রেলের ভূমির গাছ বিক্রি : উপ-সহকারি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ১১:০৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০২৩

রেলের ভূমির গাছ বিক্রি : উপ-সহকারি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা

ডায়ালসিলেট ডেস্ক :  বড়লেখায় রেলওয়ের ভূমির সরকারি গাছ অবৈধভাবে বিক্রি করে দিয়েছেন কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাকির হোসেন খান। ৯৫টি গাছের মূল্যবাবত তার (জাকির) ব্যাংক একাউন্ট ও নগদে ৬ লাখ টাকা জমা দিয়ে গাছ কাটতে গিয়ে গ্রেফতার হন গাছ ক্রেতা কামাল উদ্দিন। জেল থেকে বেরিয়ে টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তিনি রেলওয়ে কর্মকর্তা জাকির হোসেন খানের বিরুদ্ধে বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন।মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র এসআই জামাল উদ্দিন আদালতের নির্দেশে সরেজমিনে মামলার অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ প্রকল্পের পরিচালক তানভিরুল ইসলামের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বড়লেখা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস গত ১০ এপ্রিল প্রকল্পভুক্ত রেলওয়ের ভূমির ২৪৮টি সেগুন, কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মেজারম্যান্ট করেন। কিন্তু এর আগে থেকেই প্রকল্পের উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাকির হোসেন খান নিয়ম বহির্ভুতভাবে গাছ বিক্রির তৎপরতা চালান। গাছ বিক্রির জন্য তিনি স্থানীয় বিভিন্ন কাঠ ব্যবসায়ির সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি নাহিদা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী কামাল উদ্দিনের সাথে ২৪৮টি গাছ বিক্রির চুক্তি করেন। গত ১১ জুন ৯৫টি গাছ কর্তনের অনুমতিপত্র দেখিয়ে জাকির হোসেন খান বিভিন্ন দাগে কামাল উদ্দিনের নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে তাকে গাছ কাটার অনুমতি দেন। প্রকল্পের দক্ষিণভাগ রতুলি বাজার সংলগ্ন এলাকায় গত ১ আগস্ট গাছ কাটার সময় টেক্সমাকো রেল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সেফটি অফিসার পিযুস দেবনাথের গাছ চুরির মামলায় পুলিশ কামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। গত ১ সেপ্টেম্বর তিনি জেল থেকে বেরিয়ে টাকা ফেরত চাইলে রেলওয়ে কর্মকর্তা সব লেনদেন অস্বীকার করায় তিনি তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।

কামাল উদ্দিন জানান, ‘রেলওয়ে কর্মকর্তা জাকির হোসেন খান ২৪৮টির মধ্যে ৯৫টি গাছ কর্তনের লিখিত অনুমতিপত্র দিয়ে টাকা জমা দিতে বলেন। তিনি তার (জাকির হোসেন খান) পুবালী ব্যাংক লিমিটেড ঢাকা দক্ষিণখান শাখার হিসাবে জমা দিতে বলায় কয়েক দাগে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দেন। নগদ ও ব্যাংক একাউন্টসহ সর্বমোট ৬ লাখ টাকা গ্রহণের পর তিনি গাছ কাটার অনুমতিপত্র দেন। ১ আগস্ট গাছ কাটতে গেলে প্রকল্পের অন্য এক কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে থানায় গাছ চুরির মামলা করেন। পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। তখন বুঝতে পারি রেলওয়ে কর্মকর্তা জাকির আমার সাথে প্রতারণা করেছে। জেল থেকে বেরিয়ে টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’

টেক্সমাকো রেল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি. এর সেফটি অফিসার পিযুস দেবনাথ জানান, তার কোম্পানী কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইনের নির্মাণ কাজ করছে। লাইন নির্মাণ শেষে দুইপাশের গাছপালা বাংলাদেশ রেলওয়েকে বুঝিয়ে দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। এরই মাঝে কামাল উদ্দিন নামক ব্যক্তি ৭-৮ জন শ্রমিক নিয়ে গাছ কাটার খবর পান। রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা অবহিত নন জানালে তিনি তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।

এ ব্যাপারে জানতে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাকির হোসেন খানের সাথে বৃহস্পতিবার দুপুরে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরই ফোন কেটে দেন।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র এসআই জামাল উদ্দিন জানান, প্রাথমিক তদন্তে তিনি গত ২৩ অক্টোবর সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কয়েকজন স্বাক্ষীর সাথেও কথা বলেছেন। যেহেতু ব্যাংক একাউন্ট, বিকাশ ও নগদে টাকা লেনদেন হয়েছে তাই তদন্ত সম্পন্ন করতে সময় লাগবে।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ