ডায়ালসিলেট ডেস্ক:: বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শেষে তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ইউরোপে। এসময়টাতে এসে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। সিলেটসহ সারাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে প্রাণহানীর সংখ্যাও।
এ অবস্থায় সচেতনতার কোন বিকল্প না থাকলেও ওসবে পাত্তা দেওয়ার সময় নাই সাধারণ মানুষের। মাস্কবিহীন ঘোরাফেরা, মেলা বিয়ে ওয়াজের নামে শ’ শ’ মানুষের সমাগম দেখে কেইবা বলবে যে, আমরা করোনাকে পাত্তা দিচ্ছি? এই মুহুর্তে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার প্রস্তুতি চলছে সরকারিভাবে, ঠিত তখনি সিলেট চলছে একটা বিশাল মেলা।

আর বিয়ে-শাদী বা মিলাদ-ওয়াজ মাহফিলতো আছেই। মহামারী কাল! তাকে আবার পাত্তা দেওয়ার কি, ভাবখানা এমন। তবে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামবে।
সপ্তাহখানেক থেকে সিলেটসহ সারাদেশে করোনা শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, অনেকটা হু হু করে। সিলেট বিভাগেই গত ৩ দিনে মোট শনাক্ত হয়েছেন ৭১ জন।

এরমধ্যে আবার ১ জনের মৃত্যুও হয়েছে। ১০/১২ দিন আগের পরিসংখ্যাণ ছিল আরও অনেক কম। রোববার সিলেট বিভাগে মোট কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে ১৪ জনের। এরমধ্যে সিলেট জেলার ৪ ও হবিগঞ্জের ১ জন। সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে কারো করোনা শনাক্ত না হলেও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৯ জন। এর আগের দিন শনিবার বিভাগজুড়ে কোভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা ২৩।
এরমধ্যে সিলেট জেলার ১২, সুনামগঞ্জের ৫ ও  মৌলভীবাজারের ৪ জন। হবিগঞ্জে সেদিন কেউ শনাক্ত না হলেও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ২ জন। এদিন সর্বনাশা করোনা একজনের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে।  শুক্রবার সিলেট বিভাগজুড়ে মোট শনাক্ত হয়েছেন ৩৪ জন।
এদের মধ্যে সিলেট জেলার ২৪, সুনামগঞ্জের ২, হবিগঞ্জের ১ ও মৌলভীবাজারের ১ জন। অপর ৬ জন ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি রোগী। শুক্রবারের তুলনায় শনি ও রোববার কিছুটা কম  শনাক্ত হলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কিন্তু খারাপ। প্রায় প্রতিদিনই সারাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের নম্বরে রোববার রাতে ফোন দিলেও তিনি ধরেন নি। তবে এডিসি ( সার্বিক) আ ন ম বদরুদ্দোজা বলেছেন, আমরা নানাভাবে কাজ করছি। মাঠে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে চলছে প্রচার। কয়েকদিনের মধ্যেই জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করবে।

সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপপরিচালক ডাক্তার হিমাংশু লাল রায় জানান, এখনো নতুন কোন নির্দেশনা আসেনি। তাই আগের নির্দেশনা অনুযায়ীই কাজ চলছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনের জন্য এ হাসপাতালে ২শ’ শয্যা প্রস্তুত। যদিও এখন সেগুলোর অধিকাংশেই চলছে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা। তবে করোনা রোগীর চাপ বাড়লে আমরা সেটা তাৎক্ষনিক খালি করে দিতে পারবো। তিনি জানান, শহীদ শামসুদ্দিন হাসাপাতালেও তাদের প্রস্তুতকৃত করোনা বেডের মধ্যে তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগ খালি। সুতরাং কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।

অন্যান্য বিষয়েও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সিলেটের সিভিল সার্জন ডাক্তার প্রেমানন্দ মন্ডলও জানালেন, নতুন কোন নির্দেশনা তাদের কাছে নেই। আগের নির্দেশনার আলোকে কাজ চলছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেটের সহকারি উপপরিচালক ডাক্তার আনিসুর রহমান জানান, ওসামানী মেডিকেল কলেজ ও শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের পাশাপাশি আইসোলেশনের জন্য তারা আগের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি- বেসরকারি অন্যান্য হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত রেখেছেন।

সেগুলো হচ্ছে নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও খাদিমনগররের হযরত শাপরাণ (রাহ,) হাসপাতাল। এদিকে করোনা সচেতনতামূলক কাজে মাঠে নেমে পড়েছে সিলেট জেলা পুলিশ। তারা রোববার মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি পথসভার মাধ্যম সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *