স্পোর্টস ডেস্ক :: টিম হোটেলের লবিতে ট্রফি উন্মোচনের নির্ধারিত সময়ের আগে হাজির বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তাকে অপেক্ষায় রেখেছিলেন চট্টগ্রামে সফররত আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শাহীদি। সেই অপেক্ষা কেটে যায় নিমিষেই। আফগান অধিনায়ক নির্ধারিত সময়ের মিনিট কয়েকের মধ্যেই চলে আসেন।

 

আজ বুধবার দুই অধিনায়ক পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে লড়াইয়ে নামবেন। অথচ তামিম-শাহীদি কারো মধ্যেই সেই যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নেই। হবে-ই বা কী করে? ওয়ানডে ক্রিকেটে দুই দলের মুখোমুখি লড়াই প্রায় নিয়মিতই ঘটনা।

 

সতের মাস পর বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজে আবার মাঠে নামতে যাচ্ছে আজ। বন্ধুত্বপূর্ণ আবহে দুই অধিনায়ক মুখে চওড়া হাসি নিয়ে উন্মোচন করেন ‘ওয়ালটন-বাংলাদেশ আফগানিস্তান ওয়ানডে সিরিজ’-এর আকর্ষণীয় ট্রফি। গত বছর চট্টগ্রামেই তিন ম্যাচের সিরিজ খেলেছিল দুই দল। এবারও ভেনু্যর পরিবর্তন হয়নি। দুপুর ২টায় দুই দল মাঠে নামছে সাগরে ঘেঁষা স্টেডিয়ামে।

 

সাদা আর রঙিন পোশাকে আফগানিস্তান কতটা পরিবর্তনশীল তা বোঝা যায় চাল-চলনেই। টেস্টে খুব বাজেভাবে হারলেও রঙিন জার্সির খেলা আসতেই বদলে গেছে আফগানদের শরীরী ভাষা। জড়তা কাটিয়ে তারা এখন যথেষ্ট ফুরফুরে। অনুশীলনে নবী, রশিদ, মুজিবরা এতোটাই চনমনে যে, বোঝাই যাচ্ছে নিজেদের স্বস্তির বলয়ে ঢুকে গেছেন।

 

সাগরিকার পাড়ে এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শেষ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় আর অতীত রেকর্ড বলছে ফেভারিট স্বাগতিকরাই। অধিনায়ক তামিম-ই এমন কথা বললেন, ‘আমার মনে হয় শেষ সিরিজ যেভাবে ছিল এই সিরিজ এরকমই থাকবে। তারা ভালো দল, বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে। বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং অ্যাটাক। গত সিরিজ থেকে কম কিছু আশা করছি না।’

 

আফগানরা ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। নিজেদের দিনে তারা যে কাউকেই হারাতে পারে তা ক্রিকেটবিশ্ব দেখেছে বহুবার। বাইশ গজে যারা ভালো খেলবে তারাই শেষ হাসি হাসবে। আফগান অধিনায়ক হুংকার দিয়ে বাংলাদেশকে সাবধান থাকতে বললেন, ‘আমরাও এখানে খেলতে এসেছি। ক্রিকেট খেলে ম্যাচ জিততে এসেছি। অবশ্যই তারা বেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছে। আমরাও এখানে ভালো খেলে জিততে এসেছি। আমরা গত দুই বছর ধরে ভালো ক্রিকেট খেলছি।’

 

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে ১১ বার। বাংলাদেশের জয় ৭টি। সবশেষ গত বছর চট্টগ্রামেই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে লাল-সবুজের দল। বাংলাদেশের মতো আফগানিস্তানও সরাসরি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পেয়েছে। সুপার লিগে ৯ ম্যাচ কম খেলেও আফগানদের কোয়ালিফাই খেলতে হয়নি। ১৫ ম্যাচের মধ্যে ১১টিতেই জয়।

 

সিরিজের আগের দিন স্বাগতিকরা রয়েসয়ে কাটিয়েছে। অনুশীলনের তীব্রতা ছিল না। সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম আর পাঁচ পেসার নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনে। ব্যাট-বল ছুঁয়েই দেখেননি অধিনায়ক তামিম। তবে তার ফিটনেস নিয়ে আছে যথেষ্ট শঙ্কা। তবে তিনি খেলবেন নিজের অবস্থান বোঝার জন্য। অন্যদিকে আফগানিস্তানের অনুশীলন ছিল যথেষ্ট সক্রিয়। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নিবিড়ভাবে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন তারা।

 

জহুর আহমেদের উইকেটে হালকা ঘাস থাকবে। শুরুর দিকে পেসাররা সুবিধা পাবেন কিছুটা এমনটাই আঁচ করা যাচ্ছে। শুরুর চাপ সামলে নিতে পারলে এমন উইকেটে রানের উৎসবও করতে পারেন ব্যাটসম্যানরা।

 

বাংলাদেশ নামতে পারে একাদশে তিন পেসার দুই স্পিনার নিয়ে। সাতে দেখা যেতে পারে মেহেদী হাসান মিরাজ বা আফিফ হোসেন ধ্রুবর মধ্যে যে কোনো একজনকে। পেসারদের নিয়ে হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পাঁচ পেসারকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হবে এতোটুকু জানা গেছে। অর্থ্যাৎ একেক ম্যাচে একেক কম্বিনেশন দেখা যেতে পারে। তামিম এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন।

 

সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজ বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সেলও। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে একে অপরের বিপক্ষে। সেটিতে পাখির চোখ করেই নিজেদের সেরাটা দিতে মরিয়া দুই দল। অধিনায়ক তামিম জানিয়েছেন বিশ্বকাপে প্রায় ম্যাচে হয় হাই স্কোরিং। সেই বিবেচনায় চট্টগ্রামকে বাছাই করা হয়েছে এই সিরিজের জন্য।

 

তামিমের ভাষ্য, ‘একটা জিনিস মাথায় আছে- হাই স্কোরিং ম্যাচ হলে ভালো হয়। সাধারণত চট্টগ্রাম হাই স্কোরিং ম্যাচ। বিশ্বকাপে হাই স্কোরিং ম্যাচ হবে।’

 

আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও এ দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে রাতের দিকে কিছুটা সম্ভাবনা আছে। ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচ শেষের দিকেই থাকবে। তামিমরা কি পারবেন বিশ্বকাপের প্রথম প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয় তুলে নিজেদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে? নাকি আফগানিস্তান টেস্ট হারের বদলা নিতে ওয়ানডের শুরুটা দুর্দান্ত করবে?

 

দুদলের ওয়ানডে স্কোয়াড

 

বাংলাদেশ : তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তৌহিদ হৃদয়, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, আফিফ হোসেন এবং নাইম শেখ।

 

আফগাস্তিান : হাশমতুল্লাহ শহীদি (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রিয়াহ হাসান, রহমত শাহ, নজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবি, ইকরাম আলিখিল, রশিদ খান, আজমতুল্লাহ ওমরজাই, মুজিব উর রহমান, ফজলহক ফারুকি, আব্দুল রহমান, শহিদুল্লাহ, জিয়া উর রহমান ওয়াদফার নোমান্দ, মোহাম্মদ সালিম সৈয়দ শিরজাদ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *