মনজু চৌধুরী:  কুলাউড়া উপজেলার হাওর অধ্যুষিত ভুকশিমইল ইউনিয়নের বড়দল ও কাড়েরা গ্রামে খালের উপর ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু গত ২০ বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে এখন প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। হাকালুকি হাওরে কৃষিকাজের প্রয়োজনে যাতায়াতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৯৭ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সড়কের অভাবে মানুষের কোনো কাজে না আসায় সেতুটি এখন পরিত্যক্ত স্থাপনা হিসেবে পড়ে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৭ সালের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গ্রামীণ অবকাঠামোর আওতায় স্বল্পব্যয়ী সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু এবং এক কিলোমিটার মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে এলাকার কৃষক ও অন্যান্য পেশার সাধারণ মানুষ পাঁচ ছয় বছর এই সেতু ও রাস্তা ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু হাওর এলাকার রাস্তাটির পাশ দিয়ে কোনো রকমের প্রতিরক্ষা দেয়াল না থাকায় কয়েক দফা বন্যায় রাস্তাটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এই রাস্তাটিতে মাটি ভরাট করার জন্য আর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
স্থানীয় বড়দল গ্রামের সেলিম আহমদ, আতিক আকমল, দিলু খাঁ, শাহীন আহমদ, বদরুল ইসলাম, কাড়েরা গ্রামের কনর মিয়া এবং ছকাপন গ্রামের বাবলু আহমদ জানান, আমাদের এই রাস্তাটি কৃষকদের জন্য হাওরে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হওয়ার ফলে সারা বছর চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। সেতুর সঙ্গে বড়দল-ছকাপন সংযোগ সড়ক না থাকায় আমাদের ভারী কৃষিজ পণ্য ও গৃহপালিত পশু নিয়ে অনেক কষ্টে খাল পারাপার হতে হয়। বন্যায় রাস্তাটি অনেক আগে ধসে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর আর কোনো জনপ্রতিনিধি রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ নেননি।
স্থানীয়রা আরও জানান, এই রাস্তা ও সেতুটি সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ করা হলে হাওরে যাতায়াত সহজ হবে।
ভূকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন, ‘সেতু যেহেতু আছে সেখানে রাস্তা করা খুবই জরুরি। আমি রাস্তার কিছু অংশ কাজ করিয়েছি। এই রাস্তাটি করতে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন। এই মুহূর্তে বরাদ্দ কম। সেতুটি বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়েছে। রাস্তা নির্মাণ করলেও এর কোনো সুফল আসবে বলে মনে হয় না। তাই সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করা প্রয়োজন।’
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী জানান, বিষয়টি জেনেছি। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন খাত টিআর ও কাবিখা প্রকল্প থেকে এই রাস্তাটি নতুন করে মেরামত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কুলাউড়া কার্যালয়ের প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘গ্রামীণ অবকাঠামোর সড়ক ও সেতুর বিষয়ে আমরা সরাসরি কোনো প্রকল্প নিতে পারি না। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডিও লেটারের মাধ্যমে চাহিদা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারব।’
কুলাউড়ার (মৌলভীবাজার ২ আসনের) সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘কুলাউড়া এলজিইডি কার্যালয়ের প্রকৌশলী সেতুটি সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের চাহিদা চাইলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *