ডায়াল সিলেট ডেস্ক:  হোটেল শ্রমিক তানিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিসহ নানা দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়াসহ নেতৃবৃন্দ এই স্মারকলিপিটি প্রদান করেন। এর অনুলিপি জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট নানা দপ্তরে দেওয়া হয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয় মৌলভীবাজারের কুসুমবাগ এলাকার খানদানী রেস্টুরেন্টের কিশোর শ্রমিক তানিম কতিপয় দুস্কৃতিকারীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে।

মাত্র ১৪-১৫ বছরের এমন ফুটফুটে কিশোরের মৃত্যুতে সমস্ত হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ২৬ জুন তারিখে শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের সার্বিক নিরাপত্তা এবং তানিমের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ প্রদানের দাবি জানায়।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে ঘটনার ১৫ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও অদ্যাবদি হত্যাকারী সকল অপরাধীকে গ্রেফতারের করা হয়নি। পরিবারের অভাব অনটনের কারণে কিশোর তানিম এক মাস আগে শহরের খানদানী রেষ্টুরেন্টে কাজ নেয়।

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে ২৪ জুন খানদানী রেষ্টুরেন্টের সামনের পানদোকানদার কয়েকজনের সহযোগিতায় নির্মমভাবে অত্যাচার করে তানিমের মাথায় ও অন্ডকোষে গুরুতর জখম করে। পরবর্তীতে মুমূর্ষ তানিমকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার শুরু থেকে খানদানী রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্ঠা করে। এমন কি মৃত্যু পথযাত্রী তানিমকে তার পরিবারের সদস্যদের সাথেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না।

হোটেল কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের কারণ কি হতে পারে? মৌলভীবাজার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও তানিমের অবস্থার উন্নতি না হয়ে আরও অবনতি হতে থাকে।

পরদিন সকালে মৃত্যু পথযাত্রী তানিম সদর হাসপাতালের তার পাশের সিটের রোগীর মোবাইলে তার পিতাকে জানালে পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ছুটে আসেন।

তানিমের পিতাসহ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে এসে তানিমের গুরুতর অবস্থা দেখে তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেন।

গুরুতর অবস্থায় এম্বুলেন্সেই তানিম তার পিতার সাথে শেষ কথা বলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দুপুরে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তানিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রশ্ন থেকে যায় আগের দিন রাত ৯ টা থেকে পরদিন সকাল ১১ টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার সদর হাসতাপালে তানিমের কি চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় হোটেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও তার উন্নত চিকিৎসার কোন উদ্যোগ নেয়নি।

যদি তানিমকে আগের দিন রাতেই সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হতো তাহলে হয়তো পরিবারের সদস্যরা নিজেদের কিছুটা হলেও প্রবোধ দিতে পারতেন। ঈদের ঠিক আগ মুহুর্তে ফুটফুটে তানিমকে হারিয়ে বাবা মাসহ পরিবারের সদস্যরা পাগল প্রায় হয়ে পড়েন।

এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় হোটেল কর্তৃপক্ষের কি কোন দায় নেই। প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব মালিকপক্ষের।

হত্যাকান্ডের আলামত হিসেবে খানদানী রেস্টেুরেন্টের ভিতরের ও বাইরের সকল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়নি বলে তানিমের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

তাছাড়া বাংলাদেশ শ্রমআইনের ৪১ ধারায়  দৈনিক ৫ ঘন্টার অধিক এবং সন্ধ্যা ৭ টা থেকে সকাল ৭ টায় পর্যন্ত কিশোর শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো নিষিদ্ধ হলেও খানদানী রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ কি তার যথাযথ প্রতিপালন করেছিলেন।

কিশোর শ্রমিক নিয়োগ এবং তার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় দায়িত্ব কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হলেও তারা কি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন।

তানিমের মৃত্যু সেই প্রশ্নগুলোকে খুবই প্রাসঙ্গিকভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। আগামীতে যে আর কোন তানিমকে এভাবে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু বা হত্যার শিকার হতে হবে না তার নিশ্চয়তা কি দেওয়া হবে।

তানিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে খানদানী রেস্টুরেন্টের কর্তৃপক্ষসহ ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডে যাদের নাম এসেছে তাদের সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তানিমের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ প্রদান করার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সকল শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *