মনজু চৌধুরী: অবৈধ দখলে জেলার বড় সড়কগুলো দিন দিন ছোট হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন জনসাধারণ। প্রধান সড়কগুলোর গা ঘেঁষেই দোকানঘর। ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের দখলে ফুটপাথ। আর সড়কের ওপরেই ছোট-বড় গাড়ির স্ট্যান্ড। এ কারণে সার্বক্ষণিক লেগে থাকছে যানজট। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অভিযোগের অন্ত নেই। জেলা শহরের মতো প্রতিটি উপজেলা শহর ও হাটবাজারগুলোতেও একই দৃশ্য।
ফলে দীর্ঘ যানজটে নাকাল মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের মাসোহারা দিয়েই সড়কের জায়গায় দোকানঘর কিংবা গাড়ির স্ট্যান্ড করেছেন একটি সিন্ডিকেট।
মৌলভীবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দেখা যায়, সড়কের ওপরেই কার, মাইক্রোবাস, বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টমটমের অবৈধ স্ট্যান্ড। আর ফুটপাথ ফল, কাপড় ও সবজি বিক্রেতাদের দখলে। তাছাড়া বড় দোকানিরাও বড় সড়ক পর্যন্ত তাদের মালের পসরা ছড়িয়ে দখলে রেখেছেন। এতে সড়ক সংকুচিত হচ্ছে। চলাচলে অসুবিধায় পড়ছে মানুষ।
জানা যায়, মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগে ১০টি, চৌমুহনী ও শমসেরনগর রোডে ৫টি, কলেজ পয়েন্টে ২টি, টিসি মার্কেটে ৭টি, চাঁদনীঘাটে ৮টি, কোর্ট পয়েন্টে ২টি, বাজার টার্নিং পয়েন্টে ৩টি ও শহরের ছোট-বড় বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের ওপর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ভাসমান গাড়িস্ট্যান্ড। চাঁদনীঘাটে কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কের ওপর বাস মিনিবাসের স্ট্যান্ড। এতে জেলা শহরের প্রবেশ পথেই যানজটের কবলে পড়েন যাত্রীরা। তাছাড়া পাশেই রয়েছে একাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টমটম স্ট্যান্ড। অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ ও ভাসমান স্ট্যান্ড থেকে ট্রাফিক বিভাগের কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিমাসে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। চালকরা জানান, ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশকে তারা গাড়িপ্রতি মাসে ১৫০-২০০ টাকা দেন। মাসে প্রতিটি স্ট্যান্ড থেকে একসঙ্গে তারা ওই টাকা আদায় করেন। চালক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, সবমিলিয়ে পুরো জেলায় ট্রাফিক পুলিশ মাসে তাদের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকার ওপরে চাঁদা নিচ্ছেন। কোনো মাসে নির্দিষ্ট এই চাঁদা দিতে দেরি হলে ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন সময় রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে দেয়। নানা অজুহাতে আদায় করে দ্বিগুণ টাকা। তারা বলেন, আমাদের স্থায়ী স্ট্যান্ড দিলে ভোগান্তি থাকতো না। তবে বিভিন্ন উপজেলার ট্রাফিক সার্জনগণ মাসিক চাঁদা আর চালক হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, চালকরা তাদের অবৈধ কাজকে বৈধ করতে নানা মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। এ ধরনের কাজে ট্রাফিক পুলিশ কখনো জড়িত নয়।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, সমস্যা সমাধানে আমরা প্রশাসনের সহায়তায় কাজ করছি। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, এমন দৃশ্য সারা দেশের। আমরা সীমিত জনবল নিয়েও তা নিরসনে কাজ করছি। এক্ষেত্রে পৌর মেয়রগণ ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে যানজট এমনিতেই বেড়ে যায়। আমরা জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও জেলা পুলিশ তা নিরসনে কাজ করছি। সেক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।