মনজু চৌধুরী॥ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ইসলাম নগর গ্রামে পাহাড় ধ্বসে এক একসাথে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। নিহত শিশুদের বাড়ি একই গ্রামে পাশাপাশি। তারা চলা ফেরা করতো একসাথে। এমন মৃত্যৃর ঘটনায় নিহত তিন শিশুর বাড়ি ও আস পাশের পুরো এলাকা এখন শোকে নিস্তব্দ।
দাপন কাপনের সব ব্যবস্থা শেষে শনিবার ২৬ মার্চ রাত ১১ টায় ভাটেরা শাহী ঈদগাহ ময়দানে এক সাথে তিন জনের নামাজে জানাযা শেষে পাশাপাশি কবরে মা-বাবার প্রিয় সন্তান গুলোকে রেখে আসেন। মর্মান্তিক এই দূর্ঘটনায় নিহত শিশুদের জানাযা, কাপন-দাফনে উপস্থিত ছিলেন এলাকার সর্বস্থরের মানুষ।
কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নের ইসলাম নগর গ্রামের আব্দুস সালাম ও মনোয়ারা বেগম এর পুত্র নাহিদ ইসলাম (১০) তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল। ওই গ্রামের তসিবুর রহমান ও রায়না বেগমের পুত্র (১৩) নুরুল আমিন সুমন তারা ৪ ভাই ও ৫ বোন। ৪ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট সুমন। নাহিদ ইসলাম ও নুরুল আমিন সুমন লেখাপড়া করতো পার্শবর্তী সাইফুল তাহমিনা আলিম মাদ্রাসায়। একজন ৬ষ্ট শ্রেণী ও অপরজন ৮ম শ্রেণীতে।
একই এলাকার আব্দুল করিম ও রাবেয়া বেগমের পুত্র মোঃ আব্দুল কবির (১০) দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছিল দ্বিতীয়। লেখাপড়া করতো পার্শবর্তী ভাটেরা বদরুল-নুরুল সুন্নী মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীতে। তাদের তিন জনের বাবা দিনমজুর ও মা গৃহীনি। ওই তিন শিশু খেলাধুলা ও চলা ফেরা ছিল এক সাথে।
নিজ গ্রামের রাবার বাগানের পাহাড়ের নীচে ছড়ার পাড় ঘেঁষে গর্ত থেকে তারা এক সাথে মাছরাঙা পাখির বাচ্চা ধরতে গেলে পাহাড় ধসের ঘটনায় মাটি চাপা পরে। মাটি চাপা অবস্থায় তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গ্রামের ভেতর পাশাপাশি তিন বাড়িতে শিশুদের মা-বাবা ও প্রতিবেশীদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। মা-বাবা আর স্বজনরা তাদের স্মৃতিচারণ করে আহাজারি আর শোকের মাতম করছেন। পূরো গ্রামজুড়ে চলছে নিস্তব্দতা।
প্রত্যক্ষদর্শী নিহত নুরুল আমিন সুমন এর বড় ভাই রুহুল ইসলাম জানান, শনিবার দুপুর ১ টার দিকে তার ভাই সহ আরও ২ শিশু একসাথে বাড়ি থেকে বের হয়। বেশ কিছু সময় পাড় হলেও এদের খোঁজ মিলেনি। প্রায় দেড় ঘন্টা পর বাবার বাগানের ভেতর পাহাড়ী ছড়া দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। এ সময় নাহিদ ইসলাম পাহাড় ধ্বসে মাটি চাপা অবস্থায় হাত দেখতে পান। এসময় রুহুল চিৎকার করলে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। গ্রামবাসী মিলে প্রথমে মাটি সরিয়ে উদ্ধার করেন নাহিদ ও কবিরকে। দ্রুত নিয়ে যান ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইজনকে। উদ্ধার কাজ শেষ হলেও তাদের সাথী সুমনের খুঁজ মিলছেনা। পরে আবার গ্রামবাসী একত্র হয়ে মাটি খুঁড়ে ৩-৪ ফুট গভীর থেকে সুমনকে উদ্ধার করা হয়। তাকেও নিয়ে যান ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কর্মরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করেন।
স্থানীয় গ্রামবাসী কামাল উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন ও সামছু উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন সকালে বৃষ্টি হয়েছিল। তারা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ৩ শিশুকে উদ্ধারের পর কেউ বলেন জীবিত আবার কেউ বলেন এরা মৃত। তবুও মন মানেনি পিতা-মাতা ও স্বজনদের তাদের মৃত্যু হয়েছে। দ্রুত নিয়ে যান পার্শবর্তী সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কর্মরত চিকিৎসক তাদের কেই বেঁচে নেই জানালে স্বজনরা ৩জনের লাশ নিয়ে আসেন নিজ গ্রামে। এক একসাথে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুতে নিস্তব্দতা চলে আসে পূরোগ্রামে।
এবিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী মুঠোফোনে জানান মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় সন্তানহারা ৩টি পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে নগদ ৫ হাজার ও উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সরকারি সুযোগ সুবিধাগুলো পর্যায়ক্রমে ওই পরিবারগুলোকে দেওয়া হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *