ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকালে সিলেটের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ। স্বাধীনতার উষালগ্নে জাতির সূর্যসন্তানদের হারানোর বিষাদময় দিনটি স্মরণ করছে বাংলাদেশ।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে সিলেটের চৌহাট্টাস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সিলেটে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও রাজনৈতক ও সামাজিক সংগঠন।
বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠন সমূহ। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলাপ্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি শ্রদ্ধা জানান বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা। স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখানে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় হত্যা করেছিল শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ জাতির হাজারো মেধাবী সন্তানকে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সকল শহীদদের স্মৃতি যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও তাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে সবাইকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তারা। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন : যথাযথ মর্যাদায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন পালন করেছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দিবস উপলক্ষে নগরের চৌহাট্টাস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানা সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বুধবার সকাল দশটায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে নিয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর কাউন্সিলর মো. আজম খান, সংরক্ষিত কাউন্সিলর নাজনীন আক্তার কণা, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল হক পাটোয়ারী, শিক্ষা, সংস্কৃতি, পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা নেহার রঞ্জন পুরকায়স্থ, লাইসেন্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : যথাযথ মর্যাদায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন -২ এর সামনে কালো ব্যাজ ধারণ ও জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
পরবর্তী প্রশাসনিক ভবন-২ থেকে একটি শোকর‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক পদক্ষিণ করে শহীদ মিনার ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে ১৪ ডিসেম্বরসহ অন্যান্য দিবসে দেশের সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে নিরবতা পালন করা হয়।
উপাচার্যের পুস্পস্তবক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, শিক্ষক সমিতি, হল প্রশাসন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন, শাবি ছাত্রলীগ, শাবি প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এতে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি ও শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
এসময় আরো বক্তব্য দেন, ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমেনা পারভীন, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল গণি, প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল, কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান (পারভেজ), সহায়ক কর্মচারী সমিতির সমাজসেবা সম্পাদক ফয়সাল খান, কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান, সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. সজিবুর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক সহ-সভাপতি মো. মামুন শাহ, ছাত্রলীগ নেতা সুমন মিয়া। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাহ পরান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান খান।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বছরব্যাপী পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা করে। এই দিনে চুড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে (১৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর তাদেরকে হত্যা করে। তাই এই দিনটিতে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ঘোষণা করেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে : বিনম্র শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। বুধবার সূর্যোদয়ের পর পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হয়।
সকাল ১০টায় কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শোক র‍্যালি বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে শেষ হয় র‍্যালিটি।
এরপর একাত্তরে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানিরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল কারণ তাঁরা মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনষ্ক, অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলাদেশ চিন্তা করতেন। তখন বুদ্ধিজীবীরা যেমন মুক্তমনা চিন্তা করতেন, আমরা এখন পর্যন্ত তাঁদের মতো বুদ্ধিজীবী তৈরি করতে পারিনি। শিক্ষায়ও আমরা বিজ্ঞানমনষ্ক হতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এমন হওয়া উচিত যাতে একজন স্নাতক বাঙালিত্ব অর্জন করতে পারে ও সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারে।
উপাচার্যের পর পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানান জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর, প্রক্টরিয়াল বডি, শিক্ষক সমিতি, ডিন কাউন্সিল, প্রভোস্ট কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ, সাদা দল, লেকচারার’স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর’স সোসাইটি (ল্যাপস), অফিসার পরিষদ, গণতান্ত্রিক অফিসার পরিষদ, সাংবাদিক সমিতি, কর্মচারী পরিষদ, আবাসিক হলসমূহ, কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, লুব্ধক থিয়েটার, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ ও কর্মচারীবৃন্দ। পরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শহিদদের স্মরণ করে আলোক প্রজ্জ্বলন করা হয়।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!


সিলেট জেলা প্রেসক্লাব : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টায় নগরের চৌহাট্টাস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন ক্লাব নেতৃবৃন্দ।
এসময় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয় সম্পাদক শংকর দাস, কার্যনিবাহী সদস্য ইউসুফ আলী, ভারপ্রাপ্ত প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিঠু দাস জয়, ক্লাব সদস্য মোহাম্মদ মহসিন, মামুন হাসান, হাসিনা বেগম চৌধুরী, মো. শাহীন আহমদ, দিব্য জ্যোতি সী, মৃণাল কান্তি দাস, মো. শাহিন, জয়ন্ত কুমার দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *