মনজু বিজয় চৌধুরী॥ মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে শ্বেতসেতে প্রায় প্রতিটি ভবন,ঝুকিপুর্ন ভবন,টিন সেটের ভবন,নতুন শিক্ষকদের পদ সৃষ্টি না হওয়ায় গত কয়েক বছর থেকে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। এক সময়ে ভাল ফলাফলে এ কলেজটি সিলেট বিভাগে সেরা ছিল কিন্তুু এখন সেটি আর আগের মতো নেই। ১৮৫৬সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি সরকারিকরণ হয় ১৯৮০সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই কলেজটি সিলেট বিভাগের মধ্যে মৌলভীবাজার সরাকরী কলেজ স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কলেজের সবচেয়ে বড় ভবনের শ্রেণিকক্ষের ছাদের বিভিন্ন সাথানে ভেঙে পড়েছে। দোতলার ছাদ ভেঙ্গে একের পর এক অংশ ভেঙে পড়েছে কয়েক বছর আগে। শুধু তাই নয় পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হলেও ঝুকি নিয়ে এখনো পাঠদান চলছে। বর্তমানে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা নিয়েও কলেজে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক এবং ১ম পর্ব নিয়মীত ৩টি ও শেষ পর্ব ১২টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে। মঞ্জুরিকৃত শিক্ষকের ৮৪টি পদের মধ্যে বর্তমানে ২২টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে বাংলা,ইংরেজি,অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান,দর্শনও সহকারী,ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, হিসাব বিজ্ঞান,সহকারী,পদার্থ বিজ্ঞান,উদ্ভিদ,আইসিটি বিজ্ঞান বিভাগসহ ২২পদ শূন্য। কলেজের দুটি বড় ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় অন্য সব কক্ষে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া প্রতি বিষয়ে ৪জন করে শিক্ষকের পদ থাকলেও কোনো কোনো বিষয়ে শিক্ষক আছেন ১জন। এতে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষার্থীরা ক্লাস না করতে পারলেও অংশ নিতে হচ্ছে পরীক্ষায়। ফলে ভালো ফলাফল করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র পাঠাগার ভবন না থাকায় একটি কক্ষে লাইব্রেরীর কার্যক্রম চলছে। ১শত আসনের ২টি ছাত্রীনিবাসে ২শত ছাত্রী এবং ৬৮আসনের ১টি ছাত্রাবাসে শতাধিক ছাত্র বসবাস করছে। পাশাপাশি দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ৩০বছরের পুরনো ১টি বাস থাকলে ও বেশীরভাগ সময় বিকল রয়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মীত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না।
১৯৫৬সালে স্থাপিত ঐহিত্যবাহী মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ ১৮হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে নানামুখী সংকট আর সমস্যা নিয়েই চলছে বছরের পর বছর। চায়ের রাজধানী খ্যাত ও হাওর-বাহরের জেলায় সমৃদ্ধ প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ এ কলেজটি। শিক্ষক,শ্রেণিকক্ষ ও পরিবহন সংকটের কারণে পাঠদান কার্যক্রমে মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এ কলেজে সময়মতো ক্লাস করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। একদিকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা অন্যদিকে ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও।
ছাত্র/ছাত্রীরা কলেজের নানা সমস্যা এবং পড়ালেখার বিঘ্র নিয়ে ক্ষোব প্রকাশ করে বলেন-
পরীক্ষার সময় হঠাৎ বিকট শব্দে আতঙ্কে লেখা বন্ধ করে ফেলি। পুরনো ভবনের দোতলায় ক্লাস করতে যাই না ভয়ে। কলেজের অবকাঠামোগত সংকট ও শিক্ষক সংকটের কারণে তারা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছে না। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক শিক্ষার্থী কলেজে এসে ক্লাস না করে বাড়ি ফিরে যায়। কলেজে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা কম,তাই নিয়মিত সব ক্লাস হয় না। কলেজে আসলেও শিক্ষক সংকটের কারণে ক্লাস হয়না। যার কারনে নিয়মিত ক্লাসে আসতে ভালো লাগে না। আবার কিছু কিছু শিক্ষক ক্লাসে না এসে বাসায় কোচিং নিয়ে ব্যস্থ থাকেন।প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। একটি বেঞ্চে ৫-৬ জন শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে বসার কারণে প্রচন্ড গরম লাগে। তাই ক্লাসে স্যারের লেকচারে মনোযোগী হতে পারি না। জেলার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। কলেজে পড়ালেখার মান উন্নয়নের জন্য ভালোমানের পাঠাগার নেই। ক্লাস হোক বা না হোক আমাদের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। যার কারনে ভালো ফলাফল আশা করতে পারছি না আমরা। একাধিক বিষয়ে অনার্স-মাস্টার কোর্স চালু আছে। তবে বিষয়ভিত্তিক হিসেবে ভবন প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
কলেজের সমস্যা ও সংকট নিয়ে প্রফেসর আব্দুল মালিক ও মো: রফি উদ্দিনসহ আরো অনেকে জানান-
অবকাঠামো সংকটের কারণে দূরের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছে না। ভালো কলেজ হিসেবে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের খ্যাতি থাকায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়। আসন সংখ্যার অধিক শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করতে আসে। কিন্তু অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে পাঠদান কার্যক্রম চালানো যায় না। কলেজের ১৯৬০সালে নির্মিত অতি পুরনো দুটি বিল্ডিং শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অন্য রুমে ক্লাস করাচ্ছি। এতে গাদাগাদি করে বসায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই একজন শিক্ষক ক্লাস শেষ করার সাথেই অন্যক্লাস নিতে হচ্ছে। সবোপুরী এই কলেজে শিক্ষক ও ভবন সংকট নিরসনে সরকারের সু দৃষ্টি কামনা করি।
দেবাশীষ দেবনাথ, অধ্যক্ষ, মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ বলেন- শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটে সঠিক শিক্ষাদানে অসহায়ত্ব প্রকাশ ও জোড়ালে দাবী জানিয়ে নানা সংকটের কারণে ঐতিহ্যবাহী কলেজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারছেন না। সংকট সমাধানে ইতি মধ্যে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ কলেজটি শিক্ষার্থীর সংখ্যায় (১৮হাজার) সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড়। ভালো কলেজের খ্যাতি থাকায় আসন সংখ্যার অধিক শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করতে আসে। ১৮/১৯হাজার শিক্ষার্থীর ১৪টি বিষয়ে অনার্স ও ১২টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু থাকলেও শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান করাতে পারছি না। পাশাপাশি শিক্ষক ৮৪টির স্থলে ২২টি পদ শুন্য রয়েছে। শিক্ষক সংকট থাকায় বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করাতে হচ্ছে। পুরোনো ড্যামেজ ভবন ভেঙ্গে নতুন একটি ৫তলা ভবণ নির্মাণ হলে শ্রেণিকক্ষ সংকট কিছুটা কমবে। আর এতিহ্যবাহী এ কলেজের সুনাম ধরে রাখা সম্বব হবে।
ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার সরকারী কলেজের পরিত্যক্ত (ড্যামেজ) ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন,শিক্ষক ও শ্রেণী কক্ষ সংকট সমাধান হলে আগামীতে আরোও ভালো ফলাফল সম্ভব এমনটাই প্রত্যাশা জেলাবাসীর।
