সোহেল আহমদ :: সিলেট ছাত্রলীগে প্রায় সাড়ে ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করা হয়নি। এনিয়ে অনেকেই গুনছেন অপেক্ষার প্রহর। সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

 

গত (১৩ই মার্চ ২০২১ইং) ছাত্রলীগের কর্মীসভায় কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সিলেটেও এসেছিলেন। তাদের সিলেট সফরকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামের এসে উপস্থিত হয়ে এসময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘আমরা সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের যে কমিটি দেবো সে কমিটির নেতৃত্বে আপনারা কাজ চালিয়ে যাবেন। ত্যাগী, স্বচ্ছ ধারার নেতা এবং ছাত্রদের দিয়ে গঠন করা হবে ছাত্রলীগের কমিটি। নিজেদের মধ্যে কোন কোন্দল সৃষ্টি না করতে তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে যান।

 

অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘আপনারা সিলেট ছাত্রলীগ আমাদের অনেক দিয়েছেন। এখন আমাদের দেবার পালা। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হবে। আমরা যে কমিটি দেব সেই কমিটির নেতৃত্বে আপনারা কাজ করবেন।’

 

কিন্তু সিলেটে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনের প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করতে পারেননি। এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের কমিটি গঠনে নেই কোন সাড়া।

 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের  ছাত্রলীগ একনেতা বলেন, অছাত্ররা ছাত্রলীগে যোগ দেয়ায় সিলেটে এ সংগঠনের অবস্থান থাকার পরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। যার কারণ গ্রুপিং জটিলতার কারণে। এতে ত্যাগী, শিক্ষিত, দক্ষ, কর্মঠ ছাত্রলীগের কর্মীরা মূল্যবান পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  ছাত্রলীগকে চলতে দিবে ছাত্রলীগের মতো সেখানে দেখা যায় অনেকে স্কুল বা কলেজের দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত যাদের নামই নেই এখন সেও ছাত্রলীগ কমিটিতে স্থান পেয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা ছাত্রলীগে পদ পেতে হলে শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে গ্রুপে যোগদান করতে হয়। সেখানে খারাপ-ভাল দুটিই মিলিয়ে নেতাদের মন জয় করে নিলেই মোটামুটি পদ পদবী কনফার্ম হয়ে যায়।

 

এ ধরনের রাজনীতি থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। তবে ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু অছাত্ররা তাদের নিজস্ব এলাকায় তাদের নিজেরে নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু কলোনীতে থাকা অছাত্রদের নিয়ে বিভিন্ন  মাদক, ইয়াবা, ফেনসিডিল সেবন এসব ব্যবসায়  জড়িত হয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। যা সত্যিই মনে কষ্ট লাগে।

 

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের আরেক কলেজ শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তিনি ডায়ালসিলেটকে জানান, অনেক নেতাকর্মীরা আছেন যারা রাজনীতি কি এবং ছাত্রলীগের মূল কাজ কি? তাও জানেন না। আমরা মনেকরি আমাদের ছাত্র রাজনীতি হলো বঙ্গবন্ধু ইতিহাস জেনে তার আদর্শে রাজনীতি শিখে দেশকে এবং সমাজকে কিভাবে উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা যায়। সুষ্টু মানসিকতা নিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ কাজের মাধ্যমে আরো উন্নতির দিকে দলকে এগিয়ে নেয়া যায় সে ধরনের রাজনীতি আমাদের সকলের মনোভাব থাকা দরকার। তাহলেই ছাত্রলীগের সুষ্টু ধারার রাজনীতি ফিরে আসবে।

 

বিগতদিনে সিলেটে দেখা গেছে দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে অনেক ছাত্রলীগ কর্মীরা তারা নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং দ্বন্দে ( ছাত্রলীগ কর্মীকে ) খুন হতে হয়েছে। অনেক নেতারাই নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে ছাত্রলীগকে কাজে লাগান। যার কারণে এধরনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নামটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। তবে শাসক দল হিসেবে সিলেট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর অভাব নেই। বেশ কয়েকটি গ্রুপ উপ-গ্রুপে নেতাকর্মী রয়েছেন কয়েক হাজার কর্মী। আর এসব গ্রুপ-উপগ্রুপের ভাগ করে দিয়েছে ছাত্রলীগকে। যার কারণে সিলেটে ছাত্রলীগ বারবার বিতর্কিত হচ্ছে।  আর এ গ্রুপে সিনিয়র নেতাদের ছত্রছায়ায় এসব হত্যার ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে টিলাগড়ে আজাদ-রনজিত সরকার এ দুটি গ্রুপে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চান না। এজন্যই এধরনের নির্মম হত্যাকান্ড একের পর এক ঘটেই যাচ্ছে।

 

বর্তমানে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগে নেই কোন কমিটি, নেই কোন নেতৃত্ব। কমিটি না থাকায় উত্থান ঘটেছে নানা গ্রুপ উপ-গ্রুপের। ঘটছে নানা অপকর্ম।

 

সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচায় এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের কেউই ফোন রিসিভ করেননি।

 

উল্লেখ্য, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর। এসময় শাহরিয়ার আলম সামাদকে সভাপতি ও এম এ রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরের বছর ২০১৫ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর আরো ১৩১ সদস্য যোগ করে ১৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পায়। এর ঠিক ৪ মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ২৫শে মার্চ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্র। ৯ মাস পর ১১ই ডিসেম্বর কমিটির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। আবার ২০১৭ সালে ১৮ই অক্টোবর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এরপর বারবার সিভি জমা নিলেও কমিটি দিতে ব্যর্থ হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

 

অন্যদিকে, কমিটি ছাড়াই ৪ বছর ধরে চলছে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ। ২০১৫ সালের ২০শে জুলাই আব্দুল বাছিত রুম্মানকে সভাপতি ও আব্দুল আলীম তুষারকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রলীগের ৪ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এর সাড়ে ৩ বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা এবং নানা অভিযোগে ২০১৮ সালের ২১শে অক্টোবর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এ কমিটি।

 

পরে ১ নভেম্বরের মধ্যে পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) জমা দেয়ার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তবে পদপ্রত্যাশীরা জীবন বৃত্তান্ত জমা দিলেও করা হয়নি কমিটি।

 

ফলে জেলা ও মহানগরের  দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় দিনদিন সিলেটে অবস্থান হারাচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। আবার কেউ কেউ ছাত্ররাজনীতি বাদ দিয়ে যোগ দিয়েছেন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগেও। সিলেটে কবে আসছে ছাত্রলীগের কমিটি তা কেউই জানেন না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যেন মিলছে না কোন সাড়া।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *