ডায়াল সিলেট ডেস্ক:: সিলেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পেছনে আরেকটি স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। দেখতে অনেকটা স্মৃতিস্তম্ভের মতো এই স্থাপনা শহীদ মিনারের মূল নকশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আপত্তি তুলেছেন অনেকে।
২০১৪ সালে পুনর্নির্মাণের পর থেকেই সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার শহরের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে এটির চত্বরের নকশা পরিবর্তন করে স্থাপনা নির্মাণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
স্মৃতিস্তম্ভের মতো এই স্থাপনা শহীদ মিনারের নকশার সঙ্গে সংঘর্ষিক হবে এবং এতে এটির সৌন্দর্যহানি ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নতুন স্থাপনা দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা দেখা দিয়েছে। তবে সিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, স্মৃতিস্তম্ভ নয়, ছোটোখাটো অনুষ্ঠানের জন্য মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অবস্থান নগরের চৌহাট্টা এলাকায়। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে একটি মিছিল থেকে ভাঙচুর করা হয় শহীদ মিনারটি। এরপর তা পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।

সিলেট শহীদ মিনারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে সিটি করপোরেশন। ২০১৪ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্যোগে সিসিক ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণ করে।

‘চেতনায় আন্দোলিত ভূমি থেকে জেগে ওঠা বাঙালির আবহমান সংগ্রামী ঐতিহ্য’– এই প্রতিপাদ্যে নতুন শহীদ মিনারের নকশা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শুভজিৎ চৌধুরী। সবুজ টিলাভূমির ওপর সাদা স্মারকস্তম্ভে লাল সূর্যের এই শহীদ মিনারটি নির্মাণের পর থেকেই নজর কাড়ে সবার। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এটিকে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার বলে মন্তব্য করেছিলেন।

এরপর ২০১৯ সালে এক পাশে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানকে একীভূত করে শহীদ মিনারের পরিসর বাড়ানো হয়। ৩৩ শতক জায়গাজুড়ে পুনর্বিন্যাসকৃত শহীদ মিনার কমপ্লেক্সেরও নকশা করেন শুভজিৎ চৌধুরী।

গত মার্চ থেকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পেছনে আরেকটি স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে সিটি করপোরেশন, যা সম্প্রতি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দেখতে অনেকটা স্মৃতিস্তম্ভের মতো এই স্থাপনা মূল নকশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন অধ্যাপক শুভজিৎ চৌধুরী।

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশাকার অধ্যাপক শুভজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যে যে মহাপরিকল্পনা দিয়েছিলাম, এই স্থাপনা তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি দেখতে অনেকটা স্মৃতিস্তম্ভের মতো হচ্ছে।’

শুভজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পেছনের খালি জায়গাটি আমরা নকশায় উন্মুক্ত প্রদর্শনীর জন্য রেখেছিলাম। চিত্রকলা বা এ রকম কিছুর প্রদর্শনীর জন্য এই জায়গা উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। কিন্তু স্থাপনা নির্মাণের ফলে এটি আর উন্মুক্ত থাকছে না।’

নিজের নকশায় পরিবর্তন আনা বা নতুন স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি জানিয়ে শুভজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করাই ভালো।’

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত মনে করেন, নতুন এই স্থাপনা শহীদ মিনারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে এখানে একটি ‘মুক্তমঞ্চ’ নির্মাণ করার বিষয়ে আমাদের জানানো হয়েছে। সাহিত্য আড্ডাসহ ছোটোখাটো অনুষ্ঠান ওই মঞ্চে হবে এবং বড় অনুষ্ঠানগুলো শহীদ মিনারের পাশের মঞ্চে হবে– এমনটিই আমাদের জানানো হয়েছে। তবে স্থাপনার কোনো নকশা আগে আমাদের দেখানো হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এখন যেটি নির্মিত হয়েছে তা দেখতে আরেকটা মিনারের মতো। এটি শহীদ মিনারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মানুষজন এটি দেখে দূর থেকে বিভ্রান্ত হতে পারে।’

রজত বলেন, ‘মুক্তমঞ্চে আমাদের আপত্তি নেই। তবে নকশার থিমটি পরিষ্কার করা দরকার।’
শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষায় নতুন এই স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘সিলেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। এতে অনেক সময় শহীদ মিনার বেদির মর্যাদা রক্ষা করা হয় না। এ কারণে শহীদ মিনারের দক্ষিণ পাশে খালি জায়গায় একটি ‘মুক্তমঞ্চ’ তৈরি করা হচ্ছে। এই মঞ্চে ছোটোখাটো অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে।’
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক সুব্রত দাস ‘মুক্তমঞ্চের’ নকশা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে কেউ কেউ আপত্তি তুলেছেন। আপত্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। শহীদ মিনারের নকশাকার এবং মুক্তমঞ্চের নকশাকারের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়েছে।’
সিলেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পেছনে আরেকটি স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। দেখতে অনেকটা স্মৃতিস্তম্ভের মতো এই স্থাপনা শহীদ মিনারের মূল নকশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আপত্তি তুলেছেন অনেকে।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *