ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট আয়োজিত একুশের চেতনায় নাট্যপ্রদর্শনীর চতুর্থ দিন রোববারের নাটক ছিলো ‘নাট্যমঞ্চ সিলেট’ এর প্রযোজনায় ‘বধ্যভূমিতে শেষ দৃশ্য’। কাজী মাহমুদুর রহমানের রচনা ও রজত কান্তি গুপ্ত এর নির্দেশনায় নাটকটি বিপুল সংখ্যক দর্শকদের উপস্থিতিতে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে মঞ্চস্থ হয়।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নাটকটিতে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের শত শহরে ছড়িয়ে থাকা বধ্যভূমির কথাই বলা হয়েছে।

 

এ নাটকে মূলত গল্লামারী বধ্যভূমির নৃশংসতার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যা নিরস্ত্র মুক্তিকামী বাঙালির উপর পাকিস্তানীদের বর্বরতার একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।

 

কাহিনীর চরিত্র কিংবা পাত্রপাত্রী শুধুমাত্র কল্পনা বিলাসের জন্যে নয়, ওরা ছিলো একাত্তরের যুদ্ধ সময়ের ঘটনার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। নাটকে বর্বর পাকসেনারা কিভাবে নির্যাতন চালিয়ে কয়েকজন মানুষের স্বপ্ন ও মুক্তি চিন্তাকে হত্যা করে তাই ফুটে উঠেছে। নাটকে নিঃসঙ্গতায় থাকা, অন্ধ বন্দি সুজা অন্য বন্দিদের মাঝে হঠাৎ করেই খুঁজে পায় তাঁর স্বপ্নের মেয়েটিকে; যাকে সে বিদেশে থাকাকালীন মায়ের পাঠানো ছবিতে দেখেছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিণতি গল্লামারী বধ্যভূমিতে তার স্বপ্নের সেই মেয়েটি তাঁর কাছে অন্যদের মতোই আজ বন্দি। বন্দি মেয়েটিকে তাঁর স্বপ্ন আর মেয়েটিকে নিয়ে মায়ের পাঠানো ছবির কল্পনার কথা বলতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে জানতে পারে তাঁর সমস্থ ভালোবাসা মুলতঃ এই বন্দি মেয়েটিকেই নিয়ে।

 

নাটকের একটি বিশেষ সময়ে পাকিস্তানী সুবেদারের কূটকৌশলে একপর্যায়ে প্রস্তাব দেয়া হয়, গল্লামারী সীমান্তের সকল বন্দিদের ছেড়ে দেয়া হবে যদি বন্দি অন্ধ সুজা তার স্বপ্নের মেয়েটিকে হত্যা করতে পারে। এমন ভয়ংকর প্রস্তাবে সুজা রাজী না হলেও সেই মেয়েটি রাজি হয়ে যায়। কারণ মেয়েটি চিন্তা করে এমন বর্বর পিশাচ নরলোলুপ মাংসাশী মানুষদের হাতে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে সুজা’র হাতে মৃত্যুবরণ করা অনেক গৌরবের। মেয়েটি এভাবেই তার মুক্তি চায়।

 

এমন নাটকীয়তায় সুজা একটি পর্যায়ে পাকিস্তানী সুবেদারের উপর প্রতিশোধ নেয় ঠিকই। কিন্তু অন্য সব পাক হায়েনারা সুজাসহ সকল বন্দীদের গল্লামারী সীমান্তেই হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন এরকম বহু ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতিকতা এবং বাস্তব কাহিনী ‘বধ্যভূমির শেষ দৃশ্য’ নাটকের মধ্যে দিয়েই উঠে এসেছে।

 

নাটকে সুজা’র চরিত্রে অভিনয় করেন- রজত কান্তি গুপ্ত, তাছাড়া সুত্রধর- বর্ণা ব্যানার্জি, বন্দিনী মেয়ে- মনিষা রায় অমি, বৃদ্ধ বন্দি- মিহরাব আহমেদ চৌধুরী, ১ম বন্দি- রিজান আহমেদ রুমেল, ২য় বন্দি- চয়ন পাল শান্ত, ৩য় বন্দি-রুকন উদ্দীন, সুবেদার-বাপ্পী মজুমদার, পাক সৈনিক- আবু জাহিদ ভুঁইয়া, আমিনুর রহমান রুমিত মুক্তিযুদ্ধা চরিত্রে রামানুজ গুপ্ত, রক্তিম গুপ্ত।

 

নেপথ্যে ছিলে- আলোক নির্দেশনা ও পরিকল্পনা- খোয়াজ রহিম সবুজ। শব্দ পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণ- নীলাঞ্জন দাশ টুকু ও বন্যা ব্যানার্জী, রূপসজ্জা- সুমন রায়, প্রযোজনা অধিকর্তা- বাপ্পী মজুমদার, জান্নাতুল নাজনিন আশা।

 

নাটক শেষে, নাট্যদলকে সম্মিলিত নাট্য পরিষদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন স্বনামধন্য সংস্কৃতিজন, লন্ডন প্রবাসী হিমাংশু গোস্বামী এবং অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিক।

 

আজ সোমবার পঞ্চম দিন মঞ্চস্থ হবে রীমা দাসের রচনায়, মোস্তাক আহমদের পরিচালনায় নাটক অগ্নিস্নান। পরিবেশন করবে থিয়েটার বাংলা।

 

একুশের আলোকে নাট্য প্রদর্শনী শেষ হবে ৫ মার্চ। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় কবি নজরুল অডিটোরিয়াম মঞ্চে নাটক মঞ্চায়িত হবে।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *