চাহিদার অর্ধেক মিলছে বিদ্যুৎ

 

ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: সিলেটে প্রতি ঘণ্টায় হচ্ছে লোডশেডিং। দিন-রাতে আট থেকে দশবার বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে মহানগরবাসীকে। লোডশেডিং হচ্ছে সেহরি ও ইফতারের সময়ে। সিলেটে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে।

 

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বুধবার (৪ এপ্রিল) সিলেটে ৪৫ শতাংশ লোডশেডিং রয়েছে। আর গতকাল মঙ্গলবার এই পরিমাণ ছিলো ৪০ শতাংশ।

 

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে আজ বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট। আর আজ সরবরাহ করা হয়েছে ৬৬ মেগাওয়াট। সে হিসেবে আজ সিলেটে ৪৫ শতাংশ লোডশেডিং রয়েছে। গতকাল সিলেটে চাহিদা ছিলো ১৪১ মেগাওয়াট আর সরবরাহ করা হয়েছে ৫৬ মেগাওয়াট। গতকাল লোডশেডিং এর পরিমাণ ছিলো ৪০ শতাংশ।

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. জারজিসুর রহমান রনি জানান, আজ বিকাল তিনটা পর্যন্ত সিলেটে ৪৫ শতাংশ লোডশেডিং রয়েছে। আমাদের চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে তাই এই লোডশেডিং। আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছি তা সকল বিতরণ বিভাগকে সমানভাবে ভাগ করে দিচ্ছি। আমাদের লাইন বা অন্য কোন সমস্যা নেই। ডলার, কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুতই এর সমাধান হবে।

লোডশেডিং যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’

 

এদিকে, নবীগঞ্জে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড গরম অনুভুত হচ্ছে। এই গরমে মানুষের স্বস্তির আশ্বাস যখন বিদ্যুৎ, তখনই গরমের সাথ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ২৪ ঘন্টার মধ্যে গড়ে ৩/৪ ঘন্টা সময়ও বিদ্যুতের দেখা মিলে না।

 

পৌর শহরে বিদ্যুৎ কিছুটা সময় থাকলেও শহরতলী ও গ্রামগঞ্জের অবস্থা চরম পর্যায়ের। রোজার মাসেও থেমে নেই এই লোডশেডিং। ইফতার, সেহরি ও তারাবির সময়ও হচ্ছে অতিমাত্রায় লোডশেডিং। যা নবীগঞ্জবাসীর জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেল মাসে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কম হলেও গত কয়েকদিন ধরে তা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে।

 

কর্তৃপক্ষ বলছে, জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন সংকটের কারণে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণও বেড়েছে। ঘন ঘন বিদ্যুত আসা যাওয়ার কারণে ফ্রিজ, টেলিভিশন, ফ্যানসহ বিভিন্ন মূল্যবান ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া অসহ্য গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকরা। রমজানে মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগী, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

 

তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে পরিপূর্ণ বিশ্রাম করতে না পারায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। অনেকেই তীব্র তাপদাহ এবং লোডশেডিংয়ের কারণে খোলা জায়গায় হাতপাখা দিয়ে নিজেকে বাতাস করছেন। আবার কেউ খালি গায়ে গামছা গলায় বিদ্যুতের অপেক্ষায়। গরম আর লোডশেডিংয়ের মাঝে একটু স্বস্তির খোঁজে মধ্যরাতেও ঘরের বাইরে দেখা যায় অনেককে।

 

গ্রাহকদের অভিযোগ, নবীগঞ্জে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২০ ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সব এলাকায় বিদ্যুৎ আসলে থাকে আধা ঘণ্টা, আর গেলে দুই ঘণ্টায়ও আসে না। বিদ্যুতের একটানা বেহাল দশায় গ্রাহকরা বলছেন বিদ্যুতের ভেলকিবাজি আমাদের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। বিবেকহীনভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা চলছে বিদ্যুৎের ডিগবাজি।

 

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গ্রাহকরা অকথ্য ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবার দাবি করে আসলেও ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলছে না গ্রাহকদের। ঝড়-বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ না থাকা স্বাভাবিক ঘটনা হলেও, আকাশে মেঘ উঠতেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাংস্কৃতি চালু রয়েছে নবীগঞ্জে। সবমিলিয়ে নবীগঞ্জের বিদ্যুৎ নিয়ে চরম ধোয়াশায় রয়েছেন গ্রাহকরা।

 

এ বিষয়ে পল্লি বিদ্যুৎ নবীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. ফায়জুল্লাহ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- উৎপাদন সংকটের কারনেই লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ২৫ মেঘাওয়াট কিন্তু আমাদেরকে অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০-৩০% এর বেশী সরবরাহ করা হচ্ছে না। যার কারণে লোডশেডিংয়ের পরিমাণটা বেশি হচ্ছে।

 

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *