প্রকাশিত: ১০:২২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২৩
স্পোর্টস ডেস্ক :: ভারত-শ্রীলঙ্কার লড়াই দেখে যেকোনো ক্রিকেটভক্তের মাথায় দুটো বিষয় আসতে পারে! হয় এটি কোনো ম্যাচের হাইলাইটস কিংবা বিশ্বকাপ নয়– টিভি পর্দায় চলছে এশিয়া কাপের ফাইনাল! ঠিক তাই, কিছুদিন আগে ঘরের মাঠে হওয়া ফাইনালে মাত্র ৫০ রানে অলআউটের লজ্জায় ডুবে লঙ্কানরা। এবার বিশ্বকাপ মঞ্চেও তারা একই গণ্ডিতেই আটকে গেছে। একেবারে অবিশ্বাস্য! ভারতের দেওয়া ৩৫৭ রানের জবাবে মাত্র ৫৫ রানেই গুঁড়িয়ে গেছে লঙ্কানদের ইনিংস। যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় বড় হার (৩০২ রান)।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার প্রথম ইনিংসে ঝড় তুলেছিলেন বিরাট কোহলি ও শুভমান গিলরা। যদিও দুজনেই আউট হয়েছেন সেঞ্চুরি থেকে কয়েক কদম দূরত্বে। এরপর শেষদিকে শ্রেয়াস আইয়ারও ম্যাজিক ফিগারের আশা জাগিয়ে ফিরে যান। কিন্তু ততক্ষণে ভারত বড় সংগ্রহ পেয়ে যায়। বিপরীতে লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা ৫টি উইকেট শিকার করেন।
৩৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় লঙ্কানরা ক্রিজে দাঁড়াতেই পারেনি। তাদের ৫ ব্যাটারই আউট হন রানের খাতা খোলার আগে। দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেন মাত্র ৩ ব্যাটার। বিপরীতে উইকেট শিকারে প্রতিযোগিতা করেছেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি ও মোহাম্মদ সিরাজরা। তবে সেই দৌড়ে সেরা শামি। ভারতের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট পাওয়ার দিনে ডানহাতি পেসার মাত্র ১৮ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট। এছাড়া ১৬ রানে সিরাজ ৩ উইকেট এবং একটি করে শিকার করেন জসপ্রিত বুমরাহ ও রবীন্দ্র জাদেজা।
সর্বশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালের ভারতের কাছে শোচনীয় হারের ‘ট্রমা’ থেকে হয়তো এখনও বের হতে পারেননি কুশল মেন্ডিসরা। প্রায় একই কায়দায় আজও তারা উইকেটে এসে যেন অন্ধকার দেখেছেন! শুরুটা হয় বুমরাহ’র করা একেবারে প্রথম বল থেকে। তার করা কিছুটা আউট সুইং হওয়া বলটিতে ক্রস ব্যাট চালান লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। খালি চোখেই স্পষ্ট আউট দেখতে পাওয়া সত্ত্বেও অতি আত্মবিশ্বাসে রিভিউ নেন তিনি। কিন্তু তাতে আর তার ভাগ্য বদল হয়নি। ফিরতে হয় গোল্ডেন ডাক খেয়েই।
এরপর দ্বিতীয় ওভারেও সিরাজের প্রথম বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে আরেক ওপেনার দিমুথ করুণারত্নে। তিনিও খেয়েছেন গোল্ডেন ডাক। সিরাজের ওভারে মাত্র চার বলের ব্যবধানে ফিরেন সাদিরা সামারাবিক্রমাও। ৪ বলে রানের খাতা খোলার আগেই সিরাজের বলে স্লিপে থাকা আইয়ারকে ক্যাচ দেন। দলের এমন বিপর্যয়ে রান পেতে বেশ সংগ্রাম করছিলেন লঙ্কান দলপতি কুশল মেন্ডিস। ১০ বলে এই ডানহাতি ব্যাটার ১ রান করেন। এরপর সিরাজের সুইং হওয়া বলটি তার স্টাম্প উড়িয়ে দেয়।
লঙ্কান ইনিংসের বাকি গল্পটা শামির লেখা। বোলিং তোপে শেষ ৬ উইকেটের পাঁচটিই গেছে শামির দখলে। বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে ডাগআউটে কাটানো এই পেসার যেন সুদে-আসলে সব পরিশোধ করতে নেমেছেন। তিন ম্যাচের মধ্যেই তিনি দুবার ফাইফার (৫ উইকেট) পেয়েছেন। আরেক ম্যাচে তার শিকার ৪টি। সবমিলিয়ে তিন ম্যাচে ১৪ উইকেট শামির পকেটে। গতি ও সুইংয়ের মিশেলে তিনি ব্যাটারদের তটস্থ করে রাখার কৌশল আয়ত্ত করেছেন।
টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার মাঝে একমাত্র দুই অঙ্কের রানে পৌঁঁছা ব্যাটার অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ২৫ বলে তিন ১২ রান করেন। ২৯ রানে আট উইকেট হারিয়ে লঙ্কানরা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারের প্রহর গুনছিল। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেছেন টেল-এন্ডারে নামা মাহেশ থিকশানা ও কাসুন রাজিথা। দুজনের ব্যাটে যথাক্রমে আসে ১২ ও ১৪ রান। মাত্র ১৯.৪ ওভারেই ভারতের দেওয়া লক্ষ্যের চেয়ে ৩০২ রান দূরত্বে নোঙর ফেলে লঙ্কান জাহাজ!
এর আগে মুম্বাইয়ের ব্যাটিং উইকেটে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত লঙ্কানদের জন্য ফিরে আসে বুমেরাং হয়ে। পুরো ম্যাচে কখনোই খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি তারা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাজে ফিল্ডিং। শুরুতে গিল আর কোহলির পর শেষে ঝড় তুলেছেন রানখরায় থাকা শ্রেয়াস আইয়ার। তিনজনের হাফ সেঞ্চুরির সুবাদে ভারতের স্কোর ৩৫৭ রান। বল হাতে এদিন লঙ্কানদের হয়ে সফল ছিলেন দিলশান মাদুশঙ্কা। নিয়েছেন ৫ উইকেট।
ম্যাচের প্রথম ওভারে রোহিত শর্মার উইকেট যেন ঝড়ের আগে খানিক স্বস্তি দিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। এরপর থেকে শুধুই হতাশা। মাঝে বিরাট কোহলির ক্যাচ নেওয়ার সুযোগ ছিল। তবে সেটা নিতে পারেননি বোলার দুশমান্থ চামিরা। এরপর যেন একেবারেই চেপে বসেন ভারতের দুই ব্যাটার। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেন ১৮৯ রান।
দুজনেই ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। জোড়া সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন ওয়াংখেড়ের দর্শকরা। তবে সেই উৎসবের আমেজ পণ্ড করে দেন দিলশান মাদুশঙ্কা। নিজের দুই ওভারে গিল আর কোহলিকে ফেরান এই লঙ্কান পেসার। গিল আউট হয়েছেন লাফিয়ে ওঠা বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। আর কোহলি হয়েছেন বিভ্রান্ত। শর্ট পিচ ডেলিভারিতে স্ট্রেট ড্রাইভ খেলবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ভুগছিলেন। তাতেই ক্যাচ উঠে যায় পাথুম নিশাঙ্কার হাতে।
গিল আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ৯২ রানে। আর কোহলি আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ৮৮ রানে। তাদের আউটের আগে পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছিল, আরও একবার ৪০০ রানের স্কোর দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ। তবে এই দুই উইকেটের পর কিছুটা ছেদ পড়ে রান তোলায়। ক্রিজে এসে লোকেশ রাহুল আর শ্রেয়াশ আইয়ার কিছুটা সময় নিতে চেয়েছিলেন।
রাহুল ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৯ বলে ২১ রান করে দুশমান্থ চামিরার বলে দুশান হেমন্তর হাতে ক্যাচ দেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এরপরের পুরোটা সময় শুধুই শ্রেয়াশ আইয়ার। চলতি বিশ্বকাপে রানখরায় ভুগতে থাকা এই মিডলঅর্ডার ব্যাটার আজ খেলেছেন মনে রাখার মত এক ইনিংস। সূর্যকুমার ৯ বলে ১২ করে ফিরে গেলেও অবিচল ছিলেন আইয়ার।
৩ চার আর ৬ ছয় দিয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংস সাজিয়েছেন আইয়ার। যদিও শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি তাড়া করতে গিয়ে ৮২ রানেই থামে তার ইনিংস। পরে রবীন্দ্র জাদেজার ২৪ বলে ৩৫ রানের ক্যামিও ভারতের স্কোর নিয়ে গিয়েছে ৩৫৭ রান পর্যন্ত।
লঙ্কানদের হয়ে উইকেটের দেখা পেয়েছেন কেবল দুজন। দিলশান মাদুশঙ্কা নিয়েছেন ৫ উইকেট। তবে এজন্য খরচ করেছেন ৮০ রান। ক্রিকেটে এরচে বেশি রান খরচ করে ৫ উইকেট নিয়েছেন কেবল আদিল রাশিদ। আর অন্য উইকেট নিয়েছেন দুশমান্থ চামিরা।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech