ফতোয়া ও কিছু কথা

প্রকাশিত: ৩:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২৩

ফতোয়া ও কিছু কথা

তনিমা নাসরিন

 

ফতোয়া শব্দটি শুনলে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আমরা গোড়া বা কঠিন ভয়াবহ কিছু গ্রাম্য সালিশী অবস্থার কথা মনে করি। আমরা যারা স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করি, তারা ইসলামিক অনেক নিয়ম বা অনুশাসন সম্পর্কে অনেক কিছু জানি না। তেমনি একটি বিষয় এই ফতোয়া।
ফতোয়া ইসলামিক পরিভাষায় এমন একটি শব্দ যার অর্থ কোনো বিষয় সম্পর্কিত চ‚ড়ান্ত রায় এবং এই রায় কুরআন বা সুন্নাহর দলিল সাপেক্ষে প্রদান করা হয়। ফতোয়া হচ্ছে চ‚ড়ান্ত রায় যা মুফতি কুরআন বা সুন্নাহর দলিল দ্বারা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাক্ষরিত করেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এর গুরুত্ব বা ওজন কতটুকু এবং এর গভীরতা কতটুকু তা পাঠক সহজেই অনুধাবন করতে পারছেন।
আমাদের বর্তমান সমাজে মাঝে মাঝে বিভিন্ন পেপার-পত্রিকায় গ্রাম্য সালিশী মাধ্যমে ফতোয়া বা বিচারের ভয়াবহতা আমরা লক্ষ্য করি। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এখানে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন গুনা৯হ, তার ভয়াবহতা এবং পরিনামের সতর্কতার কথা অবহিত করেন। ঠিক এই কুরআন ও সুন্নাহ সম্বলিত দলিলগুলো আমরা আজও অনুসরণ করি। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে আধুনিক বিজ্ঞান অনেক কিছু আবিষ্কারও করেছে।
যাক, সে কথা। ইসলামের এই ফতোয়া বা চ‚ড়ান্ত রায় শুধুমাত্র যে কোনো সমস্যার ক্ষেত্রেও এনে দিতে পারে সুন্দর সমাধান। আমাদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এই ফতোয়ায় ইতিবাচক দিকগুলো প্রকাশ করতে পারেনি। এটা বাস্তবিতকই দুঃখজনক।
ফতোয়ার ক্ষেত্রে চারটি ধাপ অনুসরণ করা হয়। প্রথমত: মুফতি যিনি আল্লাহর বিধান কি হবে বা কুরআনে সমস্যার বিষয়টি সম্পর্কে কি করতে বলা হয়েছে তা বয়ান করবেন বা বলবেন, দ্বিতীয়ত: ফতোয়া যিনি চাইবেন, তৃতীয়ত: ফতোয়ার সাথে যিনি সম্পৃক্ত এবং চতুর্থত: যার দ্বারা ফতোয়াটি দেয়া হবে বা যিনি কাজী বা বিচারক চ‚ড়ান্ত রায়টি দিবেন। এক্ষেত্রে, আরো বিষয়গুলো হলো-
১। কোনো কোনো সাধারণ মানুষ বা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত কোনো মানুষ ফতোয়া দিতে পারবেন না।
২। কোনো সাধারণ আলেম বা সাধারণ মাদ্রাসার সাথে জড়িত ব্যক্তি ফতোয়া দিতে পারবেন না।
৩। ফতোয়া যিনি বর্ণনা করবেন তিনি অবশ্যই মুফতি হবেন এবং তিনিই এই নির্দিষ্ট বিষয়টি সম্পর্কে কি বলা হয়েছে কুরআনে তা সবাইকে বলবেন।
৪। কাজী বা বিচারক তিনি অবশ্যই এই বিষয় সম্পর্কে অবশ্যই বিশেষভাবে জানেন বা বুঝেন এবং এর গুরুত্ব ও প্রভাব সম্পর্কে অবহিত হয়ে রায় প্রদান করবেন।
দেখুন পাঠক, এই ফতোয়া যে শুধুমাত্র রায় বা চ‚ড়ান্ত মতামত নয়। এটি হচ্ছে, যুগের চাহিদা ও প্রেক্ষাপটে কোনো সমস্যার ইসলামিক সমাধান যা মানুষকে গুনাহ থেকে হেফাযত করতে সাহায্য করে। এর জন্য অবশ্যই প্রয়োজন হয় জ্ঞানী একজন মুফতির। ফতোয়া কোনো বিষয় এর ভয়াবহতা হতে পারে না কারণ কোনো সমস্যা সম্বলিত বিষয় কুরআন বা সুন্নাহর দলিল এর বাইরে হওয়া যাবে না বা ধর্মীয় বিধান লঙ্ঘন করা যাবে না। আরেকটি বিষয় এই যে কুরআন ও সুন্নাহ জাহেরী বা বাতেনী অর্থাৎ জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সমাধান হয়তো বর্ণনা করে। এক্ষেত্রে ইজমা বা কিয়াস ব্যবহার করতে হবে। ইসলামিক জীবন বিধান সবসময়ই আমাদের গভীর জ্ঞানের এবং ধৈর্য্যরে জন্য উৎসাহিত করে কখনো কোনো জুলুম বা অন্যায়ের পক্ষপাতিত্ব করে না তাই ফতোয়া বা চ‚ড়ান্ত রায় যেহেতু আল্লাহর বাণীর বা কুরআনের উপর নির্ভরশীল, তা কখনোই ভয়াবহ বা সাংঘর্ষিক হতে পারে না। আর যদি হয়েই থাকে তবে তা আমাদের অজ্ঞতা এবং স্বল্প জ্ঞানেরই ফলাফল।
আল্লাহতাআলা আমাদের জ্ঞানের গভীরতা এবং ধৈর্য্য শক্তি দান করুন। সেই সাথে দান করুন ইলম এবং আল্লাহর বাণীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর তা গভীরভাবে বোঝার ক্ষমতা।
আমীন\

 

লেখক : গৃহিণী, সিলেট।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ