারছিলো না বলে জানান অ্যাঞ্জেল বেকার। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে, ম্যারিওনাকে মিসৌরির সেন্ট লুইসের কার্ডিনাল গ্লেনন শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তার চিকিৎসক। বেকার এবং তার মেয়ে দক্ষিণ মিসৌরিতে যেখানে বাস করেন সেখান থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টা টানা ড্রাইভ করে পৌঁছান হাসপাতালে। কোভিড প্রোটোকলের কারণে মেয়ের অ্যাম্বুলেন্সে চড়তে দেয়া হয়নি বেকারকে। পেছনের গাড়িতে বসে শুধু মেয়ের সুস্থ জীবনের জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছিলেন বলে সিএনএন-কে জানান বেকার। নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বেকার বলছেন, সঠিক সময়ে নিজের মেয়েকে যদি ভ্যাকসিনটা দিয়ে দিতেন তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না, অন্যান্য বাবা-মা দেরও নিজের সন্তানকে দ্রুত ভ্যাকসিন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বেকার। শ্বাস কষ্টের প্রবল সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ম্যারিওনা কান্নায় ভেঙে পড়ে সিএনএনকে জানান, ‘যদি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কষ্ট পেতে না চান তাহলে আপনারা সময়মতো ভ্যাকসিন নিয়ে নিন’। সিডিসি ওয়েবসাইট অনুসারে, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য আমেরিকা ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের শিশুদের টিকা দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে ।তা সত্ত্বেও, কার্ডিনাল গ্লেনন চিলড্রেনস হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সরা সিএনএনকে বলেছেন যে তারা শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর গুরুতর সংক্রমণের ঘটনা দেখতে পাচ্ছেন এবং আশঙ্কা করছেন স্কুল শুরু হওয়ার সাথে সাথে শীতের দিনগুলিতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। সিএনএন-এর কোভিড ট্র্যাকারের মতে, মিসৌরি তে বর্তমানে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লক্ষ ১৬ হাজার এবং ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এখানে। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, ৩ হাজারেরও বেশি শিশু যাদের বয়স বর্তমানে ৯ বছরের মধ্যে এবং ১৩ হাজারেরও বেশি শিশু যাদের বয়স ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে তারা এই মারণ ভাইরাসের কবলে। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়েল হায়াজনেহ বলছেন, ডাক্তাররা প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ টি শিশু দেখেছেন যাদের কাউকেই কোভিড টিকা দেয়া হয়নি। যাদের এই টিকা দেয়া হয়নি সেই সমস্ত শিশুরা কোভিডে আক্রান্ত হলে এটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরী করছে শিশুদের শরীরে। হার্ট, ফুসফুস, কিডনি এবং মস্তিষ্ককেও প্রভাব বিস্তার করছে করোনা ভাইরাস। হায়াজনেহ বলেন, মহামারী শুরুর পর থেকে হাসপাতালে শিশুদের এই ধরণের শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার ২২ টি ঘটনা দেখা গেছে। এসব দেখে ডাক্তার ওয়েল হায়াজনেহ-এর পরামর্শ শিশুদের দেহে সংক্রামক রোগের মোকাবিলা করার মূল হাতিয়ারই হল একে প্রতিরোধ করা। আমেরিকার মতো দেশে সেই বিষয়টি আমাদের হাতে থাকলেও অনেক সময়েই আমরা প্রতিরোধের দিকটা উপেক্ষা করে যাই। হাসপাতালের সার্জিকাল ইউনিটের মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. অ্যালাইন তানিওস জানান, গত বছরের তুলনায় এই সময়টা বেশ খারাপ যাচ্ছে, কারণ গত বছর কোভিড-১৯ এর এতো কেস দেখা যায় নি। এখন হাসপাতালে অনেক শিশু শ্বাসকষ্ট এবং রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের নার্স ক্লারিসা ক্যাপ জানাচ্ছেন, শিশুদের জন্য এই সময়টা বেশ কঠিন। কারণ জীবনের একটা বেশিরভাগ সময় তাদের কাটছে মাস্ক পরে, শিখতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। ১৪ বছরের ম্যারিওনা এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে, আগামী ৯০ দিনের জন্য সে ভ্যাকসিন নিতে পারবে না। ম্যারিওনার মা অ্যাঞ্জেল বেকারের একটাই আক্ষেপ সময়মতো মেয়েকে যদি ভ্যাকসিন নিতে জোর করতেন তাহলে আজ তার জীবনটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে কাটতো না।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ডায়ালসিলেট এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *