ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল গোলাপগঞ্জ, যা বলছেন বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়াবিদরা

প্রকাশিত: ৯:২১ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২৩

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল গোলাপগঞ্জ, যা বলছেন বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়াবিদরা

শুক্রবার সকালে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৫। এই ভূমিকম্প ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল।

এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জে সিলেট শহর থেকে মাত্র ২৩ কিলোমিটার দূরে।

শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। সিলেট ছাড়াও মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ থেকে ভূ-কম্পন অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ভূমিকম্পটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়েছে। এর ভৌগলিক অবস্থান ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ; এমনটাই জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস। এছাড়াও আগামী কয়েক দিনে সিলেট জেলায় ১৪শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

টানা বর্ষণ ও বন্যার শংকার মাঝে শুক্রবার সকালের ভূমিকম্প সিলেটবাসীর মাঝে ভীতি জাগিয়েছে।

ভূমিকম্প–গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, সিলেটের সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলে টেকটোনিক কাঠামোর কারণেই সেখানে একাধিক চ্যুতি রয়েছে। এর মধ্যে ডাউকি চ্যুতি খুব বড়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চ্যুতিগুলোর এটি একটি। এর বিস্তৃতি পূর্ব–পশ্চিমে ৩০০ কিলোমিটার। ডাউকির নাম হয়েছে মেঘালয়ের একটি শহরের নাম থেকে। এই চ্যুতি বাংলাদেশের দিকে চলে এসেছে। এটি ভূমিকম্পের একটি বড় উৎস। এ চ্যুতিতে ১৮৯৭ সালে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়। এটি ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। সেটি ছিল এক ভয়াবহ ভূমিকম্প। এতে মেঘালয় এলাকা একেবারে পুরো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, আজ যেখানে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল, সেখানে ছোটখাটো ভূমিকম্পের রেকর্ড আছে। এই ভূমিকম্প বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে প্লেট বাউন্ডারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত একটি সক্রিয় চ্যুতি অঞ্চলে সংঘটিত হয়। সক্রিয় এ চ্যুতি সিলেটের পূর্বাঞ্চল থেকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর বিস্তৃতি প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গলের ভূমিকম্পটি আজকের ভূমিকম্পের কাছাকাছি রশিদপুর চ্যুতিতে সংঘটিত হয়েছিল, যার মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬।

তিনি বলেন, ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অঞ্চলে ছোট ছোট ভূমিকম্প হওয়ার অর্থ এখানকার ভূ–অভ্যন্তরে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে মাঝেমধ্যে।

এদিকে, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে আমেরিকান ভূ-তাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ভূমিকম্পটি ছিল ৫ মাত্রার ও এর উৎপত্তিস্থল সিলেট শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। ভূমিকম্পটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়েছে। ভূমিকম্পটির ভৌগলিক অবস্থান ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সিলেট শহরের মানুষদের আগামী ২৪ ঘণ্টা সতর্ক থাকার অনুরোধ করবো। ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টা ছোট-ছোট আরও ২-১টি ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে ভূমিকম্পগুলো প্রথম ভূমিকম্পের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সৃষ্টি হয়ে থাকে।’

তবে মোস্তফা কামাল পলাশের এমন মন্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন।

সজিব বলেন, ‘পৃথিবীর কেউই যেখানে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা দিতে পারেন না। সেখানে আমাদের দেশের কিছু গবেষক ও আবহাওয়াবিদ আগাম বলছেন আরও ভূমিকম্প হবে। এটা বিষ্ময়কর।’

 

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ