ডায়ালসিলেট ডেস্ক:: করোনার টিকা গ্রহীতাদের শরতকালের মধ্যে বুস্টার ডোজ দেয়ার প্রস্তাব সমর্থ করেছেন বৃটিশ বিজ্ঞানীরা। এর কারণ, টিকা দেয়ার পর কয়েক শত মানুষের রক্তের পরীক্ষায় দেখা গেছে, টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুরক্ষা দানকারী এন্টিবডি উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষয় পেতে থাকে। টিকা দেয়ার পর এন্টিবডি কমে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচ্য।

তবে এর অর্থ এই নয় যে, টিকা গ্রহণকারীরা করোনা ভাইরাসের কাছে অধিকমাত্রায় ঝুঁকিতে আছেন। তবে গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তারা বলেছেন, যদি টিকার কার্যকারিতা ক্রমাগত কমতেই থাকে, তাহলে কার্যকারিতা এক সময় নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। ইউসিএল ভাইরাস ওয়াচ নামের গবেষণায় দেখা গেছে অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজার/বায়োএনটেকের টিকার দুটি ডোজ প্রয়োগ করার পর যে এন্টিবডি তৈরি হয় দ্বিতীয ডোজ টিকা দেয়ার ৬ সপ্তাহ পরেই তা ক্ষয় পেতে থাকে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ সপ্তাহের মধ্যে এই এন্টিবডি শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি ক্ষয় পায়। গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে খুব বেশি কার্যকর এ দুটি টিকাই। কিন্তু গবেষণায় যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে এই শরতের মধ্যে একটি বুস্টার ডোজ দেয়ার পরিকল্পনাকে সমর্থন করে। বিশেষ করে যারা প্রথমদিকে অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সংক্রামক রোগ বিষয়ক প্রফেসর রব অলড্রিজ বলেছেন, আমরা জানি যে এন্টিবডির লেভেল একেবারে উচ্চে উঠে যায় এবং তা দ্রæত কমে যেতে শুরু করে। আমরা গবেষণায় যে হারে এই এন্টিবডি কমে যেতে দেখেছি তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আমরা উদ্বিগ্ন। এটা অব্যাহত থাকলে টিকার কার্যকারিতাও কমে যেতে থাকবে।

এখন প্রশ্ন হলো, তা কখন ঘটতে যাচ্ছে। জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাক্সিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জেসিভিআই) গত মাসে অন্তর্বর্তী পরামর্শ দিয়েছে। তাতে বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) খাতকে শরতে একটি বুস্টার প্রোগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই বুস্টার ডোজ দেয়া হবে কিনা তা নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।

তাছাড়া টিকা দেয়ার পর তাতে সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে এতটাই কম দুর্বল পারফরমেন্স দেখিয়েছে- যাতে বুস্টার ডোজ দেয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, অধিক জরুরি ভিত্তিতে অন্য দেশগুলোকে টিকা দেয়ার প্রয়োজন।

ইউসিএল টিম ৬০৫ জন মানুষের রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করেছে। তাদের বেশির ভাগের বয়স ৫০ ও ৬০ উত্তীর্ণ। এতে তারা দেখতে পেয়েছেন রোগীভেদে এন্টিবডির পরিমাণে ভিন্নতা রয়েছে। এতে আরো দেখা গেছে অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ টিকা যে পরিমাণ এন্টিবডি তৈরি করে তার চেয়ে অনেক বেশি এন্টিবডি তৈরি করে ফাইজার/বায়োএনটেকের দুই ডোজ টিকা। এতে আরো দেখা গেছে, ফাইজারের টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ দেয়ার তিন থেকে ৬ সপ্তাহ পরে প্রতি মিলিলিটার রক্তে প্রায় ৭৫০০ একক এন্টিবডি আছে। কিন্তু ১০ সপ্তাহ পরে তা কমে ৩৩২০ এককে নেমে এসেছে।

এক্ষেত্রে এস্ট্রাজেনেকায় ৩ থেকে ৬ সপ্তাহে প্রতি মিলিলিটারে এন্টিবডির পরিমাণ ১২০০ একক। ১০ সপ্তাহ পরে তা কমে দাঁড়ায় ১৯০ এককে। দ্য ল্যানসেট ম্যাগাজিনে এ তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর গবেষকরা আরও ৪৫০০ অংশগ্রহণকারীর মধ্যেও একই প্রবণতা দেখতে পেয়েছেন।

ডায়ালসিলেট এম/৫

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *