ডায়ালসিলেট ডেস্ক::একই দিনে, প্রায় একই সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারত ও পাকিস্তানের হাইকমিশনার। মূল ভবনের একই তলায় পাশাপাশি কক্ষে বৈঠক দুটি হয়। ঘটনাটি কাকতালীয় কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ- এমনটাই দাবি পররাষ্ট্র দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, মন্ত্রণালয়ে কাছাকাছি সময়ে এই দুই দূতের প্রবেশ এবং বের হওয়ার দৃশ্য একেবারেই বিরল।
হয়তো এ জন্যই মধ্যাহ্নের ওই বৈঠক দুটি ছিল সেগুনবাগিচার বুধবারের মুখ্য আলোচ্য। বিষয়টি কৌতূহলেরও। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত অ্যাপয়েনমেন্ট ছিল ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর। নির্ধারিত সময়েই তিনি পৌঁছান।

কিন্তু তার ১৫ মিনিট আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ঢাকাস্থ পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। ওই বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ- বৈঠক সেরে বিদায় নেন ভারতীয় দূত। প্রতিমন্ত্রী-ভারতীয় হাইকমিশনার নাতিদীর্ঘ ওই বৈঠকে সুনির্দিষ্টভাবে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল সূত্র অবশ্য এটুকু আভাস দিয়েছে যে, বৈশ্বিক ফোরামে ভারত বেশকিছু নির্বাচনে বাংলাদেশের সমর্থন চাইছে বহু দিন ধরে। এ নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়ে থাকতে পারে। তবে ওই বৈঠকে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে কোনো কথা হয়নি দাবি করে এক কর্মকর্তা বলেন, ওই বৈঠক অনেকটা অনানুষ্ঠানিক। তাই কোনো প্রেস রিলিজ ইস্যু হয়নি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারত কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থন চেয়েছে। হয়তো প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। সেখানে টিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মনে হয় না। যদিও গতকালই ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে জুলাইর শেষ নাগাদ কিংবা আগস্টের শুরুতে বাংলাদেশ সহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে কিছু টিকা সরবরাহের বিষয়ে ভাবছে দিল্লি।
সচিবের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কী কথা হলো পাকিস্তান দূতের: এদিকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের কী কথা হলো জানতে চাইলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বৈঠকটি রুটিন হলেও ইস্যুতে ঠাসা ছিল। বহুদিন ধরে বারিধারায় পাকিস্তান হাইকমিশনের জন্য বরাদ্দ হওয়া প্লট জটিলতা ছিল। মঙ্গলবার এর সুরাহা হয়েছে। পাকিস্তান দূত এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয়ত: বৈরী পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়। এ নিয়ে ইমরান খান সরকারের উদ্যোগ আছে। হাইকমিশনার সেটা পুশ করছিলেন। ঢাকা সাড়া দিয়েছে। তাতে তিনি খানিকটা সফল হয়েছেন বলে সচিবকে জানিয়েছেন। পাকিস্তানের বন্দর ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মিস্টার সিদ্দিকী। একই সঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি একটি প্রতিনিধিদলকে করাচি পোর্ট পরিদর্শনে নিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশের ওষুধসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা রয়েছে জানিয়ে পাকিস্তান দূত এ বিষয়ে ঢাকার সহায়তা চেয়েছেন। বাংলাদেশ-পাকিস্তান বর্তমান বাণিজ্য সাড়ে ৭০০ মিলিয়ন ডলার থেকে আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন এবং কিছু প্রস্তাবও করেছেন- কালকের বৈঠকে এমনটাই জানা গেছে। তবে সচিবের ওই আলোচনায় বাংলাদেশের বড় দাবি একাত্তরের অপরাধের জন্য ইসলামাবাদের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে হাইকমিশনার বরাবরের মতো নীরব ছিলেন।

এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *