ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গঠন ও আকর্ষণীয় সুযোগগুলো লুফে নেয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে যখন তটস্থ গোটা বিশ্ব তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের নিজের দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেজন্য যৌথ বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সব ধরণের ব্যবসার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার দুবাই এক্সপোর ডিপিওয়ার্ল্ডে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তৃতীয় দিনের নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকালে নিজ আবাসস্থল থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দুবাই এক্সিবিশন সেন্টারে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের যৌথ ব্যবসায়িক ফোরাম গঠনের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, বাংলাদেশকে আপনার ব্যবসার গন্তব্য বানান। আমি আপনাদের সকলকে আশস্ত করছি, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আকর্ষনীয় সুযোগ-সুবিধার জায়গা। বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশে বিশ্বের সেরা গন্তব্য হিসেবে খুঁজে পান তার জন্য বাংলাদেশ উদ্যোক্তাদের নীতিগত এবং অবকাঠামোগত সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমাদের আছে দুর্দান্ত ভূ-কৌশলগত অবস্থান। সকল প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহন রুটের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। এছাড়াও জনবহুল এবং ক্রমবর্ধমান দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং এ অঞ্চলের আশপাশের বাজারগুলোতে উন্মুক্ত প্রবেশ সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধাগুলো বাংলাদেশকে আকর্ষনীয় বিনিয়োগ গন্তব্য এবং ভবিষ্যতের উৎপাদন এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে শ্রমিক পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শ্রমশক্তি কঠোর পরিশ্রমী। এ শ্রমশক্তি সাশ্রয়ী এবং তারা দ্রুত যে কোন কিছু আয়ত্ত করতে পারে। সারা দেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধার সঙ্গে বাংলাদেশের সাড়ে ৬ লাখের বেশি পুরোপুরি দক্ষ ফ্রিলান্সার ডেভেলপার থাকার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলো বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত।
বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কৃষি খাতে উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, উৎপাদনশীলতা এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত নগরায়ণ, শিল্পায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার-উদ্ভাবন-বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে জনগণের প্রযুক্তিগত কানেকটিভিটি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য আমাদের উৎপাদনগুলোকে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে আরও মসৃণভাবে সংযুক্ত করা।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। চামড়া, পরিবেশ বান্ধব পাট-পাটজাত পণ্য, খাদ্য এবং সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদানেও বাংলাদেশ ভালো করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার ৪১৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে শীঘ্রই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত করার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে।
দুবাই প্রান্তে উপস্থিত থেকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জেইয়োদি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি জসিম উদ্দিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরোই।
পরে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ব্যবসায়িক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য এফবিসিসিআই এবং ইউএই চেম্বার্সের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং ইউএই ফেডারেশন অব চেম্বার্সের চেয়ারম্যান ও আবুধাবি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লা মোহাম্মদ আল মাজরোই আমিরাতের পক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।