ডায়াল সিলেট ডেস্ক ::  মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট সড়কের মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনূ নদ তীরবর্তী সাড়ে ৬ কিলোমিটার বাঁধ থেকে প্রায় ৩ হাজার ২শ ৫০টি বৃক্ষ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য হবে প্রায় ৩ কোটি আড়াই লাখ টাকা।
সরেজমিনে কনকপুর এলাকায় গেলে দেখা যায়, সড়কের পাশে জব্ধ করা ৩টি কাটা গাছের স্তুপ রয়েছে। এসময় স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার পৌর বাস টার্মিনাল সংলগ্নের শ্রীরাইনগর থেকে শুরু করে কাজিরবাজার পর্যন্ত বাঁধে মূলব্যান আকাসি, মেহগনী, রেইন্ট্রিসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ কর্তন করে দেদারছে বিক্রি করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ওই বাঁধ উচু ও চৌড়া করার ঘোষনার পরপরই নামে-বেনামে গাছ কাটার মহোৎসব চলে। এদিকে স্থানীয়রা আরো জানান, ওই বাঁধে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ৫শ বৃক্ষ রয়েছে। প্রতিটির দাম গড়ে ১০ হাজার টাকা ধরা হলে ৩ হাজার ২৫০টির দাম পড়ে ৩ কোটি আড়াই লাখ টাকা।গেল পুরো অক্টোবর মাসে বৃক্ষ কেটে নেয়ার পর প্রশাসন কয়েকটি গাছের টুকরো জব্ধ করেছে। দিন দুপুরে স্থানীয় প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি,বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট তদফতরের সামনে থেকে বৃক্ষ কেটে নেয়ায় স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসব বৃক্ষ কাটা ও বিক্রির সাথে কারা জড়িত জানতে চাইলে স্থানীয়রা প্রভাবশালীমহল উল্যেখ করে নাম বলতে অপারগতা প্রকশ করেন।
কনকপুর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, নদী পাড়ের ওই বাঁধে যাদের জমি আছে জমির কাগজ দেখে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য গাছ কেটে নিয়ে কিছু টাকা দিচ্ছে। আমি ছোট আকারের ৫টি বৃক্ষ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু টাকা এখনো পাইনি। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন বিভাগের দোহাই দিয়ে আমাদের বলা হয়েছে এসব গাছ কাটা হবে।
জেলা শহর ঘেষা উপজেলার মনু নদীর তীরবর্তী শ্রীরাইনগর, বালিখান্দি, দূর্লভপুর, কসবা, কনকপুর, থানাবাজার, সম্পাসী, আজমনী, কামালপুর ও ত্রৈলক্ষ্য বিজয় এলাকাসহ আরো বেশ ক’টি গ্রাম এলাকা থেকে এসব বৃক্ষ কাটা হয়েছে।
এদিকে, ওই সড়কের কনকপুর স্টেন্ড-এ গেলে আলাপচারিতা হয় স্থানীয় দোকানদার, গ্রামবাসী ও অটোরিক্সা চালকদের সাথে। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে তারা ক্ষোভ ঝেরে বলেন, দিন-দুপুরে গেল এক মাস যাবৎ কোটি কোটি টাকার বৃক্ষ কাটা হলো। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা তখন কোথায় ছিলেন? তারা কেন গাছ কাটা বন্ধ করেননি। ওই সময়ে কে কাকে মেরে খাবে এমন তাড়াহুড়ো লেগেছিল। এক ব্যক্তির বৃক্ষ আরেক ব্যক্তি দালালী করে বিক্রি করেছে। আমরা এসব প্রভাশালীদের বিরোদ্ধে কথা বললে অসুবিধা হবে। যারা বৃক্ষ কাটিয়েছে তারা খুব প্রভাবশালী। কেউ তাদের সাথে পারবে না। তারা জানান, গাছ কাটার সাথে কারা জড়িত প্রশাসন খুজে বের করুক। তারা ক্ষোভে বলেন, যখন গাছ কাটা শেষ তখন প্রশাসন এসে কাটা বন্ধ ও রং লাগিয়েছে। তারা আরো জানান, প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাঁধ এলাকা জুড়ে অল্প কিছু গাছ প্রকৃত মালিকেরা প্রমানাধি দেখিয়ে বিক্রি করেছে। অবশিষ্ট বৃক্ষ হরিলুট হয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ওই বাঁধের কিছু অংশ তাদের। কিছুদিনের মধ্যে বাঁধের শ্রীরাইনগর থেকে সাড়ে ৬ কিলোমিটার জায়গা উচু ও চৌড়া করা হবে। ওই কাজের জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বন বিভাগ রেঞ্জ কর্মকর্তা,ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও পাউবোর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে নিয়ে গেল ৫ অক্টোবর একটি কমিটি করেছেন। কমিটির কাজ ছিল ওই বাঁধের জমির মালিক,বৃক্ষের মালিককে খঁজে বের করে গাছে রং লাগিয়ে চিহ্নিত করা। তিনি বলেন, ওই বিষয়টি শুনে হয়তো স্থানীয়রা আগে-বাগে বৃক্ষ কেটেছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল,
বলেন, বাঁধের কিছু অংশ আমাদের। আরএস রেকর্ডে ওই জায়গায় কিছু কিছু বেরিবাঁধ বলা হয়েছে। বাকিটা আমরা ক্রয় করিনি। এর আগে জনগণের সাথে কথা বলেই আমরা এখানে বাঁধ নির্মাণ করেছি। তিনি বলেন, বন বিভাগের অনুমতি নিয়েই বৃক্ষ কাটতে হবে। এক মাস জুড়ে কয়েক হাজার বৃক্ষ কিভাবে কাটা হলো এমন প্ররশ্নর জবাবে ওই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বৃক্ষ কাটার বিষয়টি জানার পর স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতায় কাটা বন্ধ করা সহ কিছু গাছ জব্ধ করা হয়েছে।
বন বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা মজনু প্রামানিক বলেন, ওই বাঁধে বৃক্ষ কাটতে বন বিভাগের অনুমতি নেয়া হয়নি। যখন জেনেছি, আমরা বাধা দিয়েছি। তবে সরেজমিনে গিয়ে আমরা কাউকে পাইনি। বৃক্ষ কেটে শেষ করার পর গাছে রং লাগিয়ে নাম্বারিং কোন কারণে দেয়া হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই বাঁধে যেটুকু গাছ পেয়েছি নাম্বার দিয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে কনকপুর ইউনিয়ন পরিষদ’র চেয়ারম্যান রুবেল উদ্দিনকে শুক্রবার রাতে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন চৌধুরী বলেন, ওই বাঁধে বৃক্ষ কাটার বিষয়টি আমরা যখনই জেনেছি তখই কাটা বন্ধ করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্পটে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। কিছু গাছ জব্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন বেরিয়ে আসলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *