ডায়াল সিলেট ডেস্ক ॥ মাইকিং ও শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ জুড়ীবাসী। ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, জুড়ী উপজেলা শহরে তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ও চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এগুলোতে বিভিন্ন ডাক্তার রোগী দেখেন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। সিনএজি অটোরিক্সা ও ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় মাইক লাগিয়ে সকাল ৮/৯ টা থেকে প্রচারণা শুরু হয়। অডিও রেকর্ড বাজাতে বাজাতে প্রচারণার গাড়িগুলো ছুটে চলে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গ্রামের রাস্তা তো বটেই বাড়ীর রাস্তায়ও এ গাড়ীগুলো প্রবেশ করে।

হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছাড়াও কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার উদ্বোধন বা ফাইনাল, তাফসির বা ওয়াজ মাহফিল, যজ্ঞ বা কীর্তন, গরু-মহিষ জবাই কিংবা সিম বিক্রির মেলা এমন কিছু বাদ নেই যার জন্য মাইকিং হচ্ছে না। যা চলতে থাকে রাত ১১টা পর্যন্ত। কোন তাফসির বা ওয়াজ মাহফিল এবং যজ্ঞ বা কীর্তন অনুষ্ঠানে হাজার খানেক মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলের আশেপাশে ৫০/৬০টি হর্ণ (মাইকের চোঙ্গা) টানিয়ে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে দুরবর্তী যারা আসেনি তাদের জোর করে শোনানো হয়। তা রাত ১/২টা পর্যন্ত এমনকি সারারাতও চলে। বহু অনুষ্ঠানে শ’খানেক ¯্রােতা বসে থাকলেও গভীর রাত পর্যন্ত আউটডোরে ২০/৩০টি চোঙ্গায় অনুষ্ঠান প্রচার করে মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায় ঘরোয়া যজ্ঞ/কীর্তণ বা ওরুস স্থলের বাইরে অসংখ্য মাইক লাগিয়ে সারারাত জিকির বা গান-বাজনা করা হয়। যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ণ, বেপরোয়া গতির মোটর সাইকেলের সাইলেন্সারের বিকট শব্দ, বেসরকারি যানবাহন, মোটর সাইকেল, বাই সাইকেল ও অটোরিক্সা গুলোতে প্রতিনিয়ত বাজতে থাকা সাইরেন (অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিস গাড়ীর জরুরী সংকেত)। এসবের উচ্চ আওয়াজে শুধু শব্দ দূষণ হচ্ছেনা, মানুষের মধ্যে আতংকও ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন মোবাইল সিম কোম্পানী তাদের সিম বিক্রির জন্য উপজেলার ছোট-বড় বাজার গুলোর বিভিন্ন দোকানে প্রায়ই সিম বিক্রির মেলা বসায়। এ জন্য পুরো এলাকা জুড়ে মাইক দিয়ে প্রচারণার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দোকানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৩/৪টি লাউড স্পীকারে গান বাজাতে থাকে।উপজেলা শহরের বাসিন্দাসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন এসব অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের মানুষ রাত ৯টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু রাত ১১টা পর্যন্ত মাইকিংয়ের এ অত্যাচার চলতে থাকে।

২০০৮, ২০১১ ও ২০১৫ সালে উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় মাইকিং ও শব্দ দূষণ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং দুপুর ২ টা পূর্বে ও রাত ৮ টার পরে মৃত্যু সংবাদ ও সরকারি বিশেষ ঘোষণা ছাড়া সবধরণের মাইকিং ও শব্দ দূষণ সংক্রান্ত সকল কাজ বন্ধ রাখার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। সমাবেশ কিংবা অনুষ্ঠানের মাইকের আওয়াজ অনুষ্ঠান সীমানার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখা, ধর্মীয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এলাকায় প্রচার বন্ধ রাখা, হাটবাজার এলাকায় আওয়াজ সীমিত রাখা, প্রচার কাজে চোঙ্গার বদলে কন্ট্রোল স্পীকার ব্যবহার করা, যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ণ ও নিরব এলাকায় হর্ণ না বাজানোর নির্দেশনাও দেয়া হয়। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিষিদ্ধ কাজ বিনা বাঁধায় চলছে। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ সোমবার উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় মাইকিং ও শব্দ দূষণ বিষয়ে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টার গুলোর মাইকিংয়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সদস্য ও জুড়ী উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন- মাইকিং ও শব্দ দূষণের বিষয়ে উপজেলাবাসী অতিষ্ঠ। এটা বিরাট যন্ত্রণা হয়ে দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ এ থেকে পরিত্রাণ চায়। উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হলে অসহায় মানুষ মুক্তি পাবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সমরজিৎ সিংহ বলেন মাইকিং ও বিভিন্ন কারণে শব্দ দূষণে শিশু ও বৃদ্ধের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। শ্রবণ শক্তি লোপ পেতে পারে, হৃদরোগ হতে পারে। অসুস্থদের অসুস্থতা আরো বেড়ে যায়। তিনি বলেন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর মাইকিং ও বর্জ্য ফেলে নদী দূষণ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে প্রাথমিক ভাবে সতর্ক করা হবে। এরপরে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রঞ্জন চন্দ্র দে বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শব্দ দূষণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *