জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি কোম্পানি লিমিটেড (আইএসসিএল) এর সিলেট অফিসের ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক নারীর শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকৃত ১ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আইএসসিএল এর সিলেট অফিসের (মানরু শপিং সিটি) ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান রুম্মান প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওই নারীর বিনিয়োগকৃত বিপুল পরিমাণ টাকা না দিয়ে হয়রানি করছেন।

শনিবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন শাহজালাল উপশহরের স্প্রিং গার্ডেন-২ এর বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফেরদৌসী রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে ফেরদৌসী রহমান জানান, তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের একজন দ্বৈত নাগরিক এবং বিনিয়োগকারী। তাঁর স্বামী আজিজুর রহমান নিজের জীবদ্দশায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর ফেরদৌসী রহমান ব্যবসার হাল ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করা অব্যাহত রাখেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়ার কারণেই তিনি বিনিয়োগে আকৃষ্ট হন। কিন্তু বিনিয়োগ করে তিনি মহাপ্রতারক ও জালিয়াতদের খপ্পরে পড়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি কোম্পানি লিমিটেড (আইএসসিএল) এর সিলেট অফিসের (মানরু শপিং সিটি) ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান রুম্মানের মাধ্যমে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা ১ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা তিনি ১০ বছরেও উদ্ধার করতে পারেননি। রুম্মানের কারণে তিনি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে প্রতারণা ও হয়রানির শিকার। সেই রুম্মান তাকে না বলে তার শেয়ার বিক্রি, ক্রয়কৃত শেয়ারের টাকা গ্রহণ ও আত্মসাৎ করে নানা টালবাহানা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফেরদৌসী বলেন, তার শেয়ার ও বিও একাউন্টে জমাকৃত শেয়ারের লভ্যাংশ, বোনাস শেয়ার ও রাইট শেয়ার দেওয়া তো দূরের কথা, তার বিনিয়োগ করা টাকা উদ্ধার করতে পারছেন না দীর্ঘ সময়ে। স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশ ছাড়াও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেও সুরাহা পাননি। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন শুধু আইএসসিএল এবং এর শাখা ইনচার্জ কামরুজ্জামানকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। কিন্তু তাঁর বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধার বা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধারে আদালতের আশ্রয় নেবেন জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, কামরুজ্জামান তার মামা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী ফখরুদ্দিন আলী আহমদসহ কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মদদে পার পেয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ২০০৬ সালের পর সিলেটে অবস্থানকালে আইএসসিএল এর সিলেট ইনচার্জ, জকিগঞ্জের এম এ সালাম চৌধুরীর ছেলে ও নগরীর তোপখানা ১৫৯ সুরমা ভ্যালির বাসিন্দা কামরুজ্জামান রুম্মানের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। তখন জানতে পারেন রুম্মান তাঁর আত্মীয়। ২০১০ সালের দিকে পরিচয় ও আত্মীয়তার সূত্র ধরে রুম্মান তাকে আইএসসিএলে বিনিয়োগে অনুরোধ করেন। রুম্মান জানান, আইএসসিএল কর্তৃপক্ষ তার আত্মীয় এবং মামা ফখরুদ্দিন আলী আহমদ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট। প্রতিষ্ঠান ও এর সাথে জড়িতরা বিশ্বস্ত মনে হওয়ায় প্রবাসী এই নারী ২০১০ সালে বিনিয়োগ শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, নিজে ও ছেলে-মেয়ের নামে ৬টি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে এসব অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে নগদে ও চেকের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ১ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা জমা করেন। দীর্ঘদিন লেনদেনের পর ২০১৭ সালে তার টাকার প্রয়োজন পড়লে তিনি রুম্মানকে শেয়ার বিক্রির কথা বলেন। তখন রুম্মান নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করে করেন। এরপর ফেরদৌসী তার অ্যাকাউন্টের হিসাব ও লেজার সামারির তথ্য সংগ্রহ করেন। কিন্তু দুটি হিসাবে গড়মিল দেখতে পান। অভিযোগ ওঠার পর ফখরুদ্দিন আলী আহমদের প্রস্তাবে ২০১৮ সালের ৯ মে একটি বৈঠক করেন। এতে তার মামা ফয়সল ও খাদিমপাড়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম ডালিম উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। পরবর্তীতে রুম্মান তার কাছে ভুল স্বীকার করেন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান ডালিমের মধ্যস্থতায় তার চাচাতো ভাই সাবেক সাংসদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, ফখরুদ্দিন আলী আহমদ ও রুম্মানসহ হোটেল স্টার প্যাসিফিকে একই মাসের ২৬ তারিখ ও ২৪ জুন আরেকটি বৈঠক হয়। এতে বিভিন্ন স্টেটমেন্ট ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে কোম্পানির হিসাবে জমা করা তার ৭৪ লাখ টাকা কোম্পানি ও বাকি টাকা রুম্মান ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফখরুদ্দিন আলী আহমদ উল্টো তার ভাগ্নে রুম্মানকে রক্ষা করতে উঠেপড়ে লাগেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফেরদৌসী রহমান তার টাকা উদ্ধারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *