ডায়ালসিলেট ডেস্ক : চারদিকে সবুজের সমারোহ। রয়েছে আঁকাবাঁকা চলার মেঠোপথ। পথের দুই প্রান্তে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ। যেখানে শত শত গরুর অবাধ বিচরণ। সাথে অন্য গবাদিপশুর মিশ্রতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বিস্তৃত মাঠ জুড়ে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

গো-চারণভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরুপ এমন এক দৃশ্যের দেখা মেলে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘির হওরাঞ্চলে। বোরো চাষ, মাছ শিকারের পাশাপাশি গবাদিপশুর লালন পালনে ঝুঁকছে এখানকার মানুষজন। কয়েক বছর আগে হাওরাঞ্চলে গরুর সংখ্যা কমতে থাকলেও দুই তিনবছর ধরে গরুর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। শুকনো মৌসুমে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত হাওর এলাকায় গবাদিপশুর ছোট বড় পালের দেখা মেলে বিস্তৃর্ণ মাঠে।

শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে সদরের রসুলপুর গ্রাম দিয়ে কাওয়াদীঘি হাওরে যাবার রাস্তার পশ্চিমপার্শ্বে দেখা যায় শত শত গরুর ছোট বড় পাল। একেক পালে ৫০ থেকে ১০০ বা তারও অধিক গরু-মহিষ খোলা মাঠ জুড়ে বিচরণ করছে। এখন হাওরপারে বিভিন্ন জাতের ঘাস বেড়ে ওঠেছে। গরু মহিষ সেই ঘাস খেয়ে দিন পার করছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুকনো মৌসুমে হাওরে অস্থায়ীভাবে গবাদিপশুর লালন পালনের পুরোনো-প্রচলিত একটি পদ্ধতি। এসময় হাওরেই তৈরি হয় অস্থায়ী ডেরা। এখানকার প্রতিটি বাড়িতেই গবাদিপশু পালন করা হয়। পৌষমাস থেকে গ্রামে তৃণলতার অভাবে গো-খাদ্য সংকট হয়ে থাকে। এসময় গৃহস্থরা হাওরের পতিত জমিতে গরুকে ঘাস খাওয়ানো জন্য পাঠিয়ে দেন।

ওই এলাকার চার-পাঁচ কিলোমিটার দূর গ্রামের গৃহস্থরা বাড়ির কিংবা অন্য লোক দিয়ে মাস ভিত্তিতে গরু-মহিষ হাওরে চড়িয়ে থাকেন। দৈনিক একেক বাড়ির একেকজনের রাখালির দায়িত্ব থাকে। যিনি গরু-মহিষকে নিয়ে হাওরে নিয়ে যান। স্থানীয় ভাষায় এই রাখালিকে ‘গরুবারি’ বলা হয়। তাই প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট স্থানে গবাদিপশুদের নিয়ে আসেন গৃহস্থরা। সেখান থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাখাল হাওরে পশুদের নিয়ে যান। সারাদিন গরু-মহিষের দল হাওরের চরে ঘাস খায়, ঘুরে বেড়ায়, সন্ধ্যার আগে আগে দলবেঁধে গৃহস্থের ঘরে ফিরে আসে।

একেকটি দলে ৫০ থেকে ১০০ বা তারও অধিক গরু-মহিষ থাকে। একেকজন মালিকের ৪ থেকে ৫টি কিংবা ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত গরু-মহিষ-ছাগল থাকে। পৌষ থেকে চৈত্র-বৈশাখ পর্যন্ত চলে এই কার্যক্রম।

কথা হয় সূর্যের খাড়া তাপে গবাদিপশু চড়ানোতে ব্যস্ত রসুলপুর এলাকার কৃষক মহসিন মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আজ আমার দায়িত্ব পড়েছে গরু চড়ানোর। নিজের ৮টি গরুসহ মোট ৬৬টি গরু ছাগল নিয়ে এখানে এসেছি।

জুমাপুর এলাকার কৃষক মন্নান মিয়া জানান, আমার ১১টি গরু রয়েছে। কৃষি ক্ষেতের পাশাপাশি এগুলো লালনপালন করি। পৌষমাস থেকে গ্রামে তৃণলতার অভাবে গো-খাদ্য সংকট হয়ে থাকে। এসময় গরু মালিকরা চার-পাঁচ মাসের জন্য গবাদিপশুদের হাওরে পাঠান।

কান্দিগাঁও এলাকার বড় একটি গরুর পাল সামলাচ্ছেন রাখাল মনিন্দ্র দাশ। তিনি জানান, সকালে কান্দিগাঁও এলাকার বড় রাস্তায় গৃহস্থরা গবাদিপশুদের নিয়ে আসেন। সেখানে পশুদের একত্রকরে হাওরে চলে যাই।

তিনি জানান, শত শত গরুর ছোট বড় পাল হাওরে চরে চরে ঘাস খায়, ঘুরে বেড়ায়। বেলা হেলে পড়লে রাখালেরা গরু মহিষের দল নিয়ে গ্রামের দিকে রওনা দেন। হাওরের পথে পথে ধুলা উড়িয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।

সদর উপজেলার হাওর এলাকার কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন রাজন আহমদ। তিনি বলেন, বোরো চাষের ওপর হাওর এলাকার মানুষ নির্ভরশীল, পাশাপাশি বর্ষায় অনেকে মাছ শিকার করে বিক্রি করেন। বর্তমান এই এলাকায় প্রচুর গরু ছাগল ও হাঁস মোরগের ছোট ছোট খামার রয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে হাওরাঞ্চলে গরুর সংখ্যা কমতে থাকলেও দুই তিনবছর ধরে গরুর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। এখানকার গ্রামগুলোতে খামার গড়ে ওঠেছে। বিশেষ করে দেশীয় গরুর খামার। এই গরুগুলোকে ঘাস খাওয়াতে পতিত জমিতে নিয়ে যান কৃষকরা। একেকজন একেকদিন গরুগুলোর রাখালি করেন। এলাকার ১০ জনের গরু থাকলে ১০দিন আর ২০ গরু থাকলে ২০দিন পরপর রাখালির দিন আসে। স্থানীয় ভাষায় আমরা এই রাখালিকে গরুবারি বলি। হাওরাঞ্চলে মানুষের মাঝে এখনো এই রাখালিটা টিকে আছে।রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ বলেন, শীত-বর্ষায় হাওরে দু’রকমে জীবন। শীত সব শুকনো থাকলেও বর্ষায় থৈ থৈ পানি। বর্ষায় গবাদিপশু একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে কচুরিপানা খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে হাওরের উন্মুক্ত প্রান্তরে গবাদিপশুদের বিচরণ করিয়ে লালন পালন করা হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *