ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তুচ্ছ দ্বদে গড়াচ্ছে মামলায়,বাড়ছে মিথ্যা মামলায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রবণতাও। এতে একদিকে যেমন আদালতে মামলাজট বাড়ছে, তেমনি নিরাপরাধ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে দুর্বিষহ ভোগান্তি । এরই ধারাবাহিকতায় গত এক দশকে ৫ সহশ্রাধিক নিরাপরাধ ব্যাক্তি মিথ্যা মামলায় আসামী। একর পর এক এই প্রবনতা বেড়ে চলায় আতংকিত জনপদের মানুষ । এই অবস্থায় আবাইপুর ইউনিয়নের মীনগ্রামের ইউপি সদস্য খুন ও বাড়ি-ঘর ভাংচুর এবং লুটপাট ঘটনার পর এবার মামলায় গণ আসামী হওয়ার আতংকে রয়েছে গ্রামবাসী। হত্যা ঘটনার পর সোমবার সকালে নিহতের সমর্থকরা প্রতিপক্ষ গ্র“পের ১৭ টি বাড়ি-ঘর ভাঙ্চুর ও লুটপাট করে। এই ঘটনার পর ওই সকল বাড়ি-ঘরের বাসিন্দারাসহ অন্তত ৫০ পরিবারের সদস্যরা বাড়িছাড়া হয়েছে। এবার তাদের ভিতর কাজ করেছে আসামীর তালিকায় নাম চলে আসার আতংক। এর আগে শৈলকুপার বিভিন্ন গ্রামে এ ধরনের ঘটনায় শত শত ব্যাক্তি আসামী হয়েছে । এই ভাবে একটি খুনের ঘটনায় শতশত ব্যাক্তিকে আসামী করার পাশাপাশি তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙ্চুর করার কারনে শৈলকুপার অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়েছে। একদিকে আসামীরা তাদের জামিন, কোর্ট হাজিরাসহ এই সংক্রান্ত যাতায়াত খরচসহ নানাবিধ খরচ এর পাশাপাশি বাড়ি-ঘর ভাঙ্গার কারনে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
তথ্য নিয়ে জানা যায় এখন পর্যন্ত সারুটিয়া, উমেদপুর,মনোহারপু , নিত্যানন্দপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সামাজিক ও রাজনৈতিক কোন্দল থেকে খুনের ঘটনার অন্তত ৫ হাজার মানুষ আসামী হয়েছে। সেখানে একটি খুনের ঘটনায় ৫/৭ ব্যাক্তি জড়িত থাকলেও মামলায় আসামী করা হয়েছে শতশত ব্যাক্তিকে। একই সাথে মামলার কারনে ঘরছাড়া হওয়ার সু যোগে বাদী পক্ষ আসামী পক্ষের বাড়ি-ঘর ভাঙ্চুর ও লুটপাট এর ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। এমনিভাবে গত এক দশকে নুন্যতম ৫ সহশ্রাধিক নিরাপরাধ ব্যাক্তি খুনসহ বিভিন্ন মামলায় আসামী হয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক কারনে সেখানে সেখানে যত খুশি তত নিরাপরাধ ব্যাক্তিকে আসামী করে ঘর-বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে । বছর থেকে বছর ওই সকল পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে অনত্র বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশ ও মানবিক হৃদয়ের মানুষের সহায়তায় কিছু ব্যাক্তি নতুন করে ঘর-বাড়ি তৈরী করে তাদের শুন্য ভিটায় ফিরে আসলেও আবারো অন্য এলাকার জনপদে নতুন করে বাড়িছাড়া ও গণ আসামী হওয়ার আতংক ভর করেছে শৈলকুপার ভুক্তভোগী মানুষের মাঝে।
এ বিষয়ে জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আ্যাডভোকেট মোঃ আজাদ রহমান বলেন, উমেদপুর ইউনিয়নের কৃৃৃৃৃঞপুর গ্রামের গত ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সাইদুল হত্যা ঘটনার মামলায় ১০৪ জন আসামী হয়। এর আগে ২০১১ সালে ইউনিয়নের আড়–য়াকান্দি গ্রামে টুলু হত্যা ঘটনায় ৩৩ জন আসামী হয় । উভয় ঘটনায বাড়ী-ঘর ভাঙ্গচুর হয় দেড় শতাধিক। যেখানে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হন ভুক্তভোগীরা। আসামী হন বৃদ্ধ, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ৃয়া ছাত্রসহ নিরাপরাধ মানুষ।
শৈলকুপা উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সারুটিয়া ইউনিয়নের আ’লীগের সাবেক সহসভাপতি জুলফিকার আলী কায়সার টিপু বলেন গত তিন বছরে সারুটিয়া ইউনিয়নে আটটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ওই সকল ঘটনায় করা মামলায় ৬ শতাধিক ব্যাক্তিকে আসামী করা হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ ব্যাক্তি নিরাপরাধ। এ ছাড়া এই ঘটনার পর ৫ শতাধিক বাড়ি-ঘর ভাংচুর হয়। বাড়িছাড়া হয় শত শত পরিবার । এই সকল ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার গুলো অন্তত ৫০ কোটি টাকা ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন হস্তক্ষেপে ও জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম দুলালের সহযোগিতায় শতাধিক পরিবার বাড়ি ফিরে এসে ঘরবাড়ি করার সুযোগ পেয়েছে। এখনো অনেক পরিবার ঘর-বাড়ি ছাড়া রয়েছেন। তিনি বলেন এমনি ভাবে শৈলকুপা উপজেলা গত এক দশকে ৫ সহশ্যধিক ব্যাক্তি হামলা-মামলার শিকার হয়েছে হাজার হাজার বাড়ি-ঘর ভা্চংুর হয়েছে।
শৈলকুপা পৌরসভার একাধিকবার নির্বাচিত মেয়র ও পৌর আ’লীগ এর সভাপতি আশরাফুল আজম বলেন গত দশ বছরে শৈলকুপায় যে খুনের ঘটনাগুলো ঘটেছে সেখানে অধিকাংশ ঘটনায় প্রকৃত আসামী বাদ দিয়ে হাজার হাজার নিরাপরাধ ব্যাক্তিদের আসামী করা হয়েছে। এই আসামী করার পিছনে রয়েছে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অপকৌশল । তিনি আক্ষেপ করে বলেন গত ১০ বছরে শৈলকুপাতে অনেকগুলো খুনের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু ঝিনাইদহ -১ আসনে সংসদ সদস্য তখন কোন বিবৃতি বা সংবাদ সম্মেলন করেন নাই। কিন্তু গত রোববার রাতে আবাইপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মিনগ্রামের হাবিবুর রহমান রিপন নিহত ঘটনায় তিনি সংবাদ সম্মেলনসহ বিবৃতি দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন একজন জন প্রতিনিধি ও সংসদ সদস্য হিসাবে তাকে সকলের জন্য সচ্চার থাকা উচিৎ।
শৈলকুপা থানার ওসি ঠাকুর দাস মন্ডল জানান, এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। গন আসামী করে নিরাপরাধ ব্যাক্তিদের হত্যা মামলায় আসামী করা বিষয়ে তিনি বলেন মামলায় গ্রহন করার ক্ষেত্রে পুলিশ সতর্ক থাকবে যেন কোন নিরাপরাধ ব্যাক্তি আসামী হয়ে হয়রানির শিকার না হন।
উল্লেখ্য গত রোববার দিবাগত রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীর হামলা চালিয়ে হাবিবুর রহমান রিপন (৪৪) নামের এক ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের আবাইপুর বাজারের ওয়াপদা মোড়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর সোমবার ভোরে নিহত ইউপি সদস্যর সর্মথকরা অন্তত ১৫ টি বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে।
নিহত হাবিবুর রহমান রিপন আবাইপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও একই সাথে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন।