প্রকাশিত: ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২১
ডায়ালসিলেট ডেস্ক::নিজেকে বাঁচাতে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহান। এমনটিই দাবি করেছেন আনুশকার মা শাহানুরী আমিন। জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফারদিন জানায়, আনুশকা সকালে তার মা’কে ফারদিনের বাসায় যাওয়ার কথা জানিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এ সময় তিনি আনুশকাকে দুপুরের খাবার কিনে দেয়ার কথা বললেও পরে নেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহানুরী আমিন বলেন, এগুলো একদম মিথ্যা কথা। এ কথার একভাগেরও সত্যতা নেই। ফারদিনের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিল না আমার মেয়ের। অভিযুক্ত ফারদিনের ফাঁসি হলে আমি সন্তুষ্ট হবো।
তিনি বলেন, ফারদিনের পরিবারের সদস্যরা এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। ঘটনার দিন ফারদিন আমাকে ফোন দেয়ার পরে একাধিকবার তার ফোন বন্ধ করেছে আবার খুলেছে। আমি কখনো ফোন করে ফারদিনকে পেয়েছি আবার কখনো পাইনি।
তিনি বলেন, আমার ধারণা ফোনে যোগাযোগ করে আনুশকাকে খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে অচেতন করে বাইরে থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, আনুশকা আমার অনুমতি ছাড়া কখনো কারো বাসায় কোনোদিন যায়নি। আনুশকাকে ধর্ষণ এবং হত্যা শেষে ফারদিনের কিছু একটা করা দরকার এমন তাগিদে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন পালালেও ধরা পড়তো। ফারদিন নিজে ভালো এবং নির্দোষ সাজার জন্য আনুশকাকে হাসপাতালে নেয়। আমাকে ফোন দেয়া- সবই ছিল তার কৌশল। এমনকি আমার মেয়ের ফোন থেকেই আমাকে ফোন দেয় ফারদিন। আমার মেয়ে হয়তো বাঁচার জন্য চেষ্টা করেছে। ওর বাবাকে ঘটনার দিন দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করতে পারেননি। ব্যস্ত ছিলেন। মনে হয়, তখন আনুশকা কোনোভাবে বাঁচার জন্য কৌশলে ফোন দেয়ার চেষ্টা করেছে। সে সুযোগ পেলে হয়তো আমাকেও ফোন দিতো। হঠাৎ করে একবার একটি ফোন এসেছিল। শাহানুরী বলেন, আনুশকার পিঠে এবং নিতম্বে অসংখ্য কালসিটে আঘাত দেখা গেছে। রক্ত জমে গেছে। আনুশকাকে যেভাবে বিকৃত এবং হয়রানি-নির্যাতন করে মারা হয়েছিল সেটা বোঝা গেছে। ওখানে এটা শুধু একজনের কাজ ছিল না। ঘটনাস্থলে তারা চারজনই ছিল।
ফারদিন পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু হাসপাতালে যখন মৃত অবস্থায় নেয়া হয়েছে তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে তাদের আটক করে। পুলিশ চলে আসায় ফারদিন হাসপাতাল থেকে বের হতে পারেনি। ফারদিন এবং তার তিন বন্ধু তারা চারজনই এই ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত। এবং তারা প্রত্যেকেই হাসপাতালে বসা ছিল। এ সময় আমি ফারদিনকে বলি, আমার মেয়ে কোচিংয়ে গিয়েছে। তোমার সঙ্গে কেন? তখন ফারদিন জানায়, আমরা নিয়ে গিয়েছিলাম আনুশকাকে। এ সময় আমরা চারজনই ছিলাম। এখন বলছে ফারদিন একা ছিল। ইতিমধ্যে জেনেছি, ফারদিনের সঙ্গে থাকা তিন বন্ধুই প্রভাবশালী পরিবারের। তারা সংশ্লিষ্ট থানাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছে। ফারদিন তো বাঁচারই চেষ্টা করবে। সে বানিয়ে বানিয়ে কথাগুলো বলছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল, তিনজনকে মুক্ত করতে পারলে ফারদিনকেও বয়স কম দেখিয়ে প্রভাব খাটিয়ে মুক্ত করার চেষ্টা করবে। আনুশকার মা বলেন, আনুশকাকে হত্যার পরে আমি যখন থানায় যাই তখন ফারদিনকে হাসি মুখে বসে থাকতে দেখা গেছে। ওর মধ্যে কোনো অনুশোচনা বা ভয়-ভীতি ছিল না। তাদের চার বন্ধুকে থানায় বসে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়েছে। তাদের কোনো ওষুধ লাগবে কি-না জানতে চাওয়া হয় তখন। এ সময় তাদের ইচ্ছানুযায়ী মামলা সাজানো হয়। তখন আমার স্বামী মেয়ের শোকে বারবার চেতনা হারিয়ে ফেলছিলেন। আমি মামলার বাদী হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেয়নি।
আমি একটু শক্ত সামর্থ্য হওয়াতে আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়নি। মামলায় কি লেখা হয়েছে সেটা পড়ার মতো হুঁশ ছিল না। তখন আনুশকার বাবার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। ফারদিন স্বীকারোক্তির নামে যে মিথ্যাচার করছে- এটা কোনো ভাবেই সঠিক নয়। এত বড় জঘন্য কাজ যে করতে পারে তার পক্ষে এই মিথ্যাচার করা অসম্ভব কিছু নয়। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটিই আবেদন, এত জঘন্যতম কাজ, অমানবিক নির্যাতন করে একটি নিষ্পাপ কিশোরীকে হত্যায় অভিযুক্ত ফারদিনের দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠিনতম বিচার দাবি করছি। ভবিষ্যতে এরকম অন্যায় যেন আর কেউ করতে সাহস না পায় সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনার সঙ্গে অন্য যারা জড়িত তাদের সকলের শাস্তি দাবি করছি। তিনি বলেন, কারণ একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকলে একটি মেয়ের প্রাণ এভাবে যাওয়ার কথা নয়। বাকি তিনজন খারাপ ছেলেটারই (ফারদিন) বন্ধু। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না।
কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ঠাকুর দাস মালো মানবজমিনকে বলেন, ফারদিনের সঙ্গে থাকা তিন বন্ধুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের পুনরায় যেকোনো সময় ডাকা হতে পারে।
দিহানের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী দুলাল আটক
কলাবাগানে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ-হত্যা মামলার আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহানদের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে তাকে কলাবাগান এলাকা থেকেই পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান। গত বৃহস্পতিবার ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যু ঘটনার পর থেকেই দুলাল নিখোঁজ ছিলেন। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে দিহানের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, তাকে কলাবাগান থানায় পুলিশি হেফাজতে আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলায় তার সংশ্লিষ্টতা সরাসরি না থাকলেও ঘটনার দিন সে দিহানদের বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তাকে আমরা আমাদের হেফাজতে রেখেছি। জিজ্ঞাসাবাদ করছি।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech