এখন থেকে সিলেট কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে কোন অনুষ্ঠান আয়োজনে সিলেট সিটি করপোরেশনকে ফি দিতে এমন খবর দুদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে সিলেটে। সিটি করপোরেশন ফি বাবদ করসহ ১১৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে বলেও প্রচার করা হচ্ছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

যদিও সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পক্ষ থেকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি। তবে ফি নির্ধারণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রয়া দেখা দিয়েছে।

সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে সিটি করপোরেশন। প্রায় প্রতিদিনই এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃিতক, রাজৈনিতক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বিশষত প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য শহীদ মিনার চত্বর ব্যবহার করে থাকে। শহীদ মিনার ব্যবহারের জন্য সিসিক থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হলেও এর জন্য কোন ফি দিতে হয় না। বিনামূল্যেই এই চত্বর ব্যবহার করা যায়।

মার্চ থেকে শহীদ মিনার চত্বর ব্যবহারে ফি নির্ধারণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন, গত তিনদিন এমন খবর নগরে চাউর হয়ে পড়ে। এনিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়।

জাসদ, বাসদ, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার পর বিনামূল্যে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র কর্তৃক সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দের দেওয়ার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে শহীদ মিনার বরাদ্দের দেওয়ার চিন্তা উদ্ভট, রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত করার স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচায়ক ও শহীদ মিনারের চেতনা পরিপন্থী।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সিসিক মেয়র কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দের দেওয়ার চক্রান্ত প্রতিহতের জন্য সিলেটের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।

এছাড়া ফেসবুকে সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ এমন খবর প্রচার করে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজেদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের জন্য শহীদ মিনার বরাদ্দ নিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশনে লিখিত আবেদন নিয়ে যান কমিউনিস্ট পার্টির সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান। তার কাছেই সিসিক কর্মকর্তারা ১ মার্চ থেকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি প্রদান করতে হবে বলে জানান।

বৃহস্পতিবার খায়রুল হাছান  বলেন, বরাদ্দের জন্য আবেদন জমা দিলে আমাকে জানানো হয় ১ মার্চ থেকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ১ হাজার টাকা ফি ও ১৫০ টাকা কর দিতে হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা জমা দিতে হবে। সিসিক মেয়র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমাকে জানানো হয়।

তিনি বলেন, দেশের কোন শহীদ মিনার ব্যবহারে টাকা লাগে না। এটি উন্মুক্ত স্থান। আমাদের এখানে ফি নির্ধারণ করা হবে কেন?

খায়রুলের মাধ্যমেই শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের তথ্য ছড়িয়ে পড়ে ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, আমি ফেসবুকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা দেখেছি। কিন্তু সিসিকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

তবে শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত সিসিক নিয়েছিলো বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত। সিলেট শহীদ মিনারে বিভিন্ন জাতীয় দিবসের আয়াজনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ।

রজতকান্তি গুপ্ত বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, আজকে মেয়র সাহেব ফোন দিয়ে আমাকে বলেছেন, শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের চিন্তাভাবনা করছেন তারা। এ ব্যাপারে আমাদের সাথে বসতে চান। তবে আমি এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। এমনটি হলে আমরা আন্দোলনে নামার কথাও জানিয়েছি। পরে মেয়র আমাকে বলেছেন, তারা কোন ফি নির্ধারণ করবেন না।

একই তথ্য জানিয়ে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আল আজাদ বলেন, শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণ করতে চেয়েছিলো সিটি করেপারেশন। আমি এর প্রতিবাদ করেছি।

শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণ করা হলে মানুষজনকে শহীদ মিনারবিমুখ করা হবে জানিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য এনামুল কবির বলেন, আমি বিভিন্নজনের মুখে ও ফেসবুকে এমন কথা শুনেছি। তবে সিটি করপোরেশন আমাদের সাথে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি। তবে শহীদ মিনার ব্যবহারের জন্য ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটা খুবই খারাপ হবে। অবশ্যই আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো।

এদিকে সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১১ মার্চ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিচালনা বিষয়ক সভা ডেকেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সাথে ওইদিন সকাল ১১ টায় নগর ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *