বাংলাদেশের প্রতি ভারত সরকারের নীতি সম্পূর্ণ ব্যর্থ : আমীর খসরু

প্রকাশিত: ৬:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২৪

বাংলাদেশের প্রতি ভারত সরকারের নীতি সম্পূর্ণ ব্যর্থ : আমীর খসরু

ডায়ালসিলেট ডেস্ক :বাংলাদেশের প্রতি ভারত সরকারের নীতি ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সপ্তাহে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু-তে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেছেন তিনি। ভারতকে তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করার আহ্বান জানিয়েছেন। খসরু অভিযোগ করে বলেছেন, গত এক দশকের তিনটি নির্বাচনই ছিল ‘জালিয়াতিপূর্ণ’, যাতে ভারত সরাসরি সমর্থক ছিল। এছাড়া বাংলাদেশের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের বেশ কিছু দিক তুলে ধরে তার সমালোচনাও করেছেন আমীর খসরু। বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক বিভাগের প্রধান আমীর খসরু দ্য হিন্দু-তে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ কিছু আখ্যান তৈরি করা হয়েছে। যেমন- হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ মৌলবাদীদের কাছে চলে যাবে অথবা হাসিনা না থাকলে ভারতের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। ভারতকে এসব অবাস্তব মনমানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সাউথ ব্লকের জেগে ওঠা সম্পর্কে ভারতের এখনই সতর্ক হওয়া উচিৎ। কেননা এমন প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে বছরের পর বছর কেটে যাবে।

খসরু আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের শেষ দিনগুলোতে বাংলাদেশ যে রক্তপাত দেখেছে তা এড়ানো যেত যদি এ বছরের জানুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া হতো। ভারত যেভাবে তড়িৎ গতিতে হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছে তাতে হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।খসরু ওই নির্বাচনকে ‘সম্পূর্ণ জালিয়াতির’ নির্বাচন বলে চিন্থিত করেছেন।

২০০৯ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার কাছে পরাজিত বিএনপি গত এক দশক ধরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এসেছে। এই দাবি একাধিকবার বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। ২০১৪ সালে হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচন হওয়ায় তা বয়কট করেছিল বিএনপি। তারা সেসময় থেকেই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। ২০১৮ এবং ২০২৪ সালেও দলটি একই দাবিতে মাঠে নেমেছিল।
আমীর খসরু অভিযোগ করেন যে, ২০১৪ সালের রাজনৈতিক অচলাবস্থা মোকাবেলা করার জন্য ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আসেন। তখন তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেছিলেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির নেতা প্রয়াত হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে লবিং করে এবং তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যে পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিলেন। সবাই জানত যে ওই নির্বাচনে কারচুপি করা হবে। এমন পরিস্থিতিতে এ বিষয়টিকে আমরা আর কী বলতে পারি? এরশাদ প্রথমে নির্বাচন করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। পরে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সুজাতা। বাংলাদেশের মানুষ এটা পছন্দ করেনি বলে মনে করেন খসরু।

ভারত ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্রমাগতভাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছে এবং প্রকৃতপক্ষে তিনটি নির্বাচনের জন্যই সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সমালোচনা করতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন খসরু। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে তিনটি নির্বাচনের বিষয়ে তার খোলামেলা মন্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য এখন এক কঠিন বাস্তবতা। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য যে বলয় তৈরি করেছিল সেটাকেই দায়ি করেছেন খসরু। তিনি বলেছেন, একদল শক্তিশালী বেসামরিক কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, সাংবাদিক সহ অনেকেই এই বলয়ে থেকে ফায়দা লুটেছেন। তবে তারা বাংলাদেশের মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। খসরু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করায় তার প্রশংসা করেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেন যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর, তিনি শুনছেন যে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় নীতি সম্পর্কে কিছু চিন্তার উদয় হয়েছে। খসরু বলেছন, আমি ভারতে গিয়েছে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা হাসিনাকে নিয়ে কীভাবে একা চলতে পারে সে নীতিতেই ছিল। কিন্তু সর্বশেষ বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর খসরু বেশ কিছু পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারতীয় নাগরিক সমাজ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যুক্তিসঙ্গত অবস্থানে আছেন বলে মনে করেন তিনি।

0Shares