প্রকাশিত: ৩:১২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩, ২০২৩
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বুধবার ঘোষণা করেছেন–তিনি এবং তার স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডো আলাদা হয়ে যাচ্ছেন।
জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি তাঁদের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগে তাঁদের মধ্যে অনেক অর্থবহ এবং কঠিন কথোপকথন হয়েছিল।
তাঁরা লিখেছেন, ‘আমরা যা কিছু তৈরি করেছি এবং নির্মাণ চালিয়ে যাব তার জন্য আমরা একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা সহ একটি ঘনিষ্ঠ পরিবারে আবদ্ধ থাকবো।’
সন্তানদের মঙ্গল ও সম্মানের জন্য বিচ্ছেদের বিষয়টি গোপন রাখতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা তা পরেননি।
সোফি এবং জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে প্রথম পরিচয় ঘটেছিল শৈশবে। ২০০৫ সালে বিয়ে করা বিশ্বখ্যাত এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
ট্রুডো প্রায়ই প্রকাশ্যে তাঁর স্ত্রীর প্রশংসা করে এসেছেন। গত এপ্রিলেও সোফির জন্মদিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি সেলফি পোস্ট করে ক্যাপশনসহ অগাধ ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন ট্রুডো। লিখেছিলেন, ‘এ পর্যন্ত এবং সবকিছুর মধ্যে, এমন কেউ নেই যাকে আমি আমার পাশে রাখতে চাই।’
গত মে মাসে মা দিবসের পোস্টে সোফিকে এবং নিজের মাকে সবচেয়ে শক্তিশালী, সাহসী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন জাস্টিন। পরে জুন মাসে বাবা দিবসের পোস্টেও স্বামীকে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন সোফি। লিখেছিলেন, ‘এই লোকটি তার বাচ্চাদের জন্য যে ভালোবাসা রয়েছে তা যেকোনো জায়গায় বহন করতে পারেন।’
২০০৫ সালে বিয়ে করেন জাস্টিন ও সোফি। বিশ্বখ্যাত এ দম্পতির মধ্যে প্রথম পরিচয় ঘটেছিল শৈশবে। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বড় সন্তানের বয়স ১৫ বছর।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যদ্বাণী : ১৯৭২ সাল। কানাডার অটোয়াতে এক রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর সঙ্গে নিক্সনের রাজনৈতিক সম্পর্কটি মধুর না হলেও তারা এক রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় মিলিত হলেন। সেই ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর সঙ্গে অংশ নেন তার পরিবারের সদস্যরাও। ভোজসভায় অংশ নেওয়া সবচেয়ে কম বয়সী সদস্যটি হলেন জাস্টিন ট্রুডো। মায়ের কোলে থাকা ট্রুডোর বয়স তখন মাত্র চার মাস। কিন্তু এই কোলের শিশুটিই দৃষ্টি কাড়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। ছোট্ট ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘এই শিশুটি একদিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী হবে।’
৪৩ বছর পর মজাচ্ছলে করা সেই ভবিষ্যদ্বাণীটি মিলে গেল অক্ষরে অক্ষরে। সত্যি সত্যিই কানাডার প্রধানমন্ত্রী হলেন জাস্টিন ট্রুডো। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর কানাডার প্রধানমন্ত্রী হন জাস্টিন ট্রুডো। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একজন প্রধানমন্ত্রী হন যার বাবাও ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। এই নিরঙ্কুশ বিজয়ের ঘটনাটি মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো দলটিকে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসতে দলটির নেতা তরুণ জাস্টিন ট্রুডোর ক্যারিশমাটিক উত্থানই প্রধান ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করেন অনেকে।
বড়দিনে বড় পরিবারে জন্ম : জাস্টিন ট্রুডোর জীবন নানা চমকে ভরপুর। তার জীবনের শুরুটাও হয়েছিল খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে তার যখন জন্ম হয় সে-সময় তার বাবা পিয়েরে ট্রুডো ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পিয়েরে ট্রুডোর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আধুনিক কানাডার ইতিহাস। কানাডার বিচিত্র সংস্কৃতিচর্চার প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
জাস্টিন ট্রুডো ছিলেন পিয়েরে ট্রুডোর প্রথম সন্তান। তার মায়ের নাম মার্গারেট ট্রুডো। ২০০০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাবা পিয়েরে ট্রুডো মৃত্যুবরণ করেন। মা মার্গারেট এখনো জীবিত। মার্গারেটও রাজনৈতিক পরিবারেরই মেয়ে। তার জন্ম ভেঙ্কুভারে। মার্গারেটের বাবা জেমস সিনক্লেয়ার লিবারেল পার্টির এমপি ছিলেন। মৎস্য ও সমুদ্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। সাইমন ফ্রেশার ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া করা মার্গারেট লেখালেখি, অভিনয় এবং ফটোগ্রাফির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। এছাড়াও টেলিভিশন টকশোতে হোস্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
টালমাটাল পরিবার : জন্মের পর থেকেই জাস্টিন ট্রুডোর জীবনে নানা ঝড়-ঝাপ্টা হানা দেয়। তার পরিবারে বেশকিছু জটিলতার সূত্রপাত হয়। কারণ তার বাবা-মায়ের সংসার জীবন খুব মসৃণ ছিল না, যদিও তারা ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন। দুজনের বয়সের ব্যবধান ছিল অনেক বেশি। ১৯৭১ সালে তারা যখন বিয়ে করেন তখন পিয়েরে ট্রুডোর বয়স ছিল ৫২ এবং মার্গারেট ছিলেন ২২ বছরের সদ্য তরুণী। অনেকেই ভাবতে পারেন, বয়সের ব্যবধান ৩০ বছর হয়েও কীভাবে তারা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন! এক্ষেত্রে পিয়েরে ট্রুডোর একটি সুবিধা ছিল। বয়সের তুলনায় তাকে অনেক তরুণ মনে হতো। নারীদের মাঝেও তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। রমণীরা সহজেই তার প্রেমে পড়ে যেতেন। আর ট্রুডোও প্রেম বিলাতে কোনো কার্পণ্য করতেন না। তবে, ১৯৬৮ সালে ৪৮ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি অবিবাহিতই ছিলেন। ১৯ বছরের মার্গারেটের সঙ্গে সে-সময় চুটিয়ে প্রেম করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ই ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ তারা বিয়ে করেন। শুরুতে ভালোই চলছিল সবকিছু। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই পিয়েরে ট্রুডোর ওপর ভীষণ বিরক্ত হয়ে ওঠেন মার্গারেট। কারণ, ট্রুডো সে-সময় সরকারি কাজ ও রাজনীতি নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন যে, পরিবারের দিকে কোনো খেয়ালই রাখতেন না। ততদিনে জাস্টিন ট্রুডো ছাড়াও আরও দুটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এই দম্পতি।
সন্তানদের একাই সামলাতে হতো মার্গারেটকে। এ-সময় কিছুটা বিষণœ ও হতাশাগ্রস্তও হয়ে পড়েছিলেন মার্গারেট। মাদকাসক্তিও ভর করেছিল তার ওপর। প্রধানমন্ত্রীর লাগেজে করে মাদক আনার দায়ে একবার তো সংবাদের শিরোনামই হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বেপরোয়া এই জীবনে মার্কিন সিনেটর টেড কেনেডির সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সবদিক মিলিয়ে ১৯৭৭ সালেই ট্রুডো-মার্গারেটের সংসার ভেঙে যায়। আইনি লড়াইয়ে তিন সন্তানকে নিজের কাছেই রাখতে সক্ষম হন পিয়েরে ট্রুডো। বছর দুয়েক পর ট্রুডোর নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার খবরটি যখন পৌঁছে মার্গারেট সে-সময় নিউয়র্কের একটি নাইটক্লাবে নাচছিলেন। সেই নাচের ছবিও বড় করে ছাপা হয়েছিল পত্রিকার প্রথম পাতায়। কারণ তখন পর্যন্ত তাদের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হয়নি। শেষ পর্যন্ত তা হয় ১৯৮৪ সালে। এর কিছুদিন পর মার্গারেট বিয়ে করেন অটোয়ার রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার ফ্রেইড কেম্পারকে। ওই সংসারে আরও দুটি সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু ১৯৯৮ সালে তার আগের ঘরের তৃতীয় সন্তান মিশেল ট্রুডো ভেঙ্কুভারের একটি পাহাড়ে স্কি করার সময় তুষারধসের কবলে পড়ে নিহত হলে আবারও বিষণœতায় পড়েন মার্গারেট। এই বিষণœতা তার দ্বিতীয় বিয়ে বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মার্গারেট পরবর্তীকালে স্বীকার করেছেন যে পিয়েরে ট্রুডোর সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও তার প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিল না। এও জানান, বাইপোলার ডিজঅর্ডার নামক এক মানসিক রোগে ভুগছিলেন তিনি। পরে ভালো হয়ে তিনি মানসিক রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০০০ সালে সাবেক স্বামী ট্রুডোর মৃত্যুর সময় তিনি তার পাশেই ছিলেন।
ট্রুডোর বাউন্ডুলে তারুণ্য : বাবা-মায়ের বিশৃঙ্খল সংসার এবং বিচ্ছেদে ট্রুডোর প্রথম জীবনটি মোটেই সুখকর ছিল না। পরিবারে মা না থাকার ফলে তার জীবন কিছুটা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন প্রায়ই। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বেশ কয়েকবার তিনি গাঁজা সেবনও করেছিলেন। এমনকি ২০০৮ সালে লিবারেল পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরও তিনি একদিন গাঁজা সেবন করেন। এজন্য তার কোনো অনুতাপ নেই। পারিবারিক এই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিক্রান্ত করলেও তিনি কখনো বিপথগামী হননি। কঠিন মনোবল ও স্বতঃস্ফূর্ত মন নিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। তিনি ভালোভাবেই তার পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর যুক্ত হন শিক্ষকতার সঙ্গে। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একটি স্কুলে গণিত এবং ফ্রেঞ্চ ভাষা শেখাতেন তিনি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের তিনি অভিনয় শেখাতেন। আরও মজার ব্যপার হলো, তিনি একটি কানাডিয়ান সিনেমায় অভিনয় করেছেন। গ্রেট ওয়ার নামে ওই সিনেমাটি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে। সিনেমায় তিনি কানাডার এক বীরের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যিনি একজন আইনজীবী ছিলেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওই বীর যুদ্ধে নিহত হয় এবং তার লাশ কখনোই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ছোট ভাইয়ের ক্লাসমেট সোফি : স্ত্রী সোফি গ্রেগরির সঙ্গে ছোটবেলায়ই পরিচয় হয়েছিল জাস্টিন ট্রুডোর। কারণ সোফি ছিলেন তার ছোট ভাই মিশেল ট্রুডোর ক্লাসমেট। সেই সুবাদে ট্রুডোর পরিবারে প্রায়ই যাতায়াত করতেন সোফি। ছোটবেলায় তাদের মধ্যে প্রথম পরিচয়ের পর দীর্ঘদিন শুধু হাই-হ্যালো সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের সম্পর্ক। ১৯৯৮ সালে মিশেল দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার কয়েক বছর পর আবারও তাদের মধ্যে যোগাযোগ ঘটে। ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তারা জানান, সোফির কাছ থেকেই প্রথম একটি মেসেজ পেয়েছিলেন ট্রুডো। কিন্তু ওই মেসেজে তিনি সাড়া দেননি। এর পরিণতি নিয়ে তিনি কিছুটা ভীত ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে সাড়া দিতেই হয়। কারণ সোফির প্রতি তিনিও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। ভোগ ম্যাগাজিনকে সোফি জানান, তারা যেদিন প্রথম দেখা করেন সেদিন কফির টেবিলে তাকে উদ্দেশ্য করে ট্রুডো বলেছিলেন, ‘আমার বয়স ৩১। আমি ৩১ বছর ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি সোফি।’ সোফি জানান, সেদিন তারা এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন যে, দুজনই বাচ্চাদের মতো কেঁদেছিলেন। ২০০৪ সালের অক্টোবরে তাদের এনগেজমেন্ট হয় এবং ২০০৫ সালের মে মাসে তারা বিয়ে করেন। বর্তমানে তারা তিন সন্তানের বাবা-মা।
সোফির জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৪ এপ্রিল। ট্রুডোর সঙ্গে প্রেম করার সময় তিনি একটি টেলিভিশনের হোস্ট ছিলেন। তার মা ছিলেন নার্স এবং বাবা ছিলেন স্টকব্রোকার। মন্ট্রিয়লেই সোফির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। মন্ট্রিয়ল ইউনিভার্সিটি থেকেই তিনি গ্রাজুয়েশন লাভ করেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার রিসেপশনিস্ট কাম অ্যাসিস্টেন্ট ছিলেন। পরে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার পদে উন্নীত হন। কিন্তু সেই পেশায় বেশিদিন মন টেকেনি। বছর তিনেকের মাথায় তিনি গণমাধ্যম জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং রেডিও টেলিভিশনে সাংবাদিকতা শুরু করেন।
যেভাবে প্রধানমন্ত্রী হলেন : পিতার উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কিংবা দলের প্রধান হননি ট্রুডো। কানাডায় এ ধরনের সংস্কৃতি চালু নেই। এই অবস্থানে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই এসেছেন তিনি। বিরোধীরা তার নামে অনেক অপবাদ ছড়ালেও কানাডার সাধারণ মানুষ তাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাস্টিন ট্রুডোকেই বেছে নিয়েছিল।
বাবার মৃত্যুর পরই ক্রমশ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ট্রুডো। ২০০৮ সালে মন্ট্রিয়লের পাপিনিউ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে লিবারেল পার্টির প্রধান নেতা নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১১ সালে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে আবারও নির্বাচিত হন একই এলাকা থেকে। কিন্তু তার দলের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। ওই নির্বাচনে মাত্র ৩৬টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে চলে যায় দলটি। সে-সময় দলের নেতৃত্বে ছিলেন মাইকেল ইগনাটিফ। নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের নেতৃত্ব থেকে মাইকেল পদত্যাগ করেন। তখন অনেকেই জাস্টিনকে নেতৃত্ব নেওয়ার কথা বললেও তিনি রাজি ছিলেন না। ২০১৩ সালে তিনি পার্টি লিডার পদের জন্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং বিপুল সমর্থন পেয়ে প্রধান নির্বাচিত হন। দলের প্রধান হওয়ার পর ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসে তার দল। কানাডার প্রধানমন্ত্রী হন জাস্টিন ট্রুডো। সেবার তার দল আসন পায় ১৮৪টি। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১৭০টি আসনের। এই নিরঙ্কুশ বিজয়ে ট্রুডোর ইতিবাচক প্রচারণাই বড় ভূমিকা রেখেছিল। রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই নানাভাবে মিডিয়ার আলোচনায় এসেছেন তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর ছেলে এই পরিচয় ছাড়াও তার নিজেরও একটা ক্যারিশমাটিক পরিচিতি গড়ে উঠেছিল। ২০০৮ সালে রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার মাত্র এক বছরের মাথায় তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হয়েছিল। তবে সেই নির্বাচনেই তিনি প্রভাবশালী এক প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। সেই সময় কানাডার প্রভাবশালী পত্রিকা গ্লোব অ্যান্ড মেইল-এর প্রধান সম্পাদক এডওয়ার্ড গ্রিনস্পন তার সম্পাদকীয়তে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, অন্য কয়েকজন নতুন নির্বাচিত এমপির মতো জাস্টিন ট্রুডোরও সম্ভাবনা রয়েছে আগামীতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। পত্রিকাটি বিরোধী ঘেঁষা হয়েও ট্রুডোর প্রসঙ্গে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।
নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি : কানাডার নতুন প্রজন্ম আস্থা রেখেছে জাস্টিন ট্রুডোর ওপর। তিনি দেশটির নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। গাঁজা বৈধ করার পক্ষে তিনি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিরোধীরা তার এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনেক হাসিঠাট্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তার কথা রেখেছেন। জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কানাডিয়ান গাঁজা সেবনকে বৈধ করার পক্ষে অথবা অন্তত এটিকে অপরাধ হিসেবে না দেখার পক্ষে।
ট্রুডো একজন সৌখিন বক্সারও। কয়েক বছর আগে অটোয়াতে বিরোধী দলের সিনেটর প্যাট্রিক ব্রাজিওর সঙ্গে এক চ্যারিটি বক্সিং ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে প্যাট্রিকের নাকও ফাটিয়ে দিয়েছেন। তার বাম বাহুতে একটি ট্যাটুও খোদাই করা। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা আছেন তাদের মধ্যে এই ধরনের বৈশিষ্ট্যের আর কোনো নজির নেই বলে মন্তব্য করেছে বিবিসি।
শুধু তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিই নয়, বিশ^নেতার সব গুণাবলিই তার মাঝে আছে বলে মনে করেন সমালোচকরা। ২০১৭ সালে কয়েকটি মুসলিম দেশের শরণার্থী এবং অভিবাসীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শরণার্থীদের তিনি নিজ দেশে স্বাগত জানান।
একটি টুইট বার্তায় তিনি লিখেন, ‘ধর্ম বিশ্বাস যাই হোক না কেন নির্যাতন, সন্ত্রাস ও যুদ্ধপীড়িত অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা কানাডায় স্বাগতম। বৈচিত্র্য আমাদের শক্তি।’
শরণার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও লিখেন, ‘আপনাদের জন্য কানাডার দরজা খোলা।’ এ জন্য তিনি হ্যাশট্যাগ ‘ওয়েলকামটুকানাডা’ চালু করেন।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech