আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিনে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর আয়োজিত এক কনসার্টে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ৬০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে দেশটির প্রখ্যাত শিল্পী ও গায়করাও রয়েছেন। সোমবার স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেশী থাইল্যান্ড থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি টনি চেং বলেছেন, কাচিনের কানসি গ্রামে হামলায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর তিনটি বিমান জড়িত বলে জানা গেছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে তিনি বলেন, হামলার পর ঘটনাস্থলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে। সেখানে প্রচুর ধ্বংসাবশেষ… খোলা মাঠজুড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া যানবাহন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এই হামলায় অন্তত ১০০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
চেং বলেন, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিনের শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশনের (কেআইও) ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসাবে শিল্পীরা মঞ্চে পারফর্ম করার সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে কাচিনের অত্যন্ত প্রখ্যাত কয়েকজন গায়কও আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গত কয়েক দশক ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে কেআইও। গত বছরের ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থনও জানিয়েছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠী।
তবে সোমবারের হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কেআইওর কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। চেং বলেছেন, সূত্র অনুযায়ী, আহতদের এলাকা ছেড়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সেনাবাহিনীর সদস্যরা কানসি গ্রামের চারপাশে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে এলাকা বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আহতদের অনেকেরই জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
গত বছরের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের প্রতিষ্ঠিত নির্বাসিত জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। জাতীয় ঐক্য সরকারের একজন মন্ত্রী আলজাজিরাকে বলেছেন, সোমবারের এই হামলার ঘটনা বেসামরিকদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলার আরেকটি উদাহরণ।
চেং বলেছেন, গত কয়েক মাসের হামলার ধরনগুলোর মতোই মনে হচ্ছে কাচিনের এই হামলা। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিমান শক্তি ব্যবহার করে বিমান হামলা চালাচ্ছে; যা লাখ লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির ক্ষমতা সামরিক বাহিনী দখলে নেওয়ার পর থেকে সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। তখন থেকেই সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশটির হাজার হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দেখিয়ে আসছে। কিন্তু দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায়ই অভিযান চালিয়ে সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হত্যা করছে।
মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিকরা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) অংশ হিসাবে দেশজুড়ে সশস্ত্র শাখা গঠন করেছে।
মিয়ানমারের স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস বলছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ৩৭০ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে জান্তা বাহিনী। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও ১৫ হাজার ৯০০ জনের বেশি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *