ডায়ালসিলেট ডেস্ক: সূর্যের প্রখর তাপে এমনিতেই নাজেহাল সাধারণ মানুষজন। এমন অবস্থায় ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতা বিক্রেতারা তীব্র গরমের কারণে পরেছেন ভোগান্তিতে। দিনে অনেকেরই কেনাকাটার ইচ্ছে থাকলেও উত্তপ্ত আবহাওয়ার কারণে কেনাকাটার জন্য রাতকেই বেছে নিচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতারা। যেন রাতের কেনাকাটায় আগ্রহী তারা। আর সেজন্য ইফতারের পর থেকে জনসমাগম বেড়ে যায় বিপণিবিতানগুলোতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে মৌলভীবাজার জেলা শহরের কোর্টরোড, সেন্ট্রালরোড ও পশ্চিমবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছোট দোকান ও বিপণিবিতান গুলিতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বিক্রেতাদের নেই দম ফেলার ফুসরত। জনসমাগমে ব্যতিব্যস্ত ছিল শহরের মূল সড়কগুলো।
এর আগে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের হাতেগোনা কয়েকটি বিপণিবিতানে কিছু ক্রেতা থাকলেও অধিকাংশ ছোট ছোট দোকানে ক্রেতাদের তেমন চোখে পড়েনি। অনেক ব্যবসায়ীকে গল্পগুজব করে অলস সময় পার করতে দেখা যায়।
রাত ৯টার পর সেন্ট্রালরোড এলাকায় কথা হয় সোহান আহমদ ও ইতি দম্পতির সঙ্গে। তারা জানান, সকালে একবার বেরিয়েছিলেন ঈদের কেনাকাটার উদ্দেশ্য। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমের তাপ বাড়ায় কেনাকাটা না করেই বাসায় ফিরে যান। এখন গরম কিছুটা সহনশীল, তাই এসেছেন কেনাকাটা করতে।
এবারের অতিরিক্ত গরমের কারণে ঈদের কেনাকাটা এখনও শেষ হয়নি জানিয়ে পাপড়ি খানম বলেন, দুদিন ধরে অনেক গরম পড়েছে। ঈদের এখনও কিছুদিন বাকি আছে। অল্প অল্প কেনাকাটা করছি।
শহরের পশ্চিমবাজার এলাকায় কথা হয় ক্রেতা আলেয়া আক্তার, শর্মী ও সাম্মির সঙ্গে। তারা বলেন, দিনে রোদ আর প্রচণ্ড গরমে বাসা থেকে বের হওয়া খুবই কষ্টকর। তাই রাতে এসেছি কেনাকাটা করতে।
কসমেটিক, চুড়ির দোকানের কর্মচারী আফজাল মিয়া ও সুমন জানান, দিনে বেচাকেনা যেমন কম, তেমনই গরমের কারণে কাস্টমারও অনেক কম। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তারা গল্পগুজব করে সময় কাটালেও রাতে দম ফেলার ফুসরত নেই বলে তারা জানান।
রাত ১০টায় আলাপ হয় পশ্চিমবাজার এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আহমদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ব্যবসা এখন জমে উঠেছে। কিন্তু তিন চার ধরে চলা অতিরিক্ত গরমের কারণে দিনে ক্রেতারা একটু কম আসলেও রাতের দিকে তারা আসছেন। দিনে তেমন ব্যবসা না হলেও রাতে ক্রেতাদের আগমনে ব্যবসা ভাল হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাত ১১টার পরও কোর্টরোড এলাকার জুতাবাজারে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। সেখানকার ব্যবসায়ী নান্টু দেব জানান, আজ দুদিন ধরে রাতের দিকে ক্রেতারা আসছেন। দিনে প্রচণ্ড গরম থাকায় হয়তো তারা কম আসছেন। তবে রাতে তারা আসছেন। দোকান আগে রাত ১২টায় বন্ধ করতেন, এখন দুদিন ধরে রাত ২টায় দোকান বন্ধ করেন বলে তিনি জানান।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিসুর জানান, একযোগে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শুরু হয়েছে দাবদাহ। সেই সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরমের কষ্ট আরও বেড়েছে। দেশজুড়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে, শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরের দিকে মৌলভীবাজারে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল বলে জানায় স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
উল্লেখ্য, সাধারণত তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে সেখানে মাঝারি দাবদাহ এবং ৪০ অতিক্রম করলে তীব্র দাবদাহ চলছে বলে ধরা হয়।