ডায়ালসিলেট ডেস্ক::বিদ্যমান চুক্তি মতে ১০ ডলারেই চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মার দেড় কোটি ডোজ টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে পরবর্তীতে ওই দামে টিকা পাওয়ার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত! ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, বেইজিংয়ের যে মনোভাব, তাতে পরবর্তীতে টিকার দাম ঠিক থাকবে কিনা- সেই অনিশ্চয়তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই করণীয় ঠিক করছে বাংলাদেশ। বন্ধুরাষ্ট্র বা বাড়তি খাতিরে বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ কম দামে বাংলাদেশকে দেড় কোটি ডোজ টিকা দিতে সম্মত হয়েছে চীন। রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা বা সিদ্ধান্তে সিনোফার্ম ৩ মাসে ৩ দফায় ওই টিকা সরবরাহে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে উপনীত হয়। শর্ত ছিল দামের বিষয়টি গোপন রাখার। দুই দেশের মধ্যে গোপনীয়তা রক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি বা নন-ডিসক্লোজারও সই হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা বেমালুম তা ফাঁস করে দেয়ায় টিকার দাম ঠিক থাকা এবং সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। টানাপড়েন শুরু হয় ঢাকা-বেইজিং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে। ঢাকায় চীনা টিকার দাম প্রকাশে রীতিমতো উতালা হয়ে ওঠে কলম্বোর রাজনীতি। এশিয়া এবং আফ্রিকার অন্য যেসব দেশে চীন টিকা রপ্তানি করছে তাতেও কম-বেশি প্রতিক্রিয়া হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকাকে জরুরি কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়ে অসন্তোষ জানায় বেইজিং। বাংলাদেশ সরকার কাল-বিলম্ব না করে বেইজিংয়ে পাল্টা নোট পাঠায় এবং শর্তভঙ্গের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করে। ফলে আপাতত চীনের সঙ্গে মান-অভিমানের অবসান ঘটেছে। গতকাল গণমাধ্যমের কাছে এমনটাই দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুুল মোমেন। তার দাবি, তারা একটু দুঃখিত হয়েছিল, এটা জানার পর বাংলাদেশ বলেছে ভুল হয়ে গেছে। ভুলের জন্য চীনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করায় বিষয়টির মিটমাট হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বন্ধুত্ব থাকায় চীনের কাছ থেকে ভালো প্রাইসে আমরা টিকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। যে দামে চুক্তি হয়েছে তা ঠিক থাকছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন- ভিন্ন কোনো খবর এখনও পাইনি। আশা করি ঠিক হওয়া দামেই পাবো। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের পর চীনের সিনোফার্মার তৈরি টিকা পেতে অনেক দেশই চুক্তি করছে। তাছাড়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সহজেই মিলছে না- এটা স্পষ্ট হওয়ার পরও বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকছে অনেকে। বাংলাদেশও ওই দলে আছে। গত ২৭শে মে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সিনোফার্মার টিকার দেড় কোটি ডোজ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন পায়। সরকার এই টিকার প্রতি ডোজ ১০ ডলারে কিনতে যাচ্ছে বলে বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রকাশ করে দেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান যে, ওই দাম এখনো অনুমোদন পায়নি। ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে গতকালও তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে বিরক্তি প্রকাশ করে লিখেছেন, উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক বোঝাপোড়া হয়েছে, এটা চীন সরকারের সঙ্গে কোনো চুক্তি নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম আগেই বলেছেন, চীন প্রতি ডোজ টিকা শ্রীলঙ্কার কাছে ১৪ ডলারে এবং ইন্দোনেশিয়ার কাছে ১৭ ডলারে বিক্রি করছে। সেখানে বাংলাদেশকে কম দামে টিকা দেয়ার কারণে অন্যত্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। বিষয়টি ঢাকার নজরে এনে দাম প্রকাশের কারণ জানতে চেয়েছে চীন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

এ/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *