প্রকাশিত: ১০:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২২
মনজু চৌধুরী॥ মৌলভীবাজারের জেলার বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি পানি সংকটে আবাদকৃত বোরো জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। রোপণকৃত জেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা রয়েছে। অনা বৃষ্টি ও দীর্ঘ মেয়াদী খরার কারণে অধিকাংশ পানির উৎসস্থল ছড়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকদের সেচ পাম্প অনেক স্থানে বন্ধ ছিল। গত দু’দিন এক ফসলা বৃষ্টি হলে এখনও চৌচির হওয়া হাওরের উপরি ভাগের জমি এখনও আগের মতো রয়েছে। এতে করে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গ্রামশ্রীঙ্গলের কৃষক আবজাল হোসেন জানান, ১০৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। কুদালী ছড়া থেকে পানি সেচ নিজের জমিতে দেন। পাশা পাশি অন্যের জমিতে সেচ দেন। কুদালী ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় গত ২০ দিন যাবৎ তার পাম্প মেশিন বন্ধ ছিল। হালকা এক ফসলা বৃষ্টিতে ছড়ায় কিছু পানি জমা হলে তার আবাদের অর্ধেক জমিতে সেচ দিতে পেড়েছেন।
একই এলাকার কৃষক পাবলু মিয়া এবছর ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। স্বপ্ন ছিল ধান বিক্রি করে ঋন পরিশোধ করবেন। কিন্তু সে স্বপ্নে মধ্যে আঁধার নেমেছে দীর্ঘ মেয়াদী খরার কারণে জমি ফেটে ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ায়। তবুও হাল ছাড়েননি, কখন ছড়ায় পানি আসবে আর সেচ পাম্প চালু করে জমিতে পানি দিবেন সে চিন্তায় রাত জেগে থাকতেন।
ওই এলাকার গোবিন্দ সুত্রধর, ১২ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। নিজের ১২ বিঘা জমি সহ অন্যান্য কৃষকের ৫০-৬০ বিঘা জমিতে পাম্প মেশিন চালিয়ে সেচ দিতেন। সেচ কার্যক্রম চালাতে একটি বটগাছের নীচে অস্থায়ী শেড বানিয়ে রাত্রি যাপন করতেন। কুদালী ছড়ায় পানি না থাকায় রাত জেগে পাহারা দিতে থাকেন কখন পানি আসবে। একপর্যায়ে চোখের সামনে জমির ক্ষতি দেখে দুঃশ্চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সিলেট এম.এ.জি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পাহাড় থেকে নেমে আসা কুদালী ছড়া ও ঢেউয়া ছড়ার দুইপাশে এ বছর বোরো ধান আবাদ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। চারা লাগানের পর ছড়া থেকে পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দিয়ে আসছেন কৃষকরা। দীর্ঘ মেয়াদী খরার কারণে ছড়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ পাম্প গুলো বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি মনু নদী প্রকল্প থেকে সেচ ব্যবস্থা চালু হলে তাদের পানি সংকট থাকত না। তাছাড়া আরও অধিক পরিমাণ অনাবাদি জায়গাও চাষাবাদের আওতায় আসত।একই অবস্থা জেলার হাকালুকি, কাউয়াদিঘি, হাইল হাওর ও কমলগঞ্জের আদমপুর, মাধবপুর, ইসলামপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের শতাধিক কৃষকের প্রায় ৩০০ একর বোরো ধানের জমির তলা ফেটে রোপণকৃত চারা নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখে পড়েছেন। এসব কৃষকেরা নিদির্ষ্ট চুক্তিতে জমিতে বোরোধান চাষ করেছিলেন।
আদমপুর ইউনিয়নের কৃষক আবিদ বক্ত,ওয়াসিম মিয়া, গিয়াস মিয়া বলেন, অনেক আশা করে ক্ষেত করছিলাম, এখন পানির অভাবে সব নষ্ট। ধার কর্জা করিয়া ক্ষেত করেছি। হালকা বৃষ্টি হয়েছে, তবুও পানির অপর্যাপ্ততায় ধান গাছগুলো দূর্বল হয়ে পড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, জেলায় গত কয়ে বছর থেকে ধানের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা দামও ভাল পাচ্ছেন। যে কারণে বোরো আবাদের জমি প্রতিবছর বাড়ছে। চলতি বছর বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৬ হাজার ৮‘শ হেক্টর জমি। ধানের দাম ভাল পাওয়ায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ বেড়ে ৫৭ হাজার ৭‘শ ৫০ হেক্টর দাঁড়িয়েছে। এবছর হাওর অঞ্চলের উপরি ভাগে ২৯ হাজার ৯‘শ ৫০ হেক্টর বোরো ধান আবাদ হয়েছে। গত দু‘দিন বৃষ্টি হয়েছে আবাদকৃত বোরো ধানের সহায়ক হবে। এ বছর পোকা মাকড়ের আক্রমন নেই। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা স্থানীয় কৃষকদের ধানের পরিচর্যায় পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, কুদালী ছড়ার ৫ কিলোমিটার খনন কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আরও ৬ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হবে। কুদালী ছড়াকে মনু প্রকল্পের মতো সেচ প্রকল্পের আওতায় নেয়ার জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়েক দফা জরিপকাজও শেষ হয়েছে। তিনি আরও বলেন এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য নেছার আহমদ ও পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমানের সাথে বৈঠক হয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমি আবাদের পরিমান বৃদ্ধি পাবে। এতে ওই এলাকার ফলনের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।স্থানীয় কৃষকদের দাবী কুদালী ছড়াকে মনু প্রকল্পের মতো একটি সেচ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভরাট খাল খনন করা।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech