সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের জগন্নাথপুর উপজেলার কাটাগাঙ্গের ওপরের বেইলি সেতু ট্রাকসহ ভেঙে পড়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জগন্নাথপুর থানায় মামলাটি করে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। মামলায় গাড়ির মালিক ও চালককে আসামি করা হয়েছে। সেতু ভেঙে পড়ায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অভিযোগে মামলাটি করেন সুনামগঞ্জ সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা থেকে জগন্নাথপুর বাজারে আসার পথে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকটি সেতুতে উঠলে সেটি ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাকের চালক ও তার সহকারী নিহত হন।

সেতু ভেঙে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ আছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, সেতুর ওপর দিয়ে পাঁচ টনের বেশি মাল বহন না করতে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছিল তারা। সেখানে ২৫ টন মাল নিয়ে পার হওয়ার পথে মঙ্গলবার বিকেলে সেতু ভেঙে ট্রাকের চালক ও সহকারী নিহত হন।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও সওজ সূত্র জানায়, জগন্নাথপুর বাজারের মেসার্স ফাতেমা ট্রের্ডাসের মালিক শাকিল চিশতির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৫০০ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা থেকে জগন্নাথপুরে আসছিল ট্রাকটি। কাটাগাঙ্গে বেইলি সেতুতে উঠতেই সেতু ভেঙে ট্রাকটি নদীর পানিতে পড়ে যায়। এ ঘটনায় মারা যান চালক ভোলাগঞ্জের ফারুক মিয়া (৫০) ও চালকের সহকারী সিলেটের ধোপাতল এলাকার বাসিন্দা জাকির মিয়া (৩৫)।

সুনামগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে ট্রাকটি বেইলি সেতুতে ওঠার সময় সেটি ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। সেতুর দুই পাশে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ও অতিরিক্ত মাল পরিবহনের নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড লাগানো আছে। নিয়ম অনুযায়ী জগন্নাথপুর থানায় মামলা করা হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান, পরিবহন আইনে জগন্নাথপুর থানায় সওজের কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। দুর্ঘটনায় নিহত দুজনের মরদেহ তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এলাকাবাসী ও সুনামগঞ্জ সওজ সূত্র জানায়, ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব কমাতে ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে সড়কের রানীগঞ্জ এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ওপর দেড় শ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম বক্সগার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। একই সময়ে সড়কের আরও ঝুঁকিপূর্ণ সাতটি সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ শুরু করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে এই আট সেতু উদ্বোধন করা হয়। এর পর থেকে আঞ্চলিক এই মহাসড়ক দিয়ে বড় বড় গাড়ি চলাচল ব্যাপকভাবে শুরু হয়। সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব কমে ৫৫ কিলোমিটার।

সওজ সূত্র জানায়, ২০১২ সালে নলজুর নদের কাটাগাঙ্গের ওপর বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই সেতুর দক্ষিণ পাড়ের অ্যাপ্রোচের মাটি ধসে বড় গর্তের সৃষ্টি হলে অ্যাপ্রোচে অতিরিক্ত স্টিল দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ১৫ জুলাই সেতুর উত্তর অংশের অ্যাপ্রোচের মাটি ধসে গর্তের সৃষ্টি হলে অ্যাপ্রোচের ওই অংশে অতিরিক্ত স্টিল দিয়ে জোড়া দেওয়া হয়। এর পর থেকে জোড়াতালি দিয়েই সেতুটি চালু রাখা হচ্ছিল। ১১ মার্চ রাতে সেতুটির পাটাতন খুলে নদীতে পড়ে গেলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন নদী থেকে পাটাতন তুলে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। গত ১৬ জুলাই আবারও পাটাতন খুলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা থেকে ৫০০ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে জগন্নাথপুর বাজারে আসার পথে সেতু ভেঙে ট্রাক নদীতে পড়ে চালক ও তাঁর সহকারীর মৃত্যু হয়।

জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক নুরুল হকের অভিযোগ, শুরুতেই অপরিকল্পিতভাবে কাটাগাঙ্গের ওপর বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। বারবার জোড়াতালি না দিয়ে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যাগ নিলে এই প্রাণহানি হতো না। এর দায়ভার সুনামগঞ্জ সওজ কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না। জগন্নাথপুরের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী আবু তাহেরও এমনটাই মনে করেন।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *