সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: বিরল রোগে আক্রান্ত আট মাস বয়সী শিশু সন্তান আয়াত হককে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি ও সহায়তা কামনা করেছেন সিলেট নগরীর মেজরটিলার বাসিন্দা জুনেদ হক ও ফারজানা আক্তার। শনিবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা এ আকুল আবেদন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট নগরের মেজরটিলা ইসলামপুর ব্লক সি-এর ৭৯ নং বাসার বাসিন্দা মোহাম্মদ জুনেদ হক ও ফারজানা আক্তার দম্পতি জানান, তাদের ৮ মাস বয়সী মেয়ে আয়াত হক ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) নামক বিরল রোগ আক্রান্ত। জন্মের কিছুদিন পরই তারা লক্ষ্য করেন, তাদের মেয়ের হাত-পা অস্বাভাবিক নরম এবং সেগুলো নাড়াতে পারছে না। ঘাড় শক্ত না থাকায় সেটিও সোজা করতে পারছে না। পাশাপাশি শ্বাস নিতেও তার কষ্ট হয়। আয়াতের মা-বাবা জানান, প্রথমে তারা সিলেটের কয়েকজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে মেয়েকে নিয়ে যান। পরে তাদের পরামর্শে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার ‘মেডেস্ক’ নামক বেসরকারি হাসপাতালের ডা. মিজানুর রহমানের শরণাপন্ন হন।
আয়াতের মা-বাবা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাথমিক চেকআপের পর ডা. মিজান জানান আয়াত ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাটরোফি’ বা ‘এসএমএ’ নামক বিরল রোগে আক্রান্ত। এসময় তিনি কয়েকটি পরীক্ষা করাতে বলেন। এর মধ্যে ভারত থেকে ‘এসএমএ’ রোগ শনাক্তের পরীক্ষা করিয়ে তিনি আমাদের তিনি নিশ্চিত করেন – আয়াত ‘এসএমএ’ রোগেই আক্রান্ত। এবং রোগটির মারাত্মক ধরন টাইপ ওয়ানেই আছে সে। এক থেকে দুই বছরের মধ্যে চিকিৎসা না করালে আয়াতকে আর বাঁচানো সম্ভব নয়। চিকিৎকদের বরাত দিয়ে ’এসএমএ’ রোগে আক্রান্ত আয়াত হকের মা-বাবা সাংবাদিকদের জানান, পেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মোটর নিউরোন, সেটি নষ্ট হওয়াই জিনঘটিত এই বিরল রোগের কারণ। আর এ রোগের কোনো ওষুধ বাংলাদেশে নেই।
আয়াতের মা-বাবা বলেন, চিকিৎসক আমাদের জানিয়েছেন, ২২ কোটি টাকার মূল্যের ’জিন থেরাপি’র একটি ইনজেকশনই ’এসএমএ’ রোগের একমাত্র চিকিৎসা। আন্তর্জাতিক বাজারে একটি কোম্পানি কয়েক মাস আগে এর ওষুধ বাজারে নিয়ে এসেছে। এছাড়াও এ রোগ নিরাময়ে ‘রিসডিপ্লাম’ নামের মুখে খাওয়ার ওষুধ রয়েছে। তবে প্রতি মাসে খাওয়াতে হয় ১০ লাখ টাকার ওষধু। আর খাওয়াতে হয় আজীবন। যার ব্যয় বহন করা আমাদের কল্পনারও বাইরে। তাই আমরা আমাদের বুকের আদরের ধনকে বাঁচাতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও সহায়তা চাইছি।
সংবাদ সম্মেলনে জুনেদ হক ও ফারজানা আক্তার জানান, ডা. মিজানুর রহমানের পরামর্শে তারা আয়াতকে নিয়ে যান ‘এসএমএ’ রোগ বিশেষজ্ঞ ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজির চিকিৎসক ডা. জোবায়দা পারভিনের কাছে। ‘নোভার্টিস’ নামক বিদেশি ওষুধ কোম্পানি প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে বিশ্বের ‘এসএমএ’ আক্রান্ত দুই শিশুকে ২২ কোটি টাকা দামের ‘জোলগেনসমা’ নামের ইনজেকশনটি বিনামূল্যে দিয়ে থাকে জানতে পেরে ডা. জোবায়দা পারভিনের পরামর্শে ‘নোভার্টিসে’র আবেদন করেন। আয়াতের বাবা-মা চোখে জল নিয়ে বলেন, প্রতি বছর মাত্র দুই শিশুর নাম তোলা হয় লটারিতে। এখন লটারিতে আমাদের আয়াতের নাম উঠবে কি না সেটা তো বলা যায় না। যদি না উঠে তবে কি চোখের সামনেই আমাদের সন্তান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে? মা-বাবা হয়ে সে দৃশ্য আমরা সহ্য করবো কীভাবে? আমার আয়াত যখন শ্বাসকষ্টে ভোগে তখন কষ্টে আমাদের বুক ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। অনেক সময় ৩-৪ মিনিট পর্যন্ত সে স্বভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে না। আমরা তখন অসহায়ের মতো ছটফট করি।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জুনেদ হক ও ফারজানা আক্তার দম্পতি বলেন, আমাদের ‘কিডনিসহ সকল সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করেও তো ২২ কোটি টাকার ব্যবস্থা করতে পারবো না। আমরা দেশের মানুষ জানি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন মানবিক সরকারপ্রধান। মানবিকতার ক্ষেত্রে তিনি অনন্য। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস- একমাত্র আমাদের প্রধানমন্ত্রী যদি চান তবে ফান্ড তৈরি করে আমার আয়াতসহ এই বিরল রোগে আক্রান্ত দেশের শিশুদের তিনি বাঁচাতে পারেন। আমরা আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সিলেট ও প্রবাসে থাকা সিলেটি বিত্তশালী ব্যক্তিদের।