প্রকাশিত: ৯:১৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২১
ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জুন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ইন্দোনেশিয়ার ডাক্তার ও নার্স সমিতি বলছে, মৃতদের সকলেরই চীনে তৈরি সিনোভ্যাক টিকা নেওয়া ছিল।
করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ধরন, বিশেষ করে ভারতে প্রথম শনাক্ত ডেল্টা ধরনে বিপর্যস্ত ইন্দোনেশিয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। দুই ডোজ টিকা নিয়েও বেশ কজন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুর পর সেদেশে দারুণ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় যেভাবে বিপজ্জনক মাত্রায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু হার বাড়ছে তাতে অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিচ্ছেন দ্রুত যেন সমস্ত ডাক্তার, নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি বুস্টার ডোজ অর্থাৎ সিনোভ্যাকের তৃতীয় একটি ডোজ দেওয়া হয়। ইন্দোনেশিয়ার ২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে আট শতাংশেরও কম লোক টিকা পেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি নানাধরনের করোনাভাইরাস বিশেষ করে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রকোপে সংক্রমণ আরো বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে মানুষজন টিকা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে।
ইন্দোনেশিয়াতে এখন প্রতিদিনই ২০ হাজারেরও বেশি নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই হিসাবের চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি কারণ রাজধানী জাকার্তার বাইরে কভিডের পরীক্ষার সুযোগ সীমিত। তবে ভ্যাকসিন পেলেও চীনের তৈরি সিনোভ্যাক আসলে কতটা সুরক্ষা দিতে পারছে বা পারবে তা নিয়ে ইন্দোনেশিয়াতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সেদেশে এখন পর্যন্ত একমাত্র সিনোভ্যাকের তৈরি টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, ইন্দোনেশিয়ায় ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৯৪৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন ডাক্তার এবং ১০ জন নার্সের সিনোভ্যাক টিকা নেওয়া ছিল।
ডাক্তাররা এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে চান না, কিন্তু তারা স্বীকার করেন তারা নিরাপদ বোধ করছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে জানান, সিনোভ্যাকের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার এক মাস পর তিনি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখেন কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করার কোনো সুরক্ষাই দেহে তৈরি হয়নি। ‘কোনো কাজই হয়নি। এই টিকা আমার শরীরে কোনো অ্যান্টিবডি (প্রতিরোধ শক্তি) তৈরি করেনি,’ বিবিসি ইন্দোনেশিয়া সার্ভিসকে বলেন ওই চিকিৎসক। আরো একমাস পর দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করেও তিনি একই ফল পান। তবে ওই চিকিৎসক বলেন, তার কিছু সহকর্মী ভালো ফল পেয়েছেন, কিন্তু তার শরীরে সিনোভ্যাক টিকা কোনো কাজ করেনি।
সিনোভ্যাকের প্রধান নির্বাহী ইন উইডং সম্প্রতি চীনা টিভি নেটওয়ার্ক সিটিভিকে বলেন, ‘দুই ডোজ নেওয়ার পর শরীরে প্রতিরোধী শক্তি তৈরি হচ্ছে। তৃতীয় ডোজ প্রয়োজন কি-না তা পরীক্ষার জন্য দয়া করে গবেষকদের আরো কিছুটা সময় দিন।’ তৃতীয় ডোজ নিয়ে পরীক্ষা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মি. ইন বলেন, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার তিন থেকে ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ নেওয়ার পর দেহে অ্যান্টিবডির শক্তির মাত্রা ১০ গুণ বেড়ে যেতে পারে, ১৫ দিনের মধ্যে সেই মাত্রা ৩০ গুণ বাড়তে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডাব্লিউএইচও এবং সরকার যেসব ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছে সেগুলো কোভিডের বিপদ কমাচ্ছে বলে তাদের আস্থা রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের তৃতীয় ডোজ প্রয়োজন কি-না তা নিয়ে সমিতির ভেতর আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার ভ্যাকসিন কর্মসূচি প্রকল্পের মুখপাত্র ড. সিতি সাদি তারমিযি বলেন, ‘তৃতীয় ডোজ দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র নেই। ডাব্লিউএইচও কিছু বলছে না। সুতরাং আমাদের উচিত অপেক্ষা করা।’ ‘দুই ডোজের পর সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন কতটা সুরক্ষা দিচ্ছে তা নিয়ে আমাদের বিজ্ঞানীরা একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাচ্ছে। ওই ট্রায়াল এখন তৃতীয় পর্যায়ে। ফলাফল পেলে তৃতীয় ডোজ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হবে।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। এখন পর্যন্ত দেশে ২১ লাখ কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ৫৭,০০০। হাসপাতালে জায়গার সংকট এবং অক্সিজেনের সংকট দেখা দেওয়ায় গত মাসেই ইন্দোনেশিয়ার রেড ক্রস দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলে, ‘দেশ এখন কভিড বিপর্যয়ের খাদের কিনারে পৌঁছে গেছে।’ মে মাস থেকে ইন্দোনেশিয়ায় শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার তিনগুণ বেড়ে গেছে। এমনকি ছোট বাচ্চারাও কোভিডে মারা যাচ্ছে।
সে কারণে প্রেসিডেন্ট উইডোডেো সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, ১২ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সংক্রমণ সামলাতে জাভা এবং বালিতে দুই সপ্তাহের লকডাউন চলছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech