গ্যাস নিতে এক কিলোমিটার দীর্ঘ সারি, রাত জেগে ভুগান্তি সিএনজি চালকদের

প্রকাশিত: ১১:০৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩

গ্যাস নিতে এক কিলোমিটার দীর্ঘ সারি, রাত জেগে ভুগান্তি সিএনজি চালকদের

মনজু বিজয় চৌধুরী: মৌলভীবাজারে কয়েক মাস যাবত মাসের শেষ সাপ্তাহ থেকে লিমিট শেষ হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন। এতে জেলা সদর ও আশপাশের উপজেলার ফিলিং স্টেশন গুলোতে অন্তত ৫ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত গ্যাস বন্ধ থাকছে।

জেলা সদর, রাজনগর ও শ্রীমঙ্গলসহ তিনটি উপজেলায় মোট ৯টি পাম্পের মধ্যে মৌলভীবাজার সদরের ২ থেকে ৩টি পাম্পে গ্যাস সর্বরাহ চালু থাকলেও পুরো জেলার চাপ মোকাবেলা করতে হচ্ছে চালু থাকা পাম্পগুলোকে। তবে মাসের প্রথম দিকে সবগুলো পাম্প পুনরায় চালু হলে ফের শুরু হয় গ্যাস সর্বরাহ। ফলে মাসের দুই থেকে তিন সাপ্তাহ গ্যাস সর্বরাহ সাভাবিক থাকায় ওই সময়ের জন্য চালকদের তেমন একটা ভুগান্তিতে পড়তে হয় না।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় মৌলভীবাজার শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থিত মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান ফিলিং স্টেশন,শ্রীমঙ্গল সড়কের জগন্নাথপুর এলাকার মেসার্স রহমান ফিলিং স্টেশন ও মাজ ফিলিং স্টেশনসহ তিনটি ফিলিং স্টেশনেই গ্যাস নিতে প্রতিটি স্টেশনের সাথে যুক্ত সড়ক জুড়ে প্রায় এক কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সারি।

প্রতিটি সারিতে হাজারো গাড়ি চালক ঘন্টার পর ঘন্টা তপ্ত রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন গ্যাস নেয়ার জন্য। অনেকের আবার ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে গ্যাস সংগ্রহ করতে। প্রতি মাসের ২০ তারিখের পর থেকেই শুরু হয় এই সমস্যা। চলে সাপ্তাহ পর্যন্ত। এমনিতেই সরকারের বেঁধে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত গ্যাস সর্বরাহ বন্ধ থাকে পাম্প গুলোতে।

এই বন্ধ থাকা সময়েই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাড়ি চালকরা গ্যাস নেয়ার জন্য পাম্প গুলোতে আগেবাগেই লাইনে দাঁড়ান। এর পর শুরু হয় অপেক্ষার পালা। রাত ১১টায় যখন পাম্প গুলো গাড়িতে গ্যাস দেয়া শুরু করে তখন থেকে গ্যাস সংগ্রহ করতে বেশিরভাগ গাড়ি চালকদের অপেক্ষা করতে হয় ভোর পর্যন্ত।

এতো অপেক্ষার পর ভোরে গ্যাস সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও রাত জেগে থাকার কারনে পরদিন চোখে ঘুম নিয়ে অধিকাংশ গাড়ি চালকরা গাড়ি বন্ধ রাখলেও কেউ কেউ সংসারের ব্যায় মিটাতে হিমশিম খাওায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে বেরিয়ে পড়েন গাড়ি নিয়ে।

এদিকে পাম্প গুলো থেকে গ্যাস সংগ্রহ করতে আসা গাড়ি গুলোর মধ্যে কার, মাইক্রোবাস, ছোট পিকআপের পাশাপাশি অধিকাংশই গাড়ি গুলোই সিএনজি চালিত অটোরিকসা আর টমটম। প্রতিটি পাম্পের পাশের সড়কে অন্তত হাজারেরও বেশি হবে অপেক্ষমাণ গাড়ির সংখ্যা। দীর্ঘ সময় সারিবদ্ধ গাড়ি গুলো মূল সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আঞ্চলিক ও দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলে তৈরি হচ্ছে ঝুঁকি। ফলে যেকোন সময় ঘটতে পারে দূর্ঘটনা।

শ্রীমঙ্গল সড়কের মাজ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার শাহ আলম জানান,চুক্তি অনুযায়ী আমাদের পাম্প মাসে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার কিউ ঘণমিটার গ্যাস পাচ্ছে। তবে মাসের প্রথম দু’সাপ্তাহ গাড়ির চাপ কম থাকায় পুরো মাস জুরে গ্যাস সর্বরাহ সাভাবিক আছে। না হলে আমাদের পাম্পও অন্যান্য পাম্পের মতো বন্ধ থাকতো। বন্ধ হওয়া পাম্প গুলো সম্পর্কে তিনি জানান,চুক্তি অনুযায়ী লিমিট শেষ হওয়ায় বন্ধ,তবে তিন থেকে চারদিন পর বন্ধ হওয়া পাম্প গুলোতে গ্যাস সর্বরাহ স্বাভাবিক হলে গাড়ির দীর্ঘ লাইন আর থাকবেনা।

মাজ সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস নিতে অপেক্ষা করছেন সিএনজি চালক আব্দুল মুহিত লেখন, আলাপকালে তিনি বলেন,ভোর থেকেই অপেক্ষায় আছি,এখন দুপুর আড়াইটা। গ্যাস পেতে আরো ৫ থেকে ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। এতো অপেক্ষার পরও গ্যাস পাবো বলে খুব একটা আশা নেই, কারণ সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাম্প বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন,এমন পরিস্থিতিতে গাড়ি চালানোর আগ্রহ কমে যাচ্ছে,বিকল্প কোন কাজের প্রতিও ঝুঁকতে পারছিনা। লাগামহীন দ্রব্যমূল্য’র এই সময়ে এভাবে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন এই পরিবহন শ্রমিক।

মৌলভীবাজার জালালাবাদ গ্যাস টি এ্যান্ড ডি সিস্টেম লিমিটেড আঞ্চলিক বিতরণ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ ছানোয়ার হোসেন জানান,আমাদের এখান থেকে পাম্প গুলোতে গ্যাস সর্বরাহে কোন ঘাটতি নেই। মূলত পাম্প গুলোর মধ্যে সমন্নয়হীণতার কারণেই এই পরিস্থিতি। সমন্নয় হলে উন্নতি হবে। তিনি বলেন, পাম্প গুলোতে গ্যাসের সর্বরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নতুন কোন নির্দেশনা পেলে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ