প্রকাশিত: ১১:৪৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২৩
ডায়াল সিলেট ডেস্ক: দেশের সর্ববৃহৎ জলাভূমি হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের জলজবৃক্ষ নিধনের ঘটনায় হাওরের হারানো পরিবেশ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চার সুপারিশ উপেক্ষিত। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে কার্যকর প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রণালয়াধীন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, মৌলভীবাজার ও সিলেটের জেলা প্রশাসক, ইজারাদার সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট ২২ জনকে ‘নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস’ পাঠিয়েছে ‘বেলা’। এই বিষয়ে পত্র প্রেরণের ৭ দিনের মধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশদাতাকে অবহিত করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের অন্তর্ভুক্ত বড়লেখা উপজেলাধীন মালাম বিলের (মৎস্য জলাশয়) আয়তন ৪২৮.৯২ একর। ১৪২৭ বাংলা হতে ১৪৩২ বাংলা সন পর্যন্ত সময়ের জন্য ভুমি মন্ত্রণালয় থেকে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৩ টাকায় মালাম বিলটি ইজারা নেয় বড়লেখার মনাদি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। মালাম বিলের কান্দির (পাড়ে) সরকারী ভুমিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০৩ সাল হতে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে হিজল, করচ, বরুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ রোপণ করে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো জলজ বৃক্ষের রক্ষনাবেক্ষণ করে। প্রাকৃতিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত জলজ উদ্ভিদগুলো ১০-১৫ ফুট উচ্চতার হয়েছে। যা হাকালুকি হাওরের ইসিএ এলাকার জীববৈচিত্র রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে বিশেষ অবদান রাখছিল। ২০২১ সালের মে মাসের শুরুর দিকে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ইজারাদারের লোকজন বিলের বাঁধ নির্মাণের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ও প্রাকৃতিক জলজ বনের প্রায় ২০ হাজার গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলে। এতে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ওই বছরের ১৯ জুন ‘হাকালুকির মালাম বিলের ২০ হাজার জলজ বৃক্ষ নিধন-হুমকিতে হাওরের জীববৈচিত্র’ শিরোনামে দৈনিক জালালাবাদে একটি প্রতিবেদন ছাপা হলে সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় শুরু হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ঘটনায় জড়িত ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাওরের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন সুপারিশ ও দায়ীদের শাস্তির দাবীতে নানা কার্যক্রম চালায়।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ‘বেলার’ সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সরেজমিনে মালাম বিল এলাকা পরিদর্শন করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে চারটি সুপারিশ প্রদান করে। সুপারিশগুলো হচ্ছে, মালাম বিলের চারপাশে যে কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা অপসারণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে কোনো বাঁধ দেওয়া না হয় তা নিশ্চিত করা। যে জায়গার গাছ কাটা হয়েছে সেখানে বৃক্ষরোপণ করা। কেউ যাতে সরকারি জায়গা দখল করে কৃষি জমির আওতায় নিয়ে আসতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যারা নির্বিচারে গাছ কেটে হাওরের পরিবেশ বিনষ্ট করেছে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সর্বশেষ বেলার প্রতিনিধি দল চলিত মাসের ১১ জুলাই ফলোআপ পরিদর্শনে গিয়ে সুপারিশগুলো কার্যকর হয়নি দেখে ২০ জুলাই সংশ্লিষ্টদের নোটিশ প্রদান করেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনজীবি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না প্রেরিত নোটিশে বলা হয়েছে হাকালুকি হাওরের মালাম বিলটি বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের দ্বিতীয়ারদেহী-৮৩ মৌজার এসএ ৫৪ ও ১০৮ নং দাগে অবস্থিত যার আয়তন ৪২৮.৯২ একর। বিলটি বদ্ধ জলমহাল হিসেবে ৫ বছর মেয়াদে নোটিশ গ্রহীতা মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কর্তৃক অপর নোটিশ গ্রহীতা মনাদি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি বরাবর মৎস্য চাষের উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শন ও বড়লেখা ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ি ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করে ১৪২৭-১৪২৮ বঙ্গাব্দ (২০২১ খ্রি:) এ বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির জলজবৃক্ষ কেটে ইজারাদার দুই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও ১০-১২ বিঘা জমি চাষ উপযোগি করেন। জালালাবাদে সংবাদ প্রকাশ হলে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বড়লেখা থানায় ৭ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করলেও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার বৈশিষ্ট নষ্ট করে জলজ প্রজাতির বৃক্ষ নিধন ও বাঁধ নির্মাণের স্পষ্ট অভিযোগ থাকলেও মামলায় ইজারা গ্রহীতাকে বিবাদী করা হয়নি এবং ইজারা চুক্তি আজও বাতিল করা হয়নি।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ি হাওর, বিল ও জলাধার হিসেবে সংজ্ঞায়িত যার শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। অধিকন্ত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত কোনো স্থানের বৈশিষ্ট নষ্ট করে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করা ও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গাছ কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বৃক্ষ নিধনের পরই পরিবেশ অধিদপ্তর কিছু চারা রোপণ করলেও এখন আর সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech