প্রকাশিত: ৪:০৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
ডায়ালসিলেট ডেস্ক:আয়নাঘর, গুম-খুনের অভিযোগে ক্ষমা চেয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান।রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক মতবিনিময় সভায় বৃহস্পতিবার দুঃখপ্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। র্যাব দ্বারা যারা নির্যাতিত, অত্যাচারিত হয়েছেন এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ যারা র্যাবের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চান তিনি।এর আগে জুলাই আন্দোলনে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে পুলিশের তরফ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়েছিল। সেই আন্দোলন চলার সময় র্যাবের হেলিকপ্টার থেকেও গুলি করার অভিযোগ উঠেছিল।এবার র্যাবের পক্ষ থেকে এমন সময়ে ক্ষমা চাওয়া হলো যখন ক্রমাগত বাহিনীটির বিলুপ্তির দাবি উঠছে। র্যাব প্রধানের এই ক্ষমা প্রার্থনা কি বাহিনীকে বিতর্ক থেকে মুক্তি দিতে পারবে?
কুইনাইন জ্বর সারাবে, কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে? ম্যালেরিয়া জ্বরের ওষুধের ভয়ানক তেতো স্বাদ নিয়ে কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর এই বাক্য র্যাবের ক্ষেত্রে অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণই বলছেন অনেকে।
র্যাবকে অতীতে অনেক বিশ্লেষক ও বিরোধী নেতারা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের গল্পের সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন। মৃতদেহে প্রাণ এনে অতিমানব সৃষ্টি করে তার দানবে রূপান্তর হওয়ার গল্প ছিল ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের।
এগুলোর সঙ্গে মিল খোঁজা হচ্ছে। কারণ, যখন পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিল না, এমন এক পরিস্থিতিতে ২০০৪ সালে বিকল্প একটি বাহিনী হিসাবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র্যাব কার্যক্রম শুরু করেছিল।
তবে পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনসহ নানা রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালে বাহিনীটির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিএনপি শাসনামলে গঠন হওয়া সেই বাহিনীর বিলুপ্তির কথা বলছে এখন খোদ বিএনপিই।
বিএনপির গঠিত পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিটির প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, দেশে তো র্যাব মানেই একটা দানব সৃষ্টি করেছে তারা। তারা যত ধরনের খুন-গুম, যত এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারবহির্ভূত হত্যা), অধিকাংশই এই র্যাবের মাধ্যমে হয়েছে। সেজন্য র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছেন বলে জানান তিনি।
তবে বিএনপির এই দাবি নিয়ে র্যাবের মহাপরিচালকের কাছেও সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল। তিনি বলেছেন, দেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণে র্যাবের ব্যাপারে রাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো।
গুম, খুন, অপহরণ এসব অভিযোগ বিবেচনায় ক্ষমা চেয়ে সেসব ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচার প্রত্যাশা করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের গুম-খুন কমিশন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ ধরনের অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার কাজের মধ্য দিয়েই র্যাবের দায়মুক্তি সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
যেভাবে বিতর্কিত হয়ে উঠল র্যাব
বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঠেকাতে ২০০২ সালের অক্টোবরে মধ্যরাতে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে সারা দেশে একযোগে অভিযান শুরু করেছিল সেনাবাহিনী।
আলোচিত সমালোচিত সে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ সমাপ্তির পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা থেকে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু হয় চৌকস বাহিনী র্যাবের।
অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ কার্যক্রম কমে আসা এবং ক্রসফায়ারের নামে সন্ত্রাসীদের দমন প্রথমদিকে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে সেই ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ নিয়েই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্যানুসারে, বিএনপি শাসনামলে ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে র্যাবের ক্রসফায়ারে প্রায় ৩৮০ জন নিহত হয়। র্যাবের কোনও কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুস, চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অভিযোগ ২০০৫ সালেই তোলা হয়েছিল মার্কিন তারবার্তায়।
বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক হলেও মূলত দুটি ঘটনা র্যাবকে বড় বিতর্কের মুখে ফেলে দেয়। একটি ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততা। অন্যটি ২০১৮ সালে টেকনাফের একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্রসফায়ারের অডিও ফাঁস।
এছাড়াও অর্থের বিনিময়ে ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের তুলে নেওয়া, ঘুস, চাঁদাবাজি এমন বিভিন্ন অপরাধমূলক অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসতেই থাকে।
তবে বড় একটা ধাক্কা আসে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যখন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার পর থেকে র্যাবের ক্রসফায়ার অনেকটাই কমে যায়।
তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় যারা কাজ করছে, তাদের ওপর এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে যে র্যাব এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সালে থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০০টির মতো বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৬০০ জনেও বেশি মানুষের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী।
অন্যদিকে সরকারের গুম সংক্রান্ত যে কমিশন গঠন হয়েছে তাদের একটি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৪ সালের ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত ১৬০০র বেশি অভিযোগ পেয়েছেন তারা। এর মাঝে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে সর্বোচ্চ ১৭২টি অভিযোগ পাওয়া গেছে র্যাবের বিরুদ্ধে।
গুম সংক্রান্ত অভিযোগ জবাবদিহির কাজও শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন কমিশনের সভাপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার র্যাবের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে গুমের অভিযোগ এবং আয়নাঘরের বিষয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগগুলোর সত্য উদঘাটনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech