সঠিকভাবে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিয়েই চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয় লাউয়াছড়া বনাঞ্চল এলাকায় ট্রেনের গতিসীমা ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। বনবিভাগের দাবির প্রেক্ষিতেই এ গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেটে ১০ থেকে ১২টি ট্রেন চলাচল করে। গত পাঁচ বছরে ৩৬টি প্রাণী এই উদ্যানের রেলপথে দুর্ঘটনায় মারা গেছে এবং অসংখ্য প্রাণী আহত হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে আহত হওয়া একটি মায়া হরিণ ট্রেন থামিয়ে জবাই করে হত্যা করে রেলকর্মীরা।
লাউয়াছড়ার আশপাশের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়কে বালু নিয়ে অন্তত ২০-২৫টি ট্রাক দ্রুতগতিতে যাতায়াত করে। একই সঙ্গে পর্যটকবাহী গাড়িগুলোও দ্রুতগতিতে আসা-যাওয়া করে। লাউয়াছড়ায় যে পরিমাণ বাঁক রয়েছে, তাতে দ্রুতগতির যানবাহন কন্ট্রোল করতে গিয়েই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।
গতবছর বন বিভাগ বলেছিল ২০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কের উভয়পাশে চেকপোস্ট বসাবে। কিন্তু এক বছর হয়ে গেলেও কোন উদ্যোগ নেই।
পরিবেশবাদী সংগঠন কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহাদ মিয়া বলেন, লাউয়াছড়ায় সড়কে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু রক্ষায় এক বছর আগে যানবাহনের গতি ২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কেউই তা মানেনি। এ সড়কে এখনও দ্রুতগতিতে যান চলাচল করে। এরইমধ্যে চলতি বছর রেললাইনেও ট্রেন চলাচলে ২০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ হল। তবে শুনেছি রেলবিভাগ বলছে বনের ভেতরে গতি কম থাকলে ট্রেন চলাচলে সমস্যা হবে। এসব না করে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে আন্ডারপাস কিংবা অভারপাস সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হলে ভালো হত।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, সড়ক ও রেলপথে বন্যপ্রাণী মৃত্যু ঠেকাতেই আমাদের এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্ত যানবাহনের চালকেরা তা না মেনেই দ্রুত গতিতে গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করছেন। বাইপাস সড়ক নির্মাণ না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।