পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছে দেশটি। রোববার সংসদের অধিবেশনের শুরুতে ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব খারিজ করে দেন। কিন্তু বিরোধীরা স্পিকারের এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। তারা সংসদে পাকিস্তানের তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শেহবাজ শরিফকে নতুন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

শুধু তাই নয়, শেহবাজ শরিফও নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংসদে ভাষণ দিয়েছেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা শেরি রেহমান টুইটারে এক ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, সংসদের ১৯৭ জন সদস্য পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) আয়াজ সাদিককে নতুন স্পিকার হিসাবে নির্বাচিত করেছেন।
দেশটির ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন জোটের সদস্যরা সংসদ কক্ষ ছেড়ে চলে যাওয়ায় স্পিকারের চেয়ারে বসেন সাদিক। তিনি ইমরান খান সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির আয়োজন করেন। পরে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন বিরোধী সংসদ সদস্যরা।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংসদ ভেঙে দিয়ে এবং নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক গুগলি ছুড়েছেন বলে মনে করলেও দেশটির পিএমএল-এনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এটাই চেয়েছিলেন। আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন মুলতবি হওয়ার পর প্রতিবাদী পদক্ষেপ হিসাবে বিরোধী আইনপ্রণেতারা তা চালু করেন।
কারণ দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, মুলতবি হয়ে যাওয়া সংসদ অধিবেশন কেবলমাত্র প্রেসিডেন্ট এবং স্পিকারই আহ্বান করতে পারেন।
এর আগে, রোববার সকালের দিকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেন দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। পরে খানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
রোববার পার্লামেন্টে অধিবেশন শুরুর পর পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশটির সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যহীনতার অভিযোগ তোলেন।
তার বক্তৃতার পরপর পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি অধিবেশন মূলতবি ঘোষণা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় এখন আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশটির সংবিধানের ২২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে দেওয়ায় এখন প্রেসিডেন্ট একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন।
পাক সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ কী বলছে?

দেশটির সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র, সংবিধান এবং আইনের প্রতি প্রত্যেক নাগরিকের আনুগত্য স্বীকারের কথা বলা হয়েছে।

১. রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য।

২. যেখানেই থাকুক না কেন সংবিধান ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন প্রত্যেক নাগরিকের অলঙ্ঘনীয় কর্তব্য। এছাড়া পাকিস্তানে যারা বসবাস করেন তাদের প্রত্যেকেরও দায়িত্ব।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া, অনুচ্ছেদ ৫ কার্যকর করা কি আইনসম্মত?

পাকিস্তানের আইন বিশেষজ্ঞ সারুপ ইজাজ বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এই পদক্ষেপ সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতিরও লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, ‘যখন অনাস্থা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেছেন যে ভোট হবে, তখন এই পদক্ষেপ সাংবিধানিক বিধি-বিধানের প্রতি অবজ্ঞা বলে মনে হয়।’
এই মুহূর্তে সংকটের একমাত্র সমাধান সুপ্রিম কোর্ট দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। পাক এই আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি পার্লামেন্টে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে এবং এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। আদালত যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, এতে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে তাহলে সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ বাতিল এবং অকার্যকর ঘোষণা করা হবে।
এই আইনজীবী বলেন, আদালত যদি স্পিকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে অনাস্থা প্রস্তাব আবারও ভোটের জন্য তোলা হবে।

সারুপ ইজাজ বলেন, আমার মতে— আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং একাধিকবার সেটি করেছেনও। যদিও আদালত পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে নারাজ, তারপরও স্পিকার যদি সংবিধান উপেক্ষা করে থাকেন, তাহলে তিনিও দায়মুক্তি পেতে পারেন না।

কিছুই করার নেই, বলছে পাক সেনাবাহিনী

এদিকে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পট আমূল পাল্টে যাওয়ার পর দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, আজ যা ঘটেছে তা নিয়ে সেনাবাহিনীর কিছুই করার নেই। রোববার পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার এই মন্তব্য করেছেন বলে জিও নিউজ জানিয়েছে।

রোববার পাকিস্তানে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেনারেল বাবর ইফতিখার তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন এবং বলেন, একেবারে না।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *