রং চায়ে ভাগ্য ফিরেছে সবিতার

প্রকাশিত: ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২৩

রং চায়ে ভাগ্য ফিরেছে সবিতার

ডায়াল সিলেট ডেস্ক:  চারদিকে সবুজ চা বাগান। ভেতরে আঁকাবাঁকা মৌলভীবাজার কুলাউড়া সড়ক। এ সড়কেই মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও হাকালুকি হাওরে যান পর্যটকরা। তাদের কথা চিন্তা করে রাস্তার ধারে চা দোকান দিয়েছেন সবিতা। পর্যটকরা চলতি পথে যানবাহন থামিয়ে তার দোকানেই চা পান করেন। আর উপভোগ করেন নয়নাভিরাম প্রকৃতি।

জানা গেছে, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগানের লাল মাটিয়া এলাকার বাসিন্দা সবিতা। এক সময় তিনি ওই বাগানের চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তার স্বামী লসমন দাসও একই বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন। দুজনে মিলে একদিনে উপার্জন হতো মাত্রা ১৭০ টাকা। ছেলে মেয়ে নিয়ে ছয়জনের সংসার। স্বল্প আয়ে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল তাদের।

সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ঋণ নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে চায়ের দোকান শুরু করেন সবিতা। স্বামীও কাজের ফাঁকে সময় দেন। দোকানের নামকরণ ছেলের নামে হলেও সবাই চেনেন ‘সবিতার রং চা’ নামে।

ভালোমান ও কম দামের চা হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি তাদের পরিচিতি বাড়ে। এখন সবাই এক নামে চিনে ‘সবিতার রং চা’। এখন আর তাদের শ্রমিকের কাজ করতে হয় না। চা দোকানের আয়েই সুন্দরভাবে চলছে সংসারও।সবিতার চায়ের দোকান যেমন আকৃষ্ট করেছে স্থানীয়দের, তেমনি পর্যটক ও পথচারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরেজমিনে গেলে কথা হয় চা পান করতে আসা পার্শ্ববর্তী লুয়াইউনি চা বাগানের বাসিন্দা মুন্না আজিজ ও হৃদয়ের সঙ্গে। তারা জানান, সবিতার রং চা পান করলে তৃপ্তি আসে মনে। ক্লান্তি দূর হয়। তাই সুযোগ পেলেই এখানে ছুটে আসেন তারা।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা থেকে আসা অলক দাস বলেন, সবিতার রং চা খুবই তৃপ্তিদায়ক। আমি আসা যাওয়ার পথে ক্লান্তি দূর করতে এখানে চা পান করি। ভালো মানের চা দামেও কম। প্রতি কাপ ৭ টাকা। আছে আলাদা স্বাদ।

মোটরসাইকেলে কুলাউড়া উপজেলার রবির বাজার যাচ্ছিলেন জামাল মিয়া। হঠাৎ মোটরসাইকেল থামিয়ে সবিতার চায়ের দোকানে আসেন তিনি। জানালেন এক কাপ চায়ের জন্যই বিরতি নিলেন তিনি। বলেন, সবিতার রং চা খুবই মজা। তাই এ চা পান করতে বার বার মন চায়।

মাথিউরা লালমাটিয়ার চা দোকানি সবিতা দাস বলেন, পাঁচ বছর আগে চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল ৮৫ টাকা। তখন চার সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাই। না পারি সইতে না পারি বলতে। সংকটে পরে দোকানের চিন্তা আসে। এরপর ঋণ করে ঝুপড়ি ঘরে চা দোকান শুরু করি। ছেলের নামে দোকানের নাম ‘রিপন টি স্টল’ দিয়েছি। কিন্তু মানুষ ‘সবিতার রং চা’ নামে ভালো চিনেন।

তিনি আরও বলেন, ভালো মানের চা পাতা, লবঙ্গ, আদা, দারুচিনি ও এলাচি দিয়ে ভিন্ন স্বাদের চা বানাতে থাকি। এখন স্বাভাবিক ভাবে ২০০-২৫০ কাপ বিক্রি করি। কোনো দিন ৫০০ কাপও বিক্রি হয়। প্রতিকাপ ৭ টাকা বিক্রির কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আমার রং চা।
চা-বিস্কুট বিক্রি করে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। এখন আমার সংসারে আগের মতো অভাব নেই। আমার গোয়ালে গরু আছে। কবুতর ও মোরগ পালি। আমি এখন সচ্ছল। আমাকে অনুকরণ করে এলাকায় রাজা রাম মুনিয়া ও রতন মুনিয়া দুটি দোকান দিয়েছেন।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ