লিবিয়ায় ৫ শতাধিক বাংলাদেশিকে আটক

প্রকাশিত: ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২২

লিবিয়ায় ৫ শতাধিক বাংলাদেশিকে আটক

 

ডায়ালসিলেট :: ভূমধ্যসাগর উপকূল থেকে এক ঝটিকা অভিযানে ৫ শতাধিক বাংলাদেশিকে আটক করেছে লিবিয়ান পুলিশ। ত্রিপোলির পূর্ব উপকূলীয় জেলা মিসরাতা থেকে অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতিকালে তাদেরকে আটক করা হয়।

 

লিবিয়া পুলিশের বরাতে ত্রিপোলির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এ খবর প্রচার করেছে। এসময় লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এসএম শামীম উজ জামান আটকের সত্যতা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

 

তিনি বলেন, আটক এখন নিত্যদিনের ঘটনা। লিবিয়ান টিভি আল-আহরারের খবরে বলা হয়, ওই অভিযানে বাংলাদেশিসহ প্রায় ৬০০ অভিবাসী আটক হন। তারা আটককৃতদের একাধিক ছবি ও ভিডিও রিলিজ করেছে। মিসরাতা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। মিসরাতা সিকিউরিটি ডিরেক্টরেট পরিচয়ে প্রচারিত এক বার্তার ট্রান্সলেশনে দেখা যায়, তিনি বলেছেন, ৬০০’র মতো অবৈধ অভিবাসী সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন সময় তাদের আটক করা হয়।

 

আটকদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। তারা জারিখ উপকূল থেকে নৌকাযোগে ইউরোপের উদ্দেশ্যে রওয়ানার প্রস্তুতিতে ছিলেন। জানা যায়, শনিবার সাগর পাড় থেকে আটক অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি থাকায় তাৎক্ষণিক দু’জন কর্মকর্তাকে ডিটেনশন সেন্টার ফলোআপের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা আইওএম এবং স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন।

 

আটক অভিবাসীদের একটি অংশকে ত্রিপোলী নিয়ে আসা হয়েছে জানিয়ে দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, লিবিয়ান পুলিশ যে তথ্য শেয়ার করেছে তাতে মোট ৫৪১ জন আটকের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন মর্মে প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয়েছে। ওই টিম রোববার ২৪০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল শামীম উজ-জামান।

 

পরে দূতাবাস টিম তাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। চুড়ান্ত রিপোর্ট আসার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে তাতে কতোজন বাংলাদেশি রয়েছেন।

 

নাগরিকত্ব যাচাই শেষে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের মার্চে লিবিয়ার পশ্চিম উপকূলে চারটি নৌকা থেকে ৬০০ শরণার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। সেই দলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি থাকলেও বেশির ভাগই ছিলেন আফ্রিকার সাব সাহারান অঞ্চলের। বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত জীবনের আশায় শরণার্থীরা পাড়ি জমাচ্ছেন ইউরোপে। তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। লিবিয়ার পাচারকারীদের মাধ্যমে শরণার্থীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছে।

 

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম বলছে, চলতি ২০২২ সালের প্রথম ৩ মাসে ডজনখানেক অপারেশনে ভূমধ্যসাগর থেকে ৪ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার এবং আটক করেছে। যার মধ্যে ৩৮১ জন নারী এবং ১৬৯ শিশু রয়েছেন। আইওএম-এর রিপোর্ট মতে, ২০২১ সালে ৩২ হাজার ৪ শ’ ২৫ অবৈধ অভিবাসীকে লিবিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের একমাত্র টার্গেট ছিল ইউরোপে পাড়ি জমানো। ওই বছরে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া রুট থেকেই ৬৬২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আর ওই রুটে মিসিং বা সলিল সমাধি ঘটেছে ৮৯১ জনের। উল্লেখ্য, যুদ্ধ বিধ্বস্ত লিবিয়ায় দীর্ঘ ৪ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা ২০১৬ সালের ওই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়েছিল।

 

কিন্তু আদালত মন্ত্রণালয়ের নোটিশের পক্ষেই রায় দেন। ফলে এটি এতদিন বহাল ছিল। চলতি বছরের সূচনাতে জনস্বার্থ বিবেচনায় ওই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। এরপর থেকে দেশটিতে কর্মসংস্থান ভিসা নিয়ে অনেকেই যেতে পারছেন। দূতাবাস সূত্র বলছে, ওই বাংলাদেশিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ লিবিয়াতে কর্মসংস্থান না খুঁজে বরং সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টাই করছেন।

 

আর এ কারণে গত ৩ মাসে ৫ শতাধিক বাংলাদেশিকে সাগর থেকে উদ্ধার করে আইওএম’র স্পন্সর টিকিটে দেশে ফেরাতে হয়েছে।

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ