ডেঙ্গি সংক্রমণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ

প্রকাশিত: ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১

ডেঙ্গি সংক্রমণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ

ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: কোভিড-১৯ এর নতুন ঢেউ এবং ডেঙ্গি সংক্রমণের উচ্চ হার বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান কোভিড সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে, ডেঙ্গি ভাইরাস এবং কোভিড-১৯ এর একই ধরনের উপসর্গ থাকতে পারে। ডেঙ্গি বা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী যাদের হালকা অসুস্থতা থাকে তাদের বাড়িতেই চিকিৎসা করা যেতে পারে। অন্যদিকে, ডেঙ্গি এবং কোভিড-১৯ উভয়ই রোগীকে গুরুতর অসুস্থ করে তুলতে পারে এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

লক্ষণ এবং উপসর্গ
ডেঙ্গি এবং কোভিড-১৯ এর কিছু সাদৃশ্যপূর্ণ (একই রকম) উপসর্গ রয়েছে।

ডেঙ্গি:
ডেঙ্গির লক্ষণগুলো সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। ডেঙ্গির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল জ্বর। জ্বরের সঙ্গে নিম্নলিখিত যে কোনো একটি-
• ব্যথা এবং যন্ত্রণা (হাড়ে তীব্র ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেশী ব্যথা এবং জয়েন্টে ব্যথা)
• ফুসকুড়ি
• বমি বমি ভাব
• তন্দ্রা, অস্থিরতা বা বিরক্তি
• নাক বা মাড়ি থেকে রক্তপাত
• মলত্যাগের সময় রক্ত বের হওয়া অথবা রক্ত বমি

কোভিড-১৯: কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে হালকা থেকে গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেসব লক্ষণ কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের থাকতে পারে কিন্তু অনেক সময় লক্ষণগুলো প্রকাশ নাও পেতে পারে; যেমন-
• জ্বর বা ঠাণ্ডালাগা ভাব
• কাশি
• শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে অসুবিধা
• ক্লান্তি বা অবসাদ
• পেশী অথবা শরীরে ব্যথা
• মাথা ব্যথা
• স্বাদ বা গন্ধ হ্রাস
• গলা ব্যথা
• নাকে রক্তজমা অথবা নাক দিয়ে পানি পড়া
• ডায়রিয়া
• বমি বমি ভাব বা বমি
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি : যারা ডেঙ্গি এবং কোভিড-১৯ এর বেশি ঝুঁকিতে আছেন তারা হলো-

ডেঙ্গি:
• শিশু
• মহিলারা, বিশেষত গর্ভবতী মহিলা
• ডায়াবেটিস, হাঁপানি, স্থূলতা এবং হৃদরোগের মতো ক্রনিক রোগে চিকিৎসাধীন রোগীরা
• দ্বিতীয়বার ডেঙ্গি সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীরা
• পূর্ববর্তী ডেঙ্গি সংক্রমণের পর থেকে সময় (যত বেশি সময়, ঝুঁকি তত বেশি)

কোভিড-১৯:
• পূর্ব থেকেই চিকিৎসাধীন রোগী ও অন্যান্য একাধিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
• গর্ভবতী নারী

কীভাবে কোভিড-১৯ এবং ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ে:
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গি ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রামিত মশার (ভেক্টর-বাহিত রোগ) কামড়ের মাধ্যমে। কোভিড-১৯ সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি বা কথা বলার ফলে উৎপাদিত শ্বাসতন্ত্রের ড্রপলেটের মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি:
এ বছর এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গি আক্রান্তের বেশির ভাগ প্রকোপ ঢাকাতে দেখা দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ বেড়েছে। বর্তমানে কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বেশিরভাগ হাসপাতালের শয্যা এবং আইসিইউ কোভিড-১৯ রোগীদের দ্বারা পূর্ণ। এর ফলে ডেঙ্গি রোগীদের যথাযথ সুবিধা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গি আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে একই ধরনের উপসর্গ দেখা যাওয়ার কারণে ডেঙ্গি ক্রমশ গুরুতর এবং জটিল সমস্যা হয়ে উঠেছে। এই দুটি রোগের লক্ষণের মধ্যে সাদৃশ্য থাকার ফলে সঠিকভাবে ডায়াগনোসিস করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

যদি আপনার কোনো উপসর্গ দেখা দেয় বা স্বাস্থ্যের অবনতি পর্যবেক্ষণ করেন তবে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য শরণাপন্ন হোন। ডাক্তার আপনাকে উপসর্গগুলোর ধরন এবং অবস্থা বুঝতে সাহায্য করবে এবং ডেঙ্গি, কোভিড-১৯ বা উভয় ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ ডায়াগনোসিস করতে পারবেন।

ডা. ফয়সাল রহমান
মেডিকেল সার্ভিস ডিরেক্টর
প্রাভা হেলথ

ডায়ালসিলেট/এম/এ/

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ