আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: লন্ডন থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ছাত্রী শামীমা বেগম একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে তিনি লন্ডন ছাড়েন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।
কীভাবে ২০১৫ সালে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন তার বিস্তারিত বর্ণনা বুধবার প্রথমবারের মতো বিবিসির কাছে দিয়েছেন শামীমা বেগম। তিনি বলেছেন, আইএস সদস্যরা তাকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছিল। তবে এর পরিকল্পনা তিনি নিজেও করেছিলেন।
শামীমা বেগম তুরস্ক হয়ে সিরিয়ার রাক্কায় পৌঁছানোর পর একজন ডাচ বংশোদ্ভূত আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেছিলেন। সেখানে তার তিন সন্তানের জন্ম হয়। পরবর্তীতে তার সন্তানরা মারা গেছে।
আইএসে যোগ দেওয়ার অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে। ‘জিহাদি বধূ’ হিসেবে সংবাদমাধ্যমে পরিচিত শামীমা বেগম ২০১৯ সালে ইসলামিক স্টেটের স্বঘোষিত ‘খেলাফতের’ পতন হওয়ার পর থেকেই সিরিয়ার একটি বন্দীশিবিরে বাস করছেন।
বর্তমানে তার বয়স ২৩ বছর এবং তিনি নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়া ও লন্ডনে প্রত্যাবর্তনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের সাথে আইনী লড়াই চালাচ্ছেন।
শামীমা বেগম বলেন, তিনি যুক্তরাজ্য থেকে বেরোতে পেরে স্বস্তি বোধ করেছিলেন। যাওয়ার সময় তিনি আর কখনও ব্রিটেনে ফিরে আসবেন এমন আশা করেননি। তিনি বলেন, তার প্রতি ব্রিটিশ জনগণের ক্রোধের কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন। ব্রিটিশরা তাকে ‘তাদের নিরাপত্তা ও জীবনধারার জন্য বিপদ ও ঝুঁকির’ কারণে হিসেবে দেখেন বলে জানান শামীমা।
তবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণী বলেন, তারা যা মনে করে আমি আর সেই মানুষ নেই। তিনি বলেন, তিনি খারাপ মানুষ নন এবং গণমাধ্যমে তাকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে সেকারণেই লোকজন তাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখেন।
শামীমা বলেন, আমার মনে হয় আমার প্রতি তাদের রাগ যতটা তার চেয়েও বেশি আইএসের প্রতি। যখনই তারা আইএসের কথা ভাবে তখনই আমার কথা মনে হয়। কারণ আমাকে মিডিয়ায় খুব বেশি তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি যে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন এটা তিনি মানেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে শামীমা বেগম বলেন, ‘হ্যাঁ, যোগ দিয়েছিলাম।’
আদালতে তার মামলার শুনানির মূল বিষয় ছিল, শামীমা বেগম কি মানবপাচার ও যৌন নিপীড়নের শিকার, নাকি তিনি একজন অঙ্গীকারবদ্ধ আইএস স্বেচ্ছাসেবী ও যুক্তরাজ্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ।
যুক্তরাজ্যের সাবেক শিশুবিষয়ক জুনিয়র মন্ত্রী টিম লাটন বলেন, শামীমা বেগম কেন আইএসে যোগ দিয়েছিলেন, কোন শক্তি তার ‘মগজ ধোলাই’ করেছিল এটা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি আরও বলেন, অনেক লোকই এখন সন্দেহ করে যে শামীমা বেগম যেভাবে ‘হিজাব-পরা মুসলিম তরুণী থেকে পশ্চিমা পোশাক-পরা নারীতে’ পরিণত হয়েছেন। এটা তার অভিনয়।
বিবিসির জশ বেকার ও জোসেফ লীকে দেওয়া সবশেষ ওই সাক্ষাৎকারে শামীমা বেগম বলেন, পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন থেকে সিরিয়ায় আইএসের ‘রাজধানী’ রাক্কায় যাওয়ার প্রস্তুতি তিনি ও তার সঙ্গী দুই তরুণী মিলেই করেছিলেন। এ ছাড়াও তার পরিকল্পনার খুঁটিনাটি নির্দেশনা, কি করতে হবে না হবে তার লম্বা তালিকা এসেছিল অনলাইনে আইএসের সদস্যদের কাছ থেকে। কোথাও ধরা পড়লে কি বলতে হবে সেটাও তারা বলে দিয়েছিল।
তার সঙ্গী দুই তরুণী পরে সিরিয়াতেই মারা গেছে বলে মনে করা হয়। শামীমা বেগম বলেন তারা ভ্রমণের খরচ, সামান্য তুর্কি ভাষা শেখা ইত্যাদি প্রস্তুতি ইন্টারনেটে খোঁজ করেই নিয়েছিলেন।
শামীমা বেগম ও অন্য দুই তরুণীর পরিবারের আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি বলেন, তারা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি লন্ডনে তাদের ঘরে তল্লাশি করেছিলেন, কিন্তু তেমন কোন তথ্যপ্রমাণ পাননি। তারা এত ভালোভাবে সবরকম আলামত সরিয়ে ফেলেছিল যা তিনি কখনো দেখেননি। তিনি বলেন, শুধু একটি কাগজ পাওয়া গিয়েছিল যাতে কিছু জিনিসপত্রের তালিকা ও দাম লেখা ছিল। একটি ফোন ৭৫ পাউণ্ড, মোজা ৪ পাউন্ড, ট্যাক্সি ১০০ পাউণ্ড ইত্যাদি। শামীমা বেগম বলেন, ওই তালিকাটি তার করা নয়। বরং অন্য একটি মেয়ে ‘বোকার মত’ কাগজটা ফেলে গিয়েছিল।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *