সিলেটে চেম্বার সভাপতি র‍্যাব’র মামলার আসামি

প্রকাশিত: ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২১

সিলেটে চেম্বার সভাপতি র‍্যাব’র মামলার আসামি

 

ডায়ালসিলেট :: র‌্যাবের মামলায় আসামি হলেন সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এটিএম শোয়েব। বুধবার র‌্যাব-৯ এর ডিএডি সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। এতে আসামি হয়েছেন আরও ১৩ জন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনজন। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত ওই তিনজনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

 

সিলেটে চলছে চেম্বার নির্বাচনের ডামাডোল। সিলেটের আলোচনার তুঙ্গে থাকা ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টের মালিকানায় অংশীদার আছেন কিনা সিলেট চেম্বারের সভাপতি। চেম্বার থেকে মালিকানার বিষয়টি অস্বীকার করা হলেও ভোজনবাড়ির ব্যবসায়িক চুক্তিনামায় নাম রয়েছে এটিএম শোয়েবের। এ ছাড়া রেস্টুরেন্ট সংশ্লিষ্টরা অংশীদারের কথা স্বীকার করেছেন। এ কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। ওইদিন দুপুরে র‌্যাব’র একটি টিম নগরীর পশ্চিম জিন্দাবাজারের জল্লারপাড় সড়কের ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালায়।

 

এ সময় ভোজনবাড়িতে নিম্নমানের পচা, বাসি খাবারের সন্ধান পায় র‌্যাব। এক পর্যায়ে রেস্টুরেন্টের বৈধ কাগজপত্র খোঁজ করতে গিয়ে দেখে কোনো ব্যবসায়িক লাইসেন্স আপডেট নেই। এ কারণে র‌্যাব’র ভ্রাম্যমাণ আদালত রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়ে ম্যানেজার মো. তোরাব আলী, সুপারভাইজার শুভ্র চন্দ্র পাল, রেস্টুরেন্টের ব্যবসায়ী অংশীদার সৈয়দ মহদ্দিছ আলীকে আটক করে নিয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, র‌্যাব’র ভ্রাম্যমাণ দলের অভিযানের সময় খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন চেম্বার সভাপতি এটিএম শোয়েব, সহ-সভাপতি তাহমিন আহমদ।

 

এ সময় তারা ভ্রাম্যমাণ দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেন। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনার অনুরোধও জানিয়েছিলেন। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ দল তার আইনগত উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ সময় চেম্বার সভাপতি র‌্যাব’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তাদের উপর ক্ষোভ ঝেরেছিলেন বলে দাবি করেছেন উপস্থিত ব্যবসায়ীরা। এরপর সিলেট চেম্বারে বৈঠক আহ্বান করেন চেম্বার সভাপতি এটিএম শোয়েব। বৈঠকে সিলেটের মেয়র ছাড়াও সিলেট জেলা ক্যাটারার্স গ্রুপ, গেস্ট হাউস অনার্স এসোসিয়েশন এবং রেস্তরাঁ মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বারের পরিচালকরা। ওইদিন চেম্বারের সভায় রেস্টুরেন্টে অভিযান বন্ধ, সিলগালাকৃত রেস্টুরেন্ট খুলে দেয়া ও আটক কর্মচারীদের মুক্তির দাবিতে বুধবার থেকে সিলেটের সকল রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এ ছাড়া, বুধবার সকালে রেস্টুরেন্ট মালিক ও কর্মচারীরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানানোরও আহ্বান জানানো হয়। চেম্বারের বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের বিরুদ্ধে জিন্দাবাজারে সড়ক অবরোধ করেন সিলেটের রেস্টুরেন্ট মালিক ও শ্রমিকরা। তারা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতে করে ওই এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। পরবর্তীতে সেই অবরোধ কর্মসূচিতে গিয়ে শরিক হন চেম্বার নেতৃবৃন্দ। এক পর্যায়ে তারা পরিস্থিতি শান্ত করে বিক্ষুব্ধ রেস্টুরেন্ট মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় নিয়ে যান। রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস প্রদান করলে তারা পরবর্তী দিন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে চলে যায়। ওই রাতেই পুলিশের পক্ষ থেকে চেম্বার নেতৃবৃন্দ ও সিলেট জেলা ক্যাটারার্স গ্রুপের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রশাসন সহ আওয়ামী লীগের নেতারা এবং তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে পরবর্তী কর্মসূচিও প্রত্যাহার করা হয়।

 

সিলেট ক্যাটারার্স গ্রুপের সভাপতি শান্ত দেব জানিয়েছেন; ‘প্রশাসন সহ আওয়ামী লীগের নেতাদের হস্তক্ষেপে আমরা কর্মসূচি থেকে সরে এসেছি। ব্যবসায়ীদের নিরাপদে ব্যবসা করার আশ্বাস প্রদান করায় আমরাও আশ্বস্ত হয়েছি।

 

কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার র‌্যাব’র পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টের গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন সহ মোট ১৩ জনকে আসামি করে ভোক্তা অধিকার সহ কয়েকটি আইনে মামলা করা হয়। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এটিএম শোয়েব, রেস্টুরেন্টের অংশীদার সুজেল আহমদ তালুকদার, মো. ঝুনু চৌধুরী, মো. লুৎফুর রহমান চৌধুরী, মো. কবির আহমদ, শিপন দেব, এড. নিলেন্দু দেব, ইফতেখারুল আলম রুম্মান ও শাহ কয়েছ আহমদকে।

 

এর মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে গতকাল সিলেটের আদালতে হাজির করা হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি আলী মাহমুদ জানিয়েছেন, আদালতে শুনানি শেষে গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে জামিন শুনানি হয়। শুনানিতে বিজ্ঞ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

 

এদিকে র‌্যাব’র মামলায় রেস্টুরেন্টের অংশীদার হওয়ায় চেম্বার সভাপতি এটিএম শোয়েবকে আসামি করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ সম্পর্কিত রেস্টুরেন্টের একটি চুক্তিনামাও মামলার এজাহারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে শোয়েবের নাম থাকায় অন্য অংশীদারদের মতো তাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টের পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য জানিয়েছেন, চেম্বার সভাপতির এখনো রেস্টুরেন্টের অংশীদারিত্ব বহাল রয়েছে। রেস্টুরেন্টের যাত্রার শুরু থেকে তিনি অংশীদার রয়েছেন বলে ওই সদস্য জানান। তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে চেম্বার সভাপতির মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 

সিলেট চেম্বারের সহ-সভাপতি তাহমিন আহমদ জানিয়েছেন, ‘তারা জেনেছেন যে, ওই রেস্টুরেন্টের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে চেম্বার সভাপতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ব্যবসায়ীদের ফোন পেয়ে তিনি ও চেম্বার সভাপতি ওইদিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। পরে যখন দেখলেন রেস্টুরেন্টের বৈধতার কাগজপত্র নবায়ন হয়নি, এরপর তারা চলে এসেছেন। যখন জিন্দাবাজারে রাস্তা অবরোধ করা হয়েছিল তখনো তারা সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে যানজট এড়াতে জিন্দাবাজার থেকে শহীদ মিনারের সামনে চলে গিয়েছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে সিলেট চেম্বারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তাহমিন আহমদ।’

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ