প্রকাশিত: ৭:১৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
ডায়ালসিলেট ডেস্ক: অনিয়ম আর ভোগান্তির আরেক নাম মৌলভীবাজারের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিস। স্বাভাবিক নিয়মে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের পর তা হাতে পেতে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস, লেগে যায় বছর। বাধ্য হয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে তাই দালালের কাছে যেতে হয়— এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সকালে মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টায়ও উপস্থিত হননি অধিকাংশ কর্মকর্তা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আসতে থাকেন গ্রাহকরা। এক সময় অফিসের বাইরে শুরু হয় মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের নম্বর প্লেট বসানো। অফিসের সহকারী পরিচালক মো. ডালিম উদ্দিন ও মোটরযান পরিদর্শক শেখ ওয়াহিদ নিজ নিজ কেবিনে বসে সময় পার করছেন। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কয়েকজন দালাল প্রতিনিয়ত তাদের কাছে ফাইল নিয়ে যাচ্ছেন।
কেবিনের বাইরের ডেস্কে বসা এক কর্মকর্তার কাছে লাইসেন্স তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে যান। খরচ কত হবে— জিজ্ঞাসা করলে বলেন, স্যারের সঙ্গে কথা বলে আপনাকে জানাব।
গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ ফিটনেসহীন যানবাহনের ফিটনেস সনদ, অযোগ্য লোককে চালকের সনদ দেওয়াসহ সব কাজই করা হয় এ অফিসে। টাকার বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে এসব কাজ করা হয় প্রকাশ্যেই।
বিআরটিএ অফিসের বাইরে বসে অপেক্ষা করছেন প্রায় ১৫ জন সেবাগ্রহীতা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে এসেছেন। কিন্তু সার্ভারের সমস্যা দেখিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হচ্ছে না। তাদের মতো অনেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন।
জায়েদ আহমদ নামের এক সেবাগ্রহীতা বলেন, ২০২০ সালে লার্নার করেছিলাম। কয়েকবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি। কিন্তু ফলাফলের তালিকায় গিয়ে দেখি আমার নাম নেই। কয়েকবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সমাধান হয়নি। শেষমেষ দালালকে তিন হাজার টাকা দিয়ে পরীক্ষায় পাস করতে হয়েছে। তিন বছর ঘুরে আজ ফিঙ্গার দিতে এসেছি।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আব্দুল্লাহ বলেন, রাস্তায় গাড়ি নামাতে হলে দরকার ফিটনেস সার্টিফিকেট। চালকের প্রয়োজন ড্রাইভিং লাইসেন্স। এসবের জন্য লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মৌলভীবাজার বিআরটিএ কার্যালয়ে হালকা ও ভারী যানের লাইসেন্স পেতে প্রকারভেদে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগলেও ঘুরতে হয় বছরের পর বছর।
ভুক্তভোগীরা জানান, বিআরটিএ অফিস ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি সক্রিয় দালাল চক্র। কেউ বৈধ পন্থায় কিছু করতে গেলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। উল্টো পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। এদিকে, দালাল ধরে কাজ করতে প্রয়োজন সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ। দালালরা অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লবিং করে কাজ করে দেন।
অফিসের বাইরে জটলা করে ড্রাইভিং লাইসেন্সের গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় রিপন আহমদ নামের এক দালালকে। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে লাইসেন্স তৈরির কথা বললে তিনি বলেন, আমাকে দিয়ে করালে তিন মাসের মধ্যেই লাইসেন্স হয়ে যাবে। পেশাদার লাইসেন্সের জন্য নিজ খরচে সিলেটের আখালিয়ায় ডোপ টেস্ট করাতে হবে। বাকি সব কাজ আমাদের প্যাকেজের ভেতরে। ‘পেশাদার’ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লাগবে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। পরীক্ষায় শুধু অংশগ্রহণ করলেই হবে। ‘অপেশাদার’ করাতে লাগবে ১৫ হাজার টাকা। ড্রাইভিং পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী বলেন, প্রতি মাসে বার ভবনের পাশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু দেখা গেছে অনেকেই সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন না। অথচ পরবর্তীতে তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব (মোটরযান পরিদর্শক) শেখ ওয়াহিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘অফিসে আসেন। অফিসে বসেই সব বিষয়ে কথা হবে।’
জেলা বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক মো. ডালিম উদ্দীন বলেন, জেলায় সবমিলিয়ে প্রায় ৩৬ হাজার লাইসেন্সধারী আছেন। তবে সঠিক পরিসংখ্যান পেতে হলে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন সবকিছু তো অনলাইনে হয়ে গেছে। সেবার মান দিন দিন বাড়ছে। অফিসে কোনো দালাল নেই। অনৈতিক লেনদেনেরও কোনো সুযোগ নেই।’
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech