ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, চির তারুণ্যের প্রতীক হয়ে শেখ কামাল প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেঁচে থাকবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উদীয়মান বহুমাত্রিক প্রতিভা ও মেধার অধিকারী শেখ কামাল ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও নাট্যঙ্গনে ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকর্মী, খেলোয়াড় ও সংগঠক। সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন, নিষ্ঠা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার নজির স্থাপন করে গেছেন আবাহনীর মতো আধুনিক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে। তিনিই প্রথম বিদেশি কোচ আনার ব্যবস্থা করে দেশীয় ক্রীড়াকে বিশ্বের আঙিনায় উপস্থাপনের প্রচেষ্টা চালান।
স্পিকার শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনস্থ মিলার রোড, ইম্প্রেসান ইভেন্টস ভেন্যুতে বাংলাদেশ হাই কমিশন আয়োজিত “রিমেম্বারিং শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল: রোল অফ ইউথ এন্ড স্পোর্টস ইন প্রোমোটিং পিস, টলারেন্স এন্ড নেশন বিল্ডিং” শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এসময় তিনি ক্যাপ্টেন শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের উপর আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন করেন।
স্পিকার বলেন, আগস্ট মাস বাঙালি জাতির জন্য বিয়োগান্তক শোকের মাস। এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের উদীয়মান বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শেখ কামালকেও সেই কালো রাতে হত্যা করা হয়। মাত্র ২৬ বছর বয়সে শেখ কামাল নাটক, থিয়েটার, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি ছিলেন তরুণ প্রজন্মের অহংকার। তাঁর কাছে তরুণ প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। শেখ কামালের কীর্তি-কর্ম অনুসরণ করে তরুণ সমাজকে ক্রীড়া-সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে শান্তি ও সহণশীলতার শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান স্পিকার।
স্পিকার বলেন, শেখ কামাল ছিলেন নিরহংকারী। রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও তিনি অতি সাদাসিদা জীবন যাপন করেছেন। তরুণদের সাথে অকপটে মিশেছেন। বাবাকে কাছ থেকে দেখেছেন, কিন্তু কাছে পেয়েছেন খুবই কম। কারণ বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান আমলে দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে। বায়ান্ন সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে ছাড়া পান, তখন শেখ কামাল সবেমাত্র কথা বলতে শিখেছেন। তিনি তার বাবাকে সেভাবে দেখেনই নি। সে সময় হঠাৎ তিনি তার বড় বোন শেখ হাসিনাকে বলে ফেলেন, হাসু আপা, তোমার বাবাকে আমিও কি বাবা বলে ডাকতে পারি? তার এই কথা কত মর্মান্তিকভাবে আমাদের স্পর্শ করে!
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ২৫ মার্চ রাতেই শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন এবং মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি জেনারেল ওসমানীর এইড-ডি-ক্যাম্প (এডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনায় ফিরে আসেন। তরুণদের নিয়ে নানান সৃষ্টিশীল কাজে সম্পৃক্ত হন।
তিনি বলেন, শেখ কামাল ছিলেন একজন আধুনিক পূর্ণাঙ্গ মানুষ। একাধারে তিনি ছিলেন খেলোয়াড়, নাট্যকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী। তিনি স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো মিউজিক্যাল ব্যান্ড। থিয়েটার আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তিনি তার পরিবারের কাছ থেকেই এসব অনুপ্রেরণা লাভ করেন। শহীদ শেখ কামালের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আজকের প্রজন্মকে জাতিগঠনে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান স্পিকার।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মোনা তাসনিমের সঞ্চালনায় উক্ত প্যানেল ডিসকাশনে তরুণ ব্রিটিশ বাংলাদেশী ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অনুরাগী মিরাজ সাদাত, তরুণ ব্রিটিশ ইউক্রেনিয়ান ক্রীড়া অনুরাগী আলবার্ট এডওয়ার্ড সালিমোভ, ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি মেম্বার সৈয়দ সাজিদুর রাহমান ফারুক এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল এম্বাস্যাডর সৈয়দ শাহেদ রেজা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিশিষ্ট ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি মেম্বার সুলতান মাহমুদ শরীফ, স্টুডেন্ট একশমন কমিটি অফ দি ওভারসিস ফ্রিডম মুভমেন্ট অফ বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন ইন দি ইউকে এবং ওভারসিস ফ্রিডম ফাইটার এর সদস্যবৃন্দ এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি মেম্বার ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হাসান এমবিই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *