প্রকাশিত: ১০:২০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দুর্নীতির কারখানা। দুর্নীতিবাজরা ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ সবাই। ফলে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল ব্রাদার ইসরাইল আলী সাদেকের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট । গত একতরফা সংসদ নির্বাচনে নার্সেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাদেক ভোটকেন্দ্রে নার্সদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে ফটোসেশনে রেখেছিলেন। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোরন তৈরী করে। এরপর থেকে সাদেকের ওপর নজর পড়ে গোয়েন্দাদের। হাতেনাতে দুর্নীতির টাকা সহ দু’সহযোগী হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাদেক আড়ালে চলে গিয়েছিল। অবশ্য পরে সে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আটক হয়। কয়েক মাস ধরে কারাগারে তিনি। তবে; এখনো ওসমানীতে তার চক্র সক্রিয়।ইসলাম উদ্দিন নামের এক ভুক্তভোগী গত এপ্রিল মাসে এই চক্রের ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদক আইনে সিলেটের বিশেষ আদালতে মামলা করেছিলেন। মামলাটি আদালত থেকে দুদকে পাঠানো হয়েছিল তদন্তের জন্য। এদিকে- ওই মামলার আলোকে গতকাল সিলেটের স্পেশাল আদালতের বিচারক হাবিবুর রহমানের আদালতের দুদকের পক্ষ থেকে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। ইসলাম উদ্দিনের দায়ের করা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমতিক্রমে মামলাটি দায়ের করেন সিলেটের উপ-সহকারী পরিচালক নিঝুম রায় প্রান্ত। আইনজীবী কানন আলম জানিয়েছেন- দুদক ইসলাম উদ্দিনের এজাহারের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তারা নিজেদের মামলা হিসেবে সেটিকে এজাহার হিসেবে গণ্য করেছেন। গতকাল এ সংক্রান্ত একটি মামলা আদালতে করা হয়েছে। দুদক এখন থেকে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার,মালামাল ক্রোক সহ সবকিছু করতে পারবেন। তিনি জানান- ইসলাম উদ্দিনের দায়ের করা অভিযোগটি এখন থেকে দুদকের মামলা হিসেবে গণ্য করা হবে। এটি দুদকের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী চলবে। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- হাসপাতালে স্টাফ নার্স কারাবন্দি ইসরাইল আলী সাদেক, স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম, স্টাফ নার্স সুমন চন্দ্র দেব, পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী, ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবীব, হাসপাতালের কর্মচারী আব্দুল জব্বার ও আব্দুল হাকিম সুমন। মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে- দীর্ঘ ৭ বছর ইসলাম উদ্দিন হাসপাতালের কোম্পানি যমুনা, সানমুন ক্লিনিং অ্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস এবং আউট সোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে পরিছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই চক্রের সদস্যেরা দুর্নীতি করে অবৈধভাবে শ’ শ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। প্রধান অভিযুক্ত ইসরাইল আলী সাদেক, অপর আসামি রওশন হাবিব ও আব্দুল জব্বারের কাছে হাসপাতালের শত শত কর্মচারী জিম্মি। অভিযুক্তরা অনিয়ম, দুর্নীতি, হাসপাতালে ঘুষ বাণিজ্য, সরকারি ওষুধ চুরি, দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অনিয়ম-দুর্নীতির মতো, অপরাধ করে এবং বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বখরা আদায় করে। এমনকি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের ওয়ার্ড, কেবিন, বেড, বারান্দা বেড ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা করার কথা বলে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা, এ ছাড়াও ভর্তি রোগীদের অপারেশনের সিরিয়াল পাইয়ে দেয়া ও দ্রুত অপারেশন করিয়ে দিবে বলে টাকা নিত। দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে হাসপাতালের কয়েকজনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এজাহারে আরও উল্লেখ রয়েছে- অভিযুক্তরা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা, দুর্নীতি, টাকা আত্মসাৎ, চুরি, বাটপারি, টেন্ডার বাণিজ্য, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ প্রদান না করে, ঐওষুধ চুরি করে দালাল দিয়ে বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রি করে। ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে তারা। তাদের অন্যায় আচরণে, অপরাধে, দুর্নীতিতে, প্রতারণায় জনগণের কাছে সরকারি এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সুনাম দিন দিন ক্ষুণ্ন্ন হচ্ছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
গত ৯ই জানুয়ারি ওসমানী হাসপাতালে গোয়েন্দা অভিযান চালিয়ে ঘুষের টাকা লেনদেনের সময় স্টাফ নার্স আমিনুল ও সুমনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় হাসপাতালের দুর্নীতির হোতা সাদেককে প্রধান আসামি এবং গ্রেপ্তার হওয়া আমিনুল ও সুমনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ। এ মামলায় সাদেক প্রথমে পলাতক থাকলেও পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিম্ন্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পূর্বের এজাহারের বাদী ইসলাম উদ্দিন জানিয়েছেন- সাদেক ও ওই চক্রের সদস্যদের কাছে জিম্মি হাসপাতাল। তারা আগের মতোই হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে। মামলা দায়ের করার কারণে তাকে ক্রমাগত হুমকি দেয়া হচ্ছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় পেলে তার উপর হামলা করা হবে বলে আসামি জব্বার, রওশন সহ কয়েকজন হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন। এছাড়া হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও ওয়ার্ডমাস্টার রওশন হাবিবের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগের তদন্ত করেছিলেন হাসপাতালের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। ওই রিপোর্টে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও রহস্যজনক কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। হাসপাতালে বলাবলি হচ্ছে; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে ওই রিপোর্ট তামাদি করে রাখা হয়েছে।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech